বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০১১

প্রেগন্যান্সির সময়ের কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য

এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সকল মানুষকেই মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠতে হয়েছে। ভবিষ্যতে কৃত্তিম জরায়ুতেও গর্ভ ধারন সম্ভব হবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। তবে সেইদিকে না গিয়ে আজকে কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য শেয়ার করি গর্ভধারনকালীন সময়ের।

১. গর্ভাবস্থায় ছেলে ভ্রুনের ইরেকশন হয়।
জানি অনেকেই চোখ ছানাবড়া করে বলবেনঃ কি?, অনেকে বলবেন চাপাবাজী, কেউ কেউ তাদের স্বভাবসুলভ ভাবে বলবেন যে গাঁজাখুরী গপ্পো। কিন্তু নাহ, তাদের হতাশ করে দিয়েই বলতে হচ্ছে যে এটা সত্য। আল্ট্রাসনোগ্রাফীতে এই ইরেকশনের ঘটনা দেখা যায়।


কিন্তু কাহিনী এইখানেই শেষ না, গবেষনা থেকে জানা যায় যে গর্ভকালীন সময় থেকেই ভ্রুনেরা স্বমেহন ও করে থাকে। ছেলে এবং মেয়ে উভয় ভ্রুনই! :P
রেফারেন্সঃ American Journal of Obstetrics and Gynecology 175, Sept 1996 page 753

২. মা রা আসলেই জ্বলজ্বল করে।
আমরা প্রায়ই বলে থাকি যে গর্ভবতী মা দের দেখতে বেশ উজ্জ্বল লাগছে, বা খুশীতে জ্বলজ্বল করছে। এটা কিন্তু সত্যি! আসলেই তাদের ত্বক উজ্জ্বল হয়, ঝলমল করে।
এর কারন হচ্ছে এই সময়ে শরীরে রক্তের পরিমান প্রায় ৫০% বেড়ে যায়, এই বাড়তি রক্ত ত্বকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ত্বককে টানটান করে এবং আভাময় করে। এছাড়াও হরমোন নিঃস্বরনের কারনে ত্বকের তেল গ্রন্থীগুলো বেশী কাজ করে এবং ত্বককে মসৃন এবং উজ্জ্বল করে। তাই এই দুইয়ের সমন্বয়ে এই সময়ে মাদের মনে হয় উজ্বলতায় ঝলমল করছে।

৩. মা দের ঘ্রান শক্তি বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় মা দের ঘ্রানশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এইজন্য দেখা যায়যে অনেক হবু মা ই সামান্য গন্ধেও কাবু হয়ে যান যেখানে অনেকে হয়তো টেরও পায়না। এর কারন হচ্ছে অতি সামান্য পরিমান বিষাক্ত বা দুষিত পদার্থ মা এর শরীরের জন্য ক্ষতিকর না হলেও ভ্রুনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই সময়ে ঘ্রান শক্তি এতোই বেড়ে যায় যে অতি সামান্য গন্ধও মারা টের পান, ফলে এইসব পদার্থ সহজেই শনাক্ত করতে ও দূরে থাকতে পারে।

৪. ভ্রুনেরা কান দিয়ে শোনার আগেই ত্বক দিয়ে শুনতে পারে
ভ্রুনদের কান পুরোপুরি গঠিত হওয়ার আগেই তারা তাদের ত্বক এবং হাড়ের মাধ্যমে তরঙ্গ অনুভব করতে পারে। ১৬ সপ্তাহের মাথাতেই তারা এই শব্দ তরঙ্গ অনুভব করে সেগুলোর সাড়া দিতে সক্ষম হয়।
মজার ব্যপার হলো তারা ভাষা বুঝার আগে সুর এবং সঙ্গীত বুঝে। তারা কথার চেয়ে গানের প্রতি আগে সাড়া দেয়, এবং তাদের শরীরবৃত্তিয় পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমনঃ হার্ট রেট এবং মেটাবলিজম এর পরিবর্তন আসে। এছাড়াও বাচ্চারা শুধু শুনতেই পারেনা, তারা বুঝতেও শিখে এবং সেই অনুযায়ী সাড়াও দিতে পারে। বাচ্চারা গর্ভে থাকা অবস্থাতেই ফুটবল অথবা কিক বক্সিং খেলে। তারা যখন এই লাথি দেয়, তখন সাথে সাথে যেই জায়গায় দিয়েছে, সেখানে হাল্কা চাপ দিয়ে বাচ্চাকে সেটা বলা, এবং এই কাজটা বার বার করে বাচ্চাকে শেখানো যায়। ফলে এরপরে দেখা গেছে মা এরপর লাথি দিতে বলার সাথে সাথে বাচ্চারাও লাথি দিয়ে সাড়া দেয়। 

৫. গর্ভাবস্থায় মা দের জুতা স্যান্ডেলের সাইজ এক থেকে দুই সাইজ বেড়ে যেতে পারে!

হ্যাঁ, একদম সত্যি। ওজন বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চা জন্মের প্রস্তুতি হিসেবে নিম্নার্ধের লিগামেন্ট সমূহ ঢিলে হতে শুরু করে। ফলে পা এর পাতা ছড়িয়ে যেতে থাকে এবং কিছুটা ফুলে যায়। ফলে পা এর সাইজ ও বেড়ে যায়। তবে চিন্তার কিছু নেই। বাচ্চা জন্মের পর আবার আগের সাইজ এবং শেপে ফিরে আসে। 


৬. বাচ্চারা মা দের খাবার রূচী পেয়ে থাকে
আমরা সবাই বলে থাকি যে নিজের মা'র মতো রান্না কেউ করতে পারেনা। আসলেই সেটা সত্যি। বাচ্চারা গর্ভে থাকা অবস্থাতেই তার মা'র খাওয়া দাওয়া থেকে তার রূচী পেয়ে থাকে। মা যা যা খেতে পছন্দ করে, সাধারনত বাচ্চারাও সেগুলোই পছন্দ করে। এছাড়াও মা কোন খাবার যেভাবে খেতে পছন্দ করে সেটাও। এর কারন হচ্ছে মা যা খাচ্ছে, সেগুলো একই রাসায়নিক অনুপাতে বাচ্চার কাছে যাচ্ছে প্লাসেন্টার মাধ্যমে, কিছু অংশ অ্যাম্নিয়োটিক ফ্লুইডের মাধ্যমে বাচ্চার মুখে ও নাকে যায়, ফলে তারা খাবারের স্বাদের ধারনা পায়। :D :D-<
৭. সিম্প্যাথেটিক প্রেগন্যান্সী
এতো কিছু পড়ে যদি এতোক্ষন বাবারা ভাবতে থাকেন যে আপনারা বেঁচে গেছেন, সব ঝক্কি ঝামেলা মা দের উপর দিয়েই যাবে, তবে ভুল ভাবছেন। আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন ভুক্তভোগী প্রেগন্যান্ট! ( তবে পুরোপুরি না, অন্তত এখনো না! :P )

একে বলা হয় ক্যুভেয় সিনড্রোম বা ফ্যান্টম প্রেগন্যান্সি। গর্ভবতী নারীর স্বামীরা অর্থাৎ বাবারাও তাদের স্ত্রীর মতো একই ধরনের সিম্পটম বা লক্ষ্যন প্রকাশ করে থাকে। যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, হরমোন মাত্রা পরিবর্তন হওয়া, বমি আসা, ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়া ইত্যাদি। এমনকি কারো কারো তাদের স্ত্রীর সাথে প্রসব বেদনাও হয়, প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেসন ও হয়। অর্থাৎ তারা প্রায় একটা ছদ্ম গর্ভধারনের মতো অবস্থা দিয়ে যায়। তাই বাবাজীরা সাবধান কিন্তু!