মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১১

ফলের গুণাগুণ

  ফলের গুণাগুণের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। একেক ফলের মধ্যে একেক রকম খাদ্যগুণ থাকে। আর স্বাদের কারণে ফল খেতে সবাই ভালোবাসে। আবার নানা ধরনের রোগ থেকে বাঁচার এক অন্যতম উপায় হচ্ছে নিয়মিত ফল খাওয়া। 

০০   ফলের উপাদানের মধ্যে ব্যাড কোলেস্টরল থাকে না, যা থেকে ব্লাড প্রেসার এবং হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের বংশগত হার্টের রোগে আছে বা যারা ওবিসিটি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ডায়েটে ফল থাকাটা খুবই জরুরি। লেবুজাতীয় ফল ছাড়াও হলুদ, কমলা এবং লাল রঙের ফল বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত।
০০   ফলের আরেক নাম ‘ব্রেন ফুয়েল’। মস্তিষ্ককে সজীব এবং কর্মক্ষম রাখতে ফলের কোনো জুড়ি নেই। ফলের উপাদানের মধ্যে অন্যতম ন্যাচারাল সুগার, যা আমাদের মনে রাখার এবং চিন্তা করার ক্ষমতা বেশ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
০০   ন্যাচারাল ফাইবার ফলের আরেকটি বিশেষ উপাদান। দিনে কমপক্ষে ২৫-৩০ গ্রাম ফল খেলেই শরীর তার প্রয়োজনীয় ফাইবার পেতে পারে। ফাইবারের সাহায্যে ওবিসিটি, হার্টের অসুখ, ব্লাড সুগার, কনস্ট্রিপেশন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
০০   ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফল খেলে শরীরের ভিতর জমে থাকা ফ্যাট এবং টক্সিক ওয়েস্ট আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
০০   শরীরে জমে থাকা বিষ বা টক্সিন ফ্লাশ করতে সাহায্য করে ফল। লেবুজাতীয় ফলের রস সকালবেলা ব্রেকফাস্টের সময় খেলেই এই ডিটক্সিফিকেশনের পদ্ধতি অনেকটাই হয়ে যায়, ডিটক্স ছাড়াও ফল শরীরের শক্তি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
০০   ফল, বডি টিস্যুর সঠিক বৃদ্ধি এবং গঠন করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ভিটামিন ‘সি’যুক্ত ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে বাড়তে দেয় না।
০০   ফলের অন্যতম উপাদান ফোলেট রক্তের লোহিত কণিকা গঠন করে থাকে। শারীরিক কোনো রকম ক্রুটিমুক্ত রাখতে গর্ভস্থ ভ্রণকে সাহায্য করে ফোলেট।
০০   পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ফল খান তারা প্যানিক অ্যাটাক, ডিপ্রেশন এবং আংজাইটির মতো মানসিক অসুবিধা খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। ফল ব্রেনকে ফোকাসড রাখতে সাহায্য করে।




ফল খাওয়ার সাতসতের
০০   দিনে অন্তত পাঁচ বার একটি করে ফল খান।
০০   সকালে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস ফ্রুট জুস খান, শরীরে জমে থাকা টক্সিন ফ্লাশড আউট হয়ে যাবে। রুটি বা ভাতের সাথে ফল খাবেন না। যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে বা পরে ফল খান।
০০   টাটকা ফল জুস করে কোনো কিছু না মিশিয়ে দিনে অন্তত এক গ্লাস করে অবশ্যই খাবেন। ফ্রুটজুস একবারে গিলে না ফেলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খান। খুব ভালো উপকার পাবেন।
০০   ডাইনিং টেবিল, ফ্রিজের উপর অথবা কিচেনে একটা জায়গা করে নিন, সেখানে সুন্দর ফ্রুট বোলে সাজিয়ে রাখুন আম, জাম, লিচু, কলা, পেয়ারা, আপেল, কমলাজাতীয় ফল। যাতে আপনার পরিবারের সদস্যরা সারাদিন ধরে ফলগুলো খেতে পারে।
০০   বাড়িতে অতিথি এলে অন্যকিছু না দিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে ফ্রেশ ফ্রুট জুস অফার করুন।
০০   বাচ্চাদের টিফিনে কিছু না কিছু ছোট ফল, যেমন—আঙ্গুর, খেজুর, জামরুল ইত্যাদি দিতে চেষ্টা করুন।
০০   সবসময় যে মৌসুমে যেই ফল পাওয়া যায়, তা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
০০   লাল, হলুদ, সবুজ, নীল নানা ধরনের রেনবো ফল অর্থাত্ বিভিন্ন রঙের ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন সব সময়।
০০   নানা ধরনের বা নানান রঙের ফলে নির্দিষ্ট খাদ্যগুণ আছে, যা প্রস্টেট ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, টাইপ টু ডায়বিটিস ইত্যাদি অসুখের মোকাবিলা করতে শরীরকে সাহায্য করে।
০০   খাওয়া-দাওয়ার পরে ভরপেটে কয়েক টুকরো আনারস অবশ্যই খাবেন।
০০   কাটা ফল খাওয়ার সময় চামচ ব্যবহার করুন।
০০   এক সপ্তাহের বেশি ফল ফ্রিজে না রাখাই ভালো।
০০   ফল কেনার পরে টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়ে এয়ারটাইট কন্টেনারে পুরে ফ্রিজে রাখুন। খাওয়ার আগে অবশ্যই ধুয়ে নেবেন।
০০   যেসব ফলের খোসা খাওয়া যায়, যেমন—আপেল, নাশপাতি, জাম ইত্যাদি জাতীয় ফলের খোসাশুদ্ধ খান।
০০   ফ্রিজে ফল রাখার সময় মাছ, মাংস, ডিম বা সি ফুডের কাছাকাছি ফল রাখবেন না।
সুস্থতা এবং ফল
০০   হার্টের অসুখ :আঙুর, আপেল, কমলালেবু, এপ্রিকট।
০০   ডায়বেটিস :শসা, পেয়ারা, কালো জাম, আপেল, বেদানা, কিউয়ি ফ্রুট।
০০   ক্যান্সার :কমলালেবু, মুসাম্বি, আঙুর, পেঁপে, আখরোট।
০০   অস্টিওপোরোসিস :আপেল, আমন্ড, কালোজাম, ডুমুর, আঙুর।
০০   গ্যাসট্রাইটিস :শসা, শাঁকালু, তরমুজ, নাশপাতি, আঙুর।
মিল প্ল্যান
ব্রেকফাস্ট
০০   আপেল, কলা, আনারস টুকরো করে মিশিয়ে নিন সিরিয়ালে।
০০   দইয়ের মধ্যে আম, কলা, বেদানা, শসা যোগ করে মজাদার ডিপ বানিয়ে নিতে পারেন।
০০   বড় গ্লাসের এক গ্লাস আঙুরের বা কমলালেবুর রস অবশ্যই খাবেন।
লাঞ্চ
০০   আনারস, কলা, আপেল, তরমুজ, আঙুর ইত্যাদি দিয়ে ফ্রুট স্যালাড বানিয়ে নিন।
০০   অফিসের লাঞ্চের সময় একটা কলা বা আপেল অবশ্যই খাবেন।
০০   একটা বক্সে ড্রাই ফ্রুটস এবং ডুমুর রেখে দিন। টুকটাক মুখ চালান কাজের ফাঁকে ফাঁকে।
স্ন্যাকস
০০   ফ্রেশ ফ্রুট স্মুদি তৈরি করে নিন, কমলালেবু, আনারস, আঙুর, কলা দিয়ে।
০০   বিভিন্ন ফল কুঁচি করে তৈরি করে নিন কাস্টার্ড বা পুডিং।
০০   শসা, টমেটো, পিয়াজ দিয়ে মুড়িমাখাও খেতে পারেন।
ডিনার
০০   আনারস, কলা, চেরি, পিচ শিকে গেঁথে বানিয়ে ফেলুন শিক কাবাব।
০০   পি নাট বাটার বা মেয়োনিজ ফলের উপর ছড়িয়ে দিন। অবশ্যই আগে ফলগুলো ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নেবেন।
০০   সুইট ডিশ হিসেবে ফ্রুট টপিং দিয়ে প্যান কেক সার্ভ করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন