
স্ট্রোকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের নির্দিস্ট এলাকা
ধূমপান ও মদপান পরিহার করুন : গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। ধূমপানের ফলে রক্তনালিতে চর্বি জমা হয়ে রক্তনালি বন্ধ করে দেয়। ফলে মস্তিষ্কে পরিমিত রক্ত পেঁৗছতে পারে না। সিগারেটের নিকোটিন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, রক্তে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও রক্তের ঘনত্ব বাড়িয়ে রক্তপিণ্ড তৈরিতে ভূমিকা পালন করে। যে কোনো বয়সেই ধূমপান ত্যাগ করা হোক না কেন তা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
নিয়ন্ত্রণ করুন উচ্চরক্তচাপ : রক্তচাপ স্বাভাবিকের মধ্যে রাখুন। এ জন্য অতিরিক্ত লবণ পরিহার করুন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।
হার্টের রোগের চিকিৎসা নিন : হার্ট অ্যাটাক, অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন, হার্ট বড় হয়ে গেলে, ভাল্বের সমস্যা ইত্যাদি কারণে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এ রোগগুলোর চিকিৎসা করান। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে আপনাকে অ্যাসপিরিন খেতে হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন : ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোকের সময় রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে মস্তিষ্কে কোষ বেশি পরিমাণে ধ্বংস হয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালিতে চর্বি জমে যায়। ফলে রক্তনালি সরু হয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ওষুধ সেবন আর শৃঙ্খলা মেনে চলুন, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খান ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
পুষ্টিকর খাবার খান : প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। প্রতিদিনের খাবারে পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফলমূল ও শাকসবজি খান। রেড মিট যেমন_ গরু, ছাগল, ভেড়ার মাংস খাবেন না। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এতে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যেটা ধমনীতে চর্বির আস্তরণ পড়তে সহায়তা করে। লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। লবণ খাবেন না। আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খান। কমিয়ে ফেলুন শরীরের অতিরিক্ত ওজন। অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। এতে শরীরে মেদ জমবে। খাবার খান শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে মিল রেখে। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন_ সবুজ শাকসবজি, সয়াবিন তেল, মাছের যকৃৎ খান।
ব্যায়াম করুন : গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করেন তাদের রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। হাঁটা ভালো ব্যায়াম। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে হাঁটুন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ মাইল হাঁটুন। এ ছাড়া সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, নাচা, টেনিস, গলফ খেলতে পারেন। ব্যায়ামের সময় বুকে ব্যথা, মাথা ঝিম ঝিম ও শ্বাসকষ্ট হলে ব্যায়াম বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মানসিক চাপ কমান : রাগ কমান, কমিয়ে ফেলুন মানসিক চাপ। জোর করে হলেও হাসুন প্রাণ খুলে। মেডিটেশন করতে পারেন। এতে কমবে মানসিক চাপ, বাড়বে আত্মবিশ্বাস।
রক্তে কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলুন : রক্তে কোলেস্টেরল বেশি হলে রক্তনালিতে চর্বি জমে রক্তনালি বন্ধ হয়। নিয়ন্ত্রণে রাখুন কোলেস্টেরলের মাত্রা। তাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন গরু, খাসি, চিজ, বিভিন্ন ধরনের কেক, আইসক্রিম, ইয়োগাট, কনডেন্সড মিল্ক ও কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার ডিমের কুসুম, চুপড়ি আলু, বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্ক, যকৃৎ, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। যদি রক্তে কোলেস্টেরল না কমে তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল : পিল রক্তকে ঘন ও জমাট বেঁধে ফেলতে পারে। সেইসঙ্গে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। পিল সেবনের আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।