হেদায়েত সাহেবের বয়স চল্লিশের মতো, ভালো চাকরি করেন। হঠাৎ করে বেশ কিছু দিন ধরে তার শক্ত পায়খানা হচ্ছে, পায়খানায় দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও মনে হচ্ছে পায়খানা ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না, তাকে খুবই বিষণí মনে হচ্ছে। দিন দিন কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছেন, পায়খানার সাথে রক্ত যায় কি না তাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন খেয়াল করিনি, স্যার। তারপর তাকে পরীক্ষা করলাম, প্রোক্টোস্কোপি ও সিগময়ডোস্কোপি টেস্ট করলাম, তারপর দেখতে পেলাম তার কোলনে অর্থাৎ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার।
হেদায়েত সাহেব যে উপসর্গগুলো নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন তা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যের। কিন্তু এ কোষ্ঠকাঠিন্য কী, কেন হয়? তা আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং সময়মতো এর চিকিৎসা না করলে কী কী পরিণতি হতে পারে সে বিষয়েই এখন আমরা আলোচনা করব।
কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও, তখনই একে বলব কোষ্ঠকাঠিন্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে;
পানি কম খেলে;
দুশ্চিন্তা করলে;
কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে;
ডায়াবেটিস হলে;
মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্খতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে;
বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমন
ব্যথার ওষুধ;
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ;
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ;
খিঁচুনির ওষুধ এবং
যে সব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে। তা ছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
শক্ত পায়খানা হওয়া;
পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা;
পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা;
মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব করা এবং
আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে;
বেশি করে পানি খেতে হবে;
দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে;
যারা সারা দিন বসে বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
যে সব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে যে সমস্যা হতে পারে
পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
পাইলস;
এনাল ফিশার
রেকটাল প্রোরাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে;
মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে;
প্রস্রাব বìধ হতে পারে;
খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুরে যেতে পারে;
খাদ্যনালিতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকাল মৃত্যু হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকে প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সিরাপ এবং মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। তাই বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, তাদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে মোতাবেক চিকিৎসা নেয়া। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভূষি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেললে এবং গরু, খাসির গোশত ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকার পাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন