মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১২

কী করে মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারবেন?


কী করে মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারবেন? 

মানসিক চাপ মানুষকে নানাভাবে অসুস্খ করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্খায়ী মানসিক চাপ অনেক ধরনের শারীরিক রোগ সৃষ্টি করে ও তার ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়।

মানসিক চাপ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ভোগেন, তাদের খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের ‘ভাইরাস’ঘটিত রোগ হয়ে থাকে। তাদের ‘সর্দি লাগা’ প্রায় লেগেই থাকে। এমনকি ‘নিউমোনিয়া’ হওয়ার আশঙ্কাও তাদের বেশি থাকে। গিরায় গিরায় বাতের ব্যথা এ ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ।
মানসিক চাপের কারণেও এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে। অথবা অনেকে সর্বশরীরে ব্যথার কষ্টে ভোগেন। এর পেছনেও মানসিক চাপ কাজ করে। অ্যালার্জি-অ্যাজমার ক্ষেত্রেও মানসিক চাপের ভূমিকা রয়েছে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার, অজীর্ণতা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যার জন্যও মানসিক চাপকে দায়ী করা হয়। সোরিয়াসিস, একজিমা, ব্রণ প্রভৃতি ধরনের চর্মরোগের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করে। আর মানসিক চাপের কারণে যে ঘুম হয় না, তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। মানসিক চাপের সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে রোগটি জড়িত, তা হলো হৃদরোগ। হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ রক্তনালিতে ক্রমশ চর্বি জমে শক্ত ও মোটা হয়ে যাওয়া। রক্তনালির এ মোটা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই মানসিক চাপের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চরক্তচাপের অন্যতম কারণও মানসিক চাপ। মানসিক চাপের কারণে কিডনি রোগেরও সৃষ্টি হয়ে থাকে। মাথাব্যথা, মাইগ্রেন যে অনেকটাই মানসিক চাপের কারণে হয়ে থাকে তা এখন সাধারণ লোকেরাও জানে। দাঁত ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, পিঠে ব্যথার সাথেও মানসিক চাপ জড়িত থাকার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। ক্যান্সার রোগীদের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে এখন মনোচিকিৎসার কথা বলা হয়। কারণ এ ধরনের রোগীদের মানসিক চাপ খুব বেশি থাকে। বিশেষভাবে কিছু চর্ম ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার রোগীর জন্য মানসিক চাপ কমাতে মনোচিকিৎসা খুবই কার্যকরী। মানসিক চাপের কারণে রোগীর মধ্যে অস্খিরতা, উৎকণ্ঠা বেড়ে যাওয়া ছাড়াও তাদের মনে রাখার ক্ষমতা তথা স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ক্ষুধামান্দ্য কিংবা অতি ক্ষুধার প্রবণতাও মানসিক চাপের কারণে ঘটে থাকে। সর্বোপরি জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে মানসিক চাপ ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। কোনো কাজেই তার ভারসাম্য থাকে না। কথায় কথায় মেজাজ খারাপ। সমাজে অনেকের সাথেই তার বনিবনা হয় না। অতি সহজেই উত্তেজিত হয়ে অঘটন ঘটিয়ে থাকে, কিংবা অলসতায় মানুষকে নিষ্কর্মা করে ফেলে মানসিক চাপ। কোনো কাজেই সে মন বসাতে পারে না। কোনো কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করাও তার পক্ষে কঠিন। এমনি অবস্খায় সে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।আপনি আপনার মনো কষ্টের কথাগুলো লিখে লিখে প্রকাশ করুন। একটি ডায়েরিতে প্রতিদিন লিখুন এবং নিজে নিজে পড়ুন। আপনার কষ্টের কারণগুলোও আপনি নিজে নিজে চিহ্নিত করুন অথবা আপনার চিকিৎসকের কাছে জীবনের সব কষ্টের কথা খুলে বলুন। ইচ্ছা করলে আপনি একজন সাইকোথেরাপিস্টের কাছেও যেতে পারেন। আপনি খুব ব্যস্ত লোক হলে আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন। নীরবে কোথাও বসে সৃষ্টি জগৎ নিয়ে চিন্তা করুন। স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে ধ্যান করুন। আপনি যদি মুসলিম হন, তাহলে নিয়মিত সালাত আদায় করুন। কোরআন অধ্যয়ন করুন, মাঝেমধ্যে নফল রোজার অভ্যাস করুন। তাসবিহ, তাহলিল পড়ুন। ইস্তিগফার করুন। সব কাজে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। তাকওয়ার পথ অবলম্বন করুন। তাকদিরে আস্খা স্খাপন করুন।

অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের নিজ নিজ ধর্মের বিধান মেনে চলুন। স্রষ্টার বিধান মানার মাধ্যমেই মানসিক শান্তি লাভ করা সম্ভব।

খাবার-দাবার দ্বারাও মানসিক চাপ কমানো যায়। এ জন্য প্রচুর ফলফলাদি খেতে হবে। শাকসবজি খেতে হবে। লাল গোশত (গরু, ছাগল, উট, ভেড়া) পরিহার করুন। ক্যাফেইনযুক্ত কপি ও চা, কোলা ও অ্যালকোহল পানীয়, পেস্ট্রি ও অন্যান্য সাময়িক শক্তিদায়ক খাবার, চিনি বা মিষ্টি খাবার বাদ দিতে হবে। লবণ খাবার কমাতে হবে। ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে। নিয়মিত মধু খেতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। এবং হাঁটার অভ্যাস করুন প্রতিদিন।

মানসিক চাপ কমাতে চিন্তার পরিবর্তন করতে হবে। সব ধরনের নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করুন। ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস করুন। মনে করুন, আপনি চাকরি পাচ্ছেন না। বেকার, সবাই আপনাকে বোঝা ভাবছে। আপনিও ভাবছেন, ‘আমি পরিবারের বোঝা’। না, এ ধরনের নেগেটিভ চিন্তা করা যাবে না। আপনি ভাবুন, আমার পরিবার আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। আমার চাকরিটা হয়ে গেলে আমিও পরিবারকে যথেষ্ট সহযোগিতা করব। এভাবে আপনি আপনার চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে পারলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যাবে। মোট কথা, ইতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ কমাতে দ্রুত সাহায্য করে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সময় নিয়ন্ত্রণ করুন। জীবনের বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য সময় বিভাজন বা সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সঠিক সময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য সময়ের ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা ঠিক করে নিতে হবে। মনে করুন, আপনার অফিস সময় ৯টা। কিন্তু-রাস্তার দূরত্ব এবং জ্যামের কারণে আপনি ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারেন না। ফলে অফিসে ঢুকেই আপনার বসের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সহকর্মীরাও আপনাকে ভালো চোখে দেখে না। আপনি এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করেন। এ ধরনের পরিস্খিতি মোকাবেলা করার জন্য আপনি আপনার অফিসের দূরত্ব এবং জ্যামের সময় হিসাব করে বাসা থেকে বের হবেন। দেখবেন, ঠিক সময়ে সব দায়িত্ব পালন করতে পারছেন। তাই সময় নিয়ন্ত্রণ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম উপায়।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আপনার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। প্রতিদিন আপনি কিছু ভালো কাজ করুন। অন্যের উপকার করুন। কারো কোনো ক্ষতি করবেন না। ভালো চিন্তা করুন। অন্যকে ভালো কাজ করার উপদেশ দিন। ঝামেলা এড়িয়ে চলুন। সবার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। ছোটদের স্নেহ করতে শিখুন। নারীদের প্রতি ভালো ব্যবহার করুন। অসহায়কে সাহায্য করুন। এসব কাজ আপনার জীবনের রুটিন কাজ হিসেবে পালনের অভ্যাস করুন। আর চিকিৎসার জন্য সাইকোথেরাপিস্ট বা  চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

1 টি মন্তব্য: