রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

গর্ভবতীদের বমি হওয়া ভালো

মা হওয়া বেশ কষ্টের। সন্তান গর্ভে আসার পর মাকে দীর্ঘদিন ধরে তাকে শুধু বহনই করতে হয় না, বরং লালনও করতে হয়। প্রথম তিন মাস গর্ভবতী অনেক মা-ই কিছু খেতে পারেন না। বমি বমি ভাব বা বমির কারণে তাদেরকে এক দুঃসহ কষ্টের মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। তবে গর্ভধারণের প্রথমদিকে এই বমি বমি ভাব ও বমিকে স্বাগত জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, এ ধরনের উপসর্গ যাদের দেখা দেয়, তাদের বেলায় অকাল গর্ভপাতের আশঙ্কা কম থাকে। এ গবেষক দলের সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. রোননা এল চ্যান জানান, গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যে সব মা বমি বমি ভাব বা বমির উপসর্গে ভোগেন তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনোই কারণ নেই।
ডা. চ্যান বলেন, গর্ভকালে বমি হলে গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান বমির মাধ্যমে মায়ের দেহ থেকে বের হয়ে যায়। ফলে গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। এ ধরনের কথার পেছনে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, গর্ভ বজায় রাখার জন্য যে সব হরমোনের প্রয়োজন সেগুলো প্রথম তিন মাসেই মায়ের দেহে বেশিহারে বৃদ্ধি পায়। বমি ও বমি বমি উপসর্গ দেখা দেয়ার মাধ্যমে এই হরমোনের প্রতি মায়ের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি ফুটে ওঠে।
গর্ভকালে মায়েরা যে সব উপসর্গে ভোগেন তা সবারই একরকম হয় না। একেক মায়ের মধ্যে একেক উপসর্গ দেখা যায় বলে তিনি জানান। ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ মায়ের এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আগে এ সংক্রান্ত যে সব সমীক্ষা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, বমি বা বমি বমি ভাব যে সব মায়ের হয়, তাদের সাধারণভাবে গর্ভপাত হয় না। ‘হিউম্যান রিপ্রোডাকশন’ নামের জার্নালে এসব কথা লিখেছেন ডা. চ্যান ও তার গবেষক দলটি।
গবেষক দলটি গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, ৮৯ শতাংশ মায়ের বমি বা বমি বমি ভাবের উপসর্গ সামান্য মাত্রায় হয়েছে। আর গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই ১১ শতাংশের গর্ভপাত হয়ে গেছে, যাদের বমি বা বমি বমি ভাব ছিল না।
গবেষক দলটি আরও দেখতে পেয়েছেন, ২৫ বছরের অনূর্ধ্ব যে সব মায়ের গর্ভের প্রথম তিন মাস এ ধরনের উপসর্গ অর্থাত্ বমি ও বমি বমি ভাব হয়েছে তাদের তুলনায় যাদের হয়নি তাদের গর্ভপাতের আশঙ্কা ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ৩৫ বছরের বেশি বয়সের যে সব মায়ের এ ধরনের উপসর্গ হয়নি তাদের গর্ভপাতের আশঙ্কা প্রায় ১২ গুণ। এ দুই উপসর্গ যে সব মায়ের বেশি সময় ধরে ছিল তাদের গর্ভপাতের আশঙ্কা কমে গেছে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মায়েদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গের সঙ্গে গর্ভপাতের জোরালো সম্পর্ক আছে বলে তারা দেখতে পেয়েছেন। ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী যে সব মায়ের গর্ভকালীন অর্ধেকের বেশি সময়ব্যাপী এ দুই উপসর্গ থেকেছে তাদের গর্ভপাতের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে ৮০ শতাংশ কমে গেছে।