শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১০

রহস্যঘেরা হার্ট অ্যাটাক

হৃদপিণ্ড কীভাবে সুস্থ রাখা যায় সে সম্পর্কে সচেতনতা এখন অনেক বেড়েছে। কিন্তু হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে আমাদের আরও জানা দরকার। হার্ট অ্যাটাকের রহস্য নিয়ে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করব।

হৃদরোগ হলেও অনেকেই বোঝেন না

শুনতে অবাক লাগলেও হৃদরোগে আক্রান্ত প্রতি দশজনের মধ্যে চার থেকে ছয়জন বুঝতে পারেন না যে তাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তাদের বুকে ব্যথা, দম আটকে আসে, শরীর ঘামে তারপরেও তারা সন্দেহ করেন না। অনেকেই জানেন বুকের বাম দিকে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা হয় এবং তা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এমন আদর্শ প্রকৃতির হার্ট অ্যাটাক কমই দেখা যায়। অনেকেই হার্ট অ্যাটাকে ভুগছেন কিন্তু বলেন, কিংবা মনে করেন তাদের বুকে জ্বালাপোড়া হয়েছে কিংবা তারা অতিরিক্ত দুর্বলতায় ভুগছেন। মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের প্রকৃতি আরও বিচিত্র। হার্ট অ্যাটাক হলেও অনেক মহিলা বুকে ব্যথার কথা বলেন না। বরং তারা পেটে ব্যথা, পিঠ ব্যথা, চোয়াল কিংবা ঘাড়ে ব্যথার অভিযোগ করেন। অতএব প্রশ্নটা যদি হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত হয় তা হলে লক্ষণ-উপসর্গ যত বিচিত্রই মনে হোক না কেন, হৃদরোগের সম্ভাবনার কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাবার হৃৎপিণ্ডের জন্য নিরাপদ

বর্তমান সময়ে খলনায়ক এ ট্রান্সফ্যাট। অনেক খাবারের বোতল কিংবা মোড়কের গায়ে লেখা দেখা যায় ‘এটা ট্রান্সফ্যাট মুক্ত।’ বড় বড় হোটেল রেস্তোরাঁতে সাইনবোর্ড ঝোলানো থাকে ‘আমরা রান্নার জন্য ট্রান্সফ্যাট মুক্ত তেল ব্যবহার করি।’ ট্রান্সফ্যাট আসলেই হৃদবান্ধব নয়। কিন্তু ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন। কাজেই যে কোনও তেল, চর্বিজাতযুক্ত খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। খাবার ট্রান্সফ্যাট মুক্ত হলেই যে ভালো তাও কিন্তু নয়। এর ভেতরে সম্পৃক্ত চর্বি থাকতে পারে। সম্পৃক্ত চর্বি হৃৎপিণ্ডের চির শত্র“ কাজেই আপনি মোড়কজাত যে খাবার কিনেছেন তার গায়ে ট্রান্সফ্যাট এবং তেল চর্বির পরিমাণ সম্পর্কে পুরো বৃত্তান্ত পড়ে নেয়া ভালো। অবশ্য আমাদের দেশে কয়টা খাবারের মোড়কেই বা এমন তথ্য দেয়া থাকে?

হৃদরোগ নাকি দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ

হৃদরোগের অনেক লক্ষণ-উপসর্গ দুশ্চিন্তা-উদ্বেগের ছদ্মবেশে আসে। আপনি কাজ করেছেন; হঠাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। আপনার হয়তো মনে হতে পারে এটা উদ্বেগ কিংবা দুশ্চিন্তার কারণে হচ্ছে। মনে রাখতে হবে অনেক সময় এটা হৃদরোগের জন্যও হতে পারে। অনেকের মধ্যে হৃদস্পন্দনে ছন্দ ব্যাহত হতে দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এটা গুরুতর এবং ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।

আজকের প্রতিযোগিতামূলক ব্যস্ত জগতে উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা যেন আমাদের প্রাত্যহিক সঙ্গী! তারপরেও কথা রয়ে যায়। আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি যদি সব সময় বেশি কিংবা ছন্দহীন থাকে; তাকে হালকাভাবে নেয়া যাবে না। এটা যদি উদ্বেগ কিংবা দুশ্চিন্তার জন্যও হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তা কিন্তু হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকারক। অতএব উদ্বেগ লাঘব করতে হবে; দুশ্চিন্তানাশক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ হৃদস্পন্দন দীর্ঘদিন ধরে থাকলে অবশ্যই তা হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেবে। উদ্বেগ কমানোর জন্য যোগ ব্যায়াম, ধ্যান কিংবা শিথিলায়ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।

বয়স বেশি না হলে কি হৃদপিণ্ড নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই
অনেকের কুড়ি বছর বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। বয়স বাড়লে, হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এটা অবশ্যই সত্য। কিন্তু অনেকের কৈশোরেও হৃদরোগ হয়। আজকাল ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সে হৃদরোগ হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলছে। তাই হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো শৈশব থেকেই গড়ে তোলা উচিত। অন্যথায় কু-অভ্যাসগুলো বয়সকালেও রয়ে যায়। শিশুদের হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি তাদের খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিতে হবে; টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সামনে যত কম সময় থাকা যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু আমাদের শিশুরা কি তা করছে?
স্বাস্থ্য ভালো থাকলে কি

হৃদরোগের ভয় নেই

বংশগতির প্রভাব অস্বীকার করা কঠিন। পিতা-মাতার হৃদরোগ ছিল বিধায় আপনারও  হৃদরোগ হবে, এটা সবসময় সত্য নয়। তবে সম্ভাবনার কথা স্বীকার করতে হবে। আপনার স্বাস্থ্য সুঠাম এবং ওজন সঠিক মাত্রায় আছে, তার মানে এটা নয় আপনার হৃদরোগ হবে না। বংশগতি, হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত কলেস্টেরল কিংবা উচ্চরক্তচাপ নীরবে আপনার হৃদপিণ্ডকে ঘায়েল করতে পারে। এছাড়া বয়সের কথা মনে রাখতে হবে। পুরুষরা হৃদরোগের সমূহঝুঁকির মধ্য থাকে। অবশ্য রজঃনিবৃত্তির পর মেয়েদেরও পুরুষদের মতোই হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মোদ্দাকথা হচ্ছে বিনা মেঘে বজ্রপাত হওয়াটা যেমন সত্য; কোন ঝুঁকি উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাক হয়। অতএব সচেতন থাকুন, সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন