হাঁপানি বা অ্যাজমা শ্বাসনালির একটি ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) প্রদাহজনিত সমস্যা, যার ফলে শ্বাসনালিতে বিভিন্ন কোষ বিশেষত ইয়োসিনোফিল ও অন্যান্য কোষীয় উপাদান জমা হয় এবং শ্বাসনালিকে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। ফলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসনালী পরিবেশের কারণে বিভিন্ন বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়। এ কারণে
শ্বাসনালির ছিদ্রপথ সরু হয়ে যায় এবং রোগী শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, বুক জ্যাম হওয়া, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে থাকে।
অ্যাজমার লক্ষণ : শ্বাসনালি সংকুচিত হয়, ফলে রোগীর-শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে চাপ/জ্যাম লাগা অনুভূত হয়, কাশি হয়, সাধারণত শুকনো কাশি হয়, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হয়। উল্লেখ্য, এই ৪টি লক্ষণ সব রোগীর একইভাবে হয় না। কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বেশি হয়, কারও বুকে জ্যাম লাগা বেশি হয়। আবার অনেকের শুধু কাশি হয়। সাধারণত শুকনো কাশি রাতের শেষ ভাগে বা সকালে বেশি হয় এবং শীতকালে হয়ে থাকে। এ ধরনের অ্যাজমাকে কাফ ভ্যারিয়েট অ্যাজমা বলে।
অ্যাজমার চিকিৎসা : ১. রোগীকে অ্যাজমা বিষয়ে শিক্ষাদান । রোগের লক্ষণ ফুসফুসের পরীক্ষা দ্বারা অ্যাজমার তীব্রতা পরিমাপ করা এবং সেভাবে চিকিৎসা করা। অ্যাজমা রোগীকে ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানগুলো থেকে দূরে রাখা। প্রত্যেক রোগীকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যাপারে সম্যক ধারণা দেওয়া। প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাজমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অ্যাজমা রোগীকে নিয়মিত যেমন- ২-৩ বার চেকআপের অন্তর্ভুক্ত করা।
অ্যাজমার ওষুধকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় : উপশমকারী ওষুধ যেমন- সালবিউটামল। এই ওষুধ তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসনালির ছিদ্রপথ প্রসারিত করে শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা কমিয়ে দেয়। কিন্তু এর কার্যকাল খুবই কম। প্রতিরোধক ওষুধ- যেমন স্টেরয়েড, এমাটনোফাইলিন, ক্রোমগল্গাইকেট ইত্যাদি।
প্রতিরোধ আপনার হাতে : ঘরে কাউকে ধূমপান করতে দেবেন না। বাসায় কার্পেট ব্যবহার করবেন না, শোবার ঘরে তো নয়ই। নিজে ঘর ঝাড়ামোছা করবেন না। বিছানায় রোমযুক্ত চাদর, কাঁথা, লেপ, কম্বল ও বালিশ ব্যবহার করবেন না। বিছানা অন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন যেন ধুলাবালি না পড়ে। মাইট মেরে ফেলার জন্য সপ্তাহে একদিন চাদর, বালিশ ধুয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা রোদে শুকাতে হবে। এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করলে ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ঘরে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। মশা মারার জন্য কয়েল বা ¯েপ্র ব্যবহার করা যাবে না। যারা চুলায় রান্না করেন ধোঁয়া যেন শরীরে বেশি প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাড়িতে পোষা জীবজন্তু রাখবেন না। ঘরে যেন তেলাপোকা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন