শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১১

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগ ও রোগীর খাদ্য

পেটে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের রোগ হতে দেখা দেয়। পেটব্যথা, পেটফাঁপা, বদহজম, ডায়রিয়া এদের মধ্যে অন্যতম। পেটব্যথা খুব সাধারণ একটি রোগ। এ ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আলসার বা আন্ত্রিক ক্ষত এর প্রধান কারণ।
আমরা যেসব খাদ্য গ্রহণ করি তা প্রধানত পাকস্থলিতে গিয়ে হজম হয়। এ পাকস্থলির প্রাচীরে ব্যথা বা ক্ষয় বা ক্ষত হলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে আলসার বলে। অনেক সময় ধরে খাবার না খেলে বা লম্বা সময় ধরে পাকস্থলি খালি থাকলে, পাকস্থলিতে এসিডের ক্ষরণ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত পেপসিন এনজাইম ও এসিড একত্রে মিলে পাকস্থলির গায়ে ঘা বা ক্ষত তৈরি করে। এতে পাকস্থলির
গায়ের ঝিল্লির স্তর ক্ষত-বিক্ষত হতে শুরু করে।
পেপটিক বা ডিওডেনাল আলসার নানা কারণে হয়ে থাকে। খাবার জোর করে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে, অতিরিক্ত উত্তেজনা বা মানসিক চাপের কারণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিন এনজাইম বেশি নিঃসৃত হতে থাকে। ফলে সেইসময় পাকস্থলি খালি থাকলে বা খাদ্যের অনুপস্থিতিতে পাকস্থলিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া বেশকিছু ওষুধ আছে যেগুলো দ্বারা আলসার হতে পারে। বাতের ওষুধ, এসপিরিন গ্রহণে আলসার হয়। এছাড়া বংশগতির ধারা, অ্যানিমিয়া, অপুষ্টি, ক্ষুধামন্দা, উত্তেজনা এগুলোও আলসার সৃষ্টির কারণ।
চা, কফি, সিগারেট, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার, তৈলাক্ত খাবারে আলসার হতে পারে।
আলসারের প্রধান লক্ষণ
বুক জ্বালাপোড়া করা, পেটফাঁপা, পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, পেট পাতলা হওয়া, পেট কামড়ানো, খেলেও বমি বমি ভাব হওয়া, নিস্তেজ ভাব, পেট ফোলা ইত্যাদি। তাই আলসার হলে অতিদ্রুত এর চিকিৎসা করানো দরকার। পথ্য নির্বাচনের জন্য যেটি আগে করতে হবে তা হল উত্তেজক পানীয় ও অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ হয় এমন খাবার না খাওয়া।
আলসার হলে অতিরিক্ত গরম ও ঠাণ্ডা খাবার না খাওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে টকদই, মাঠা, ঘোল, ইসবগুলের ভুসি বেশ ভালো কাজ দেয়। এছাড়া নরম ভাত, আলু সেদ্ধ, সুজি, সাগু, পাতলা মুরগির স্যুপ, বার্লি ইত্যাদি খাওয়া যায়।
আলসারের তীব্রতায় শাক, বেশি আঁশযুক্ত খাবার খেলে পেটের ফাঁপা ভাব বেশি
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই হালকা খাবার, যা সহজে হজম হয় এমন খাবার বেশি করে খেতে হবে।
একজন মধ্যবয়সী আলসার রোগীর খাদ্যতালিকা
সকালের নাশতা: পাতলা সুজি ১ কাপ, নরম সিদ্ধ ডিম ১টি, পাকা কলা ১টি।
সকাল ১০টা-১১টা ১ গ্লাস ইসবগুলের শরবত।
দুপুরের খাবার: পোলাও চালের নরম ভাত ২ কাপ, নরম মাছ ২ পিস, পেঁপে তরকারি ১ কাপ, পাতলা ডাল ১ কাপ।
বিকালের নাশতা: টক-মিষ্টি দই দেড় কাপ, পাউরুটি জেলি ৩ স্লাইস।
রাতের খাবার: নরম পোলাও চালের ভাত ২ কাপ, নরম মাছ-মুরগির মাংস ১ পিস, পাতলা করে কাটা শসা আধা কাপ।
শোবার আগে: ২ চা চামচ দুধ+ইসবগুলের ভুসি ১ গ্লাস। খাদ্যতালিকা এভাবে মেনে চললে আলসার ভালো হয়ে যাবে। সঠিক খাদ্যতালিকা তৈরি করে রোগীকে দ্রুত আরাম দিতে ও রোগের উপশমে আপনার পুষ্টিবিদ সাহায্য করতে পারেন।

1 টি মন্তব্য: