বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০১১

গরমে কীভাবে সুন্দর ও সতেজ থাকা যায়

গরমে ত্বকের যত্ন


অতিরিক্ত গরমে ত্বক আর্দ্রতা হারায় এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। জন্মগতভাবে ত্বক তিন ধরনের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ত্বক, শুষ্ক ত্বক ও তৈলাক্ত ত্বক। রোদ ও ধুলোবালি স্নিগ্ধ ও সতেজ ত্বকের বড় শত্রু। রোদের পোড়াভাব ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি বসে যায়। লোমকূপে ময়লা জমে মুখে ব্রণ হয় এবং রোদের ছোপ ছোপ দাগ পড়ে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ঘাম থেকে ঘামাচিসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কখনও কখনও র্যাশ হতেও দেখা যায়। ত্বক শুষ্ক হলে ত্বকের নমনীয়তা কমে যায়, আর নমনীয়তা কমে গেলে ত্বকে সূক্ষ্ম ফাটল ধরে এবং বার্ধক্যের ছাপ ফুটে ওঠে চেহারায়।

সমাধান


ময়শ্চারাইজার

রূপের স্নিগ্ধতা ধরে রাখতে ময়শ্চারাইজারের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে কোমল ও সজীব। ময়শ্চারাইজার ত্বককে রাখে নরম ও সুন্দর। এর ব্যবহারে শুষ্ক অবস্থা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার জরুরি।

ফেসিয়াল

গরমে পুরো মুখে তেল জমবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই তৈলাক্ত অবস্থার কারণে ত্বকে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে ফেসিয়াল প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচ্য। নিয়মিত ফেসিয়ালের ফলে ত্বক সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ফেসিয়ালের বিকল্প নেই।

ফেসিয়াল কেন জরুরি?

গরমে ঘামে ধুলোবালি ময়লা মুখে জমে মুখের সৌন্দর্যহানি ঘটায়। সেই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে ফেসিয়ালের গুরুত্ব অপরিসীম। গরমে ময়লা আর ঘামে ত্বকের কোষগুলো সরাসরি সূর্যরশ্মির প্রখরতায় নানা বর্ণ ধারণ করে। ত্বক পুড়ে যায়। কখনও কখনও ত্বকে মেস্তা, কালো দাগ, হোয়াইটহেড, ব্ল্যাকহেডসহ নানা সমস্যার উদ্ভব হয়। তাই ত্বকের এসব সমস্যার সমাধান পেতে এবং ত্বকের পুষ্টি জোগাতে ফেসিয়াল করা জরুরি। এছাড়াও ত্বকের প্রশান্তির জন্য ফেসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ। ফেসিয়াল দ্বারা মুখে জমে থাকা ময়লা লোমকূপের গভীর থেকে পরিষ্কার করা সম্ভব। ত্বকের মরা চামড়া সরে গিয়ে কোষগুলোকে উজ্জীবিত করে তোলে। ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়াল করতে হবে। ফেসিয়ালের পাশাপাশি মাস্ক ও ফেসপ্যাকের ব্যবহার জরুরি। যদিও এর ব্যবহার স্বল্পস্থায়ী, তবুও ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে দীর্যস্থায়ী ভালো ফল পাওয়া যায়। যাদের ত্বকে বেশি সমস্যা মনে হয় তারা ১৫ দিনে একবার ফেসিয়াল করাতে পারেন। তবে অবশ্যই বিউটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে, নতুবা মাসে একবার করলেই হবে। ফেসিয়ালের সময় অভিজ্ঞ কারও দ্বারা ফেসিয়াল করাবেন। এতে ত্বকের কোষগুলো সজীব হয়ে মুখের আর্দ্রতা ফিরে আসবে। অনেকে না জেনে না বুঝে ফেসিয়াল করান। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই থাকে বেশি। তাই অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ান দ্বারা ফেসিয়াল করানো উচিত।

ফেসিয়াল টিপস

সাধারণ পোশাক বদলে ফেসিয়ালের পোশাক পরে ফেসিয়াল করুন। এতে আপনার ম্যাসাজে সুবিধা হবে।
চুল খোলা না রেখে ফেসিয়াল বেল্ট দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখুন। এতে ফেসিয়াল করার সময় চুল মুখে ও কপালের ওপর এসে পড়বে না।
ফেসিয়াল করার আগে হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন, এরপর গলা, ঘাড় ও মুখে ম্যাসাজ ক্রিম লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিন ৮/১০ মিনিট সময় নিয়ে। ক্লিনজিং করে মুখ পরিষ্কার করে তুলা দিয়ে মুখের ময়লা তুলে নিন। নিয়মিত ফেসিয়াল করার ফলে ত্বকের বিভিন্ন রস নিঃসরণকারী গ্রন্থি শান্ত ও ঠাণ্ডা হয় ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তাই নিয়ম করে ফেসিয়াল করুন।
বাড়িতে বসে স্টিম ফেসিয়াল করতে পারেন। একটি পাত্রে ফুটন্ত গরম পানি নিন। এরপর এর ভাপ মুখে নিন। ভাপ নেয়ার সময় চোখ দুটো বন্ধ রাখুন। এভাবে ১০ মিনিট করুন। তারপর ভাপ নেয়া শেষ হলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সারামুখ ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের যত্নে টিপস

গরমে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ রাখার প্রথম ধাপ ডিপ ক্লিনজিং। এ সময়ে ক্রিম জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। রোদে অবশ্যই ছাতা ও সানগ্লাস ব্যহার করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে, যাতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। এই গরমে আলফা হাইড্রোক্সি এসিডসমৃদ্ধ (অঐঅ) ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। এতে ত্বক থাকবে তরতাজা। তবে দিনে একবারের বেশি ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

এ সময়ের কার্যকর খাবার

শুধু বাহ্যিক যত্নেই ত্বক ভালো থাকে না। প্রচণ্ড এই দাবদাহে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ যত্নও। আর তাই ফলের রস, টাটকা সালাদ প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।
তিতা খাবার খাবেন এবং এস্ট্রিনজেন্টসমৃদ্ধ সবজি খাবেন ও বিভিন্ন ঠাণ্ডা খাবার যেমন—বার্লি, ব্রাউন রাইস এবং যব খেতে পারেন।
এ সময়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে, এ জন্য গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। টক, ভাজাপোড়া এবং খুব বেশি গরম খাবার খাবেন না। খাওয়ার আগে লেবুর রসে চিনি মিলিয়েও খেতে পারেন, এতে হজম ক্ষমতা বাড়ে। পচাবাসি খাবার এড়িয়ে চলুন।
এ গরমে শুধু একটু সচেতনতা আর বাড়তি যত্ন আপনার ত্বককে করে তুলতে পারে সতেজ ও সজীব। আপনার ত্বক থাকতে পারে ফুলেল স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে সব কিছুরই মূলমন্ত্র। তাই বাইরে থেকে ফিরে স্বাভাবিক নিয়মে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন। ত্বক পরিষ্কার করতে ত্বকের সঙ্গে মানানসই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন অথবা স্ক্রাবের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট করে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা স্ক্রাব ব্যবহারের পর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন। এছাড়া উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক পেতে প্রয়োজন একটু বাড়তি রূপচর্চার। একটু সময় নিয়ে অনায়াসে আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন। গোলাপের পাপড়ি পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই গোলাপজল বোতলজাত করে ফ্রিজে অথবা বরফ করে রেখে দিতে পারেন। পরে বাইরে থেকে এসে ঠাণ্ডা গোলাপজল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে ত্বকের স্নিগ্ধতা বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি ত্বক স্নিগ্ধ ও সতেজ লাগবে। যাদের ত্বক সাধারণ তৈলাক্ত তারা কাঁচাহলুদ, মসুরের ডাল এবং কাঁচা দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’দিন এভাবে রূপচর্চা করলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। যাদের মুখে ঘামাচি আছে তারা বৃষ্টির পানি জমিয়ে ফ্রিজে রেখে নিয়মিত মুখ ধুলে উপকার পাবেন। রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে কমলার খোসা বেটে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। লোমকূপের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য মাসে অন্তত একবার ভালোমানের কোনো পার্লার থেকে ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়াল করে নিতে পারেন। 
কথায় আছে, সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। তাই আপনাকে সময়ের সঙ্গে মিতালি করতে হবে, চলতে হবে তাল মিলিয়ে। হতে হবে সময় সম্পর্কে সচেতন এবং রাখতে হবে ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা। গ্রীষ্মের সূর্যের প্রখরতা, গরমের অস্বস্তি এবং ধুলোবালির জন্য ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর সহজ সমাধানের জন্য এখনই আপনাকে সচেতন হতে হবে। এ ঋতুতে প্রখর রোদ, ঘাম আর ধুলোবালিতে মাখামাখি হয়ে আপনার ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায়। এই গরমে কীভাবে সুন্দর ও সতেজ থাকা যায়, সে সম্পর্কে কিছু তথ্য।

গরমে ত্বকের সমস্যা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন