শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১২

কিডনি রোগে খাদ্য ব্যবস্থা

কিডনির কাজ হল দেহের বিপাক হতে উদ্ভ‚ত ও অন্য উৎস থেকে আগত রক্তের অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য দ্রব্য নিষ্কাশন করা। বৃক্কের কার্যকরী একক নেফ্রোনের বিভিন্ন অংশ সংক্রামক রোগ ও অন্য কারণে নষ্ট হয়ে গেলে রক্ত পরিস াবণের কাজটি সুষ্ঠুভাবে হতে পারে না।
ফলে রক্তে যেমন অনেক অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি রয়ে যায়। তেমনি অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে দেহকে পুষ্টিহীন করে। নেফ্রোনের রোগ হলে তাকে নেফ্রাইটিস বলা হয়। অনেক রকম নেফ্রাইটিসের মধ্যে গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস রোগটিই বেশি দেখা যায়। এজন্য নেফ্রাইটিসের খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজনÑ
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
যে কোন রোগীর খাদ্য তালিকা করার আগে রোগীর রোগ ও খাদ্য সম্পর্কীয় ইতিহাস জানতে হবে।
ক্যালরি : কিডনি রোগের প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে। তবে অনেক দিন ধরে কিডনি রোগে ভুগলে রোগী যেহেতু দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন হয়।
প্রোটিন : স্বল্পমেয়াদি কিডনি রোগে প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা কমালে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে উচ্চমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। রোগের স্বল্পমেয়াদি অবস্থায় যদি প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে তবে প্রোটিন গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। আবার প্রস্রাব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে। প্রত্যেহ প্রস্রাবের পরিমাণ ৫০০-৭০০ মিলি হলে প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা ০.৫ গ্রাম প্রোটিন কেজি প্রতি বডি ওজন। অন্যদিকে প্রস্রাবের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে গেলে প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে ৪০-৬০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে কম পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং অ্যানিমিয়াসহ নানা সাইক্রোনিউট্রিয়েন্টেসের অভাব দেখা দিতে পারে।
ফ্যাট : ফ্যাট বিপাকের ফলে অ্যান্ডপ্রডাক্ট যেহেতু কিডনি দিয়ে নিষ্ক্রান্ত হয় সেহেতু ফ্যাট স্বাভাবিক মাত্রায় দেয়া যাবে। অর্থাৎ মোট ক্যালরির শতকরা ৩০ ভাগ ফ্যাট থেকে দেয়া যেতে পারে।
কার্বোহাইড্রেট : কার্বোহাইড্রেট স্বাভাবিক মাত্রায় খাদ্য তালিকায় দেয়া যাবে। তবে খাদ্যশস্য থেকেই এই কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করতে হবে।
খনিজ লবণ : সুস্থ কিডনি দেহের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা ব্যালান্স রাখে অন্যদিকে কিডনি রোগে দেহের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
সোডিয়াম : দেহে ইডিমা দেখা দিলে সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা কমাতে হবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন মতো আলগা লবণ গ্রহণ নিষেধ। খাবারে লবণের ব্যবহার কমাতে হবে। পনির, চিপস, আচার, জারক, চানাচুর ইত্যাদি লবণ সমৃদ্ধ খাবার নিষেধ। অন্যদিকে ঝোল সমৃদ্ধ খাবার যেমন স্যুপ, সুরুয়া ইত্যাদিতে লবণ বেশি থাকে সুতরাং এই জাতীয় খাবারগুলো বাদ দিতে হবে। এ সময় পানির মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পটাশিয়াম : কিডনি রোগের বিভিন্ন পর্যায়ে দেহে পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আবার পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন পাকা কলা, পাকা টমেটো, ডাবের পানি, মাল্টা, কমলা, আমড়া, চা, দুধ, ডাল নিষেধ। অন্যদিকে সবজি কেটে লম্বা সময় ভিজিয়ে রাখলে অথবা সবজি ভাব দিয়ে পানি ফেলে দিলে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাবে। তবে আপেল, নাসপতি, পেঁপে, পেয়ারা ইত্যাদি কম পটাশিয়ামযুক্ত ফল। অ্যাসপারাগাস, পাতাকপি, শসা, শিশা, লেটুস ইত্যাদি সবজি খাওয়া যেতে পারে।
ক্যালসিয়াম : উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রয়োজন মতো ক্যালসিয়ামের সম্পূরক খাবার খেতে হবে।
ফসফরাস : অনেক ক্ষেত্রে ফসফরাস গ্রহণের মাত্রা কমাতে হয়।
া সে সময় দুধ ও দুধসমৃদ্ধ খাবার বাদ দিতে হবে।
া বাদাম, বীচি, ডাল, সিম, সামুদ্রিক মাছ, মগজ, কলিজা, মাছের ডিম, সসেজ ইত্যাদি ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিতে হবে।
া তুষ ও ভুষিযুক্ত আটা ও এ দিয়ে তৈরি খাবার বাদ দিতে হবে।
আয়রন : আয়রনসমৃদ্ধ খাবার দিতে হয়। প্রয়োজনে আয়রনের সম্পূরক খাবার খেতে হবে।
ফ্লুইড : কিডনি রোগে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে, প্রস্রাব করার পরিমাণ কমে গেলে, ইডিমা দেখা দিলে বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে পানি গ্রহণের মাত্রা কমানোর প্রয়োজন হয়। সেসব ক্ষেত্রে নিæলিখিত বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
া প্রতিদিন কতটুকু পানি খাওয়া হয় তার পরিমাপ করতে হবে। এ ছাড়া চা-কফি, স্যুপ, সুরুয়া, ফলের রস ইত্যাদির মাপও রাখতে হবে।
া আইসক্রিম, কোলা যা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল থাকে তার পরিমাণ রাখতে হবে।
া তরল ক্যান খাবারের পরিমাপ রাখতে হবে।
অন্যান্য বিষয়
া ধূমপান বন্ধ করতে হবে
া কিডনি রোগে ডায়ালাইসিস বা হেমোডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হলে প্রোটিন ও ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই উচ্চমান সমৃদ্ধ প্রোটিন দিতে হবে।
নিæে কিছু নমুনা দেয়া হল
৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়Ñ সকালে ডিম ১টি, দুপুরে ৩০ গ্রাম, ১ টুকরা মাছ/মাংস, রাতে ৩০ গ্রাম ১ টুকরা মাছ/মাস।
৩৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়Ñ সকালে ১টি ডিম, দুপুরে ৩০ গ্রাম ১ টুকরা মাছ/মাংস, বিকালে ১ কাপ দুধ/চিকেন স্যুপ, রাতে ৩০ গ্রাম ১ টুকরা মাছ/মাংস।
৪০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়Ñ সকালে ১টি ডিম, দুপুরে ৬০ গ্রাম, ১ টুকরা মাছ/মাংস, বিকালে ১ কাপ দুধ/চিকেন স্যুপ, রাতে ৩০ গ্রাম, ১ টুকরা মাছ/মাংস।
তবে রোগী মাছ, মাংস, ডিম, দুধ না খেলে বিভিন্ন ডাল ও বাদাম দিয়ে তার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে। অ্যালবুমিনের পরিমাণ কমে গেলে ডিমের সাদা অংশ বেশি পরিমাণে দিতে হবে।
নেট থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন