
তানিশার প্রথম সন্তানটিকে নিয়ে বাড়িজুড়ে উত্সব। স্বামী রাকিবেরও সন্তানকে ঘিরে কত আয়োজন। আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা। কিন্তু এই উত্সবের আমেজের ভেতরেই কেমন যেন বিষাদ ঘিরে থাকে তানিশাকে। প্রায়ই মন খারাপ লাগে, লুকিয়ে কিছু সময় কেঁদে হালকা হতে চায়, তবু মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারে না অন্তর্গত অস্বস্তির কথা। এমনকি ভালোবেসে বিয়ে করা স্বামীকেও না। —কি মনে করবে ওরা? এই ভাবনা কণ্ঠ চেপে ধরে তার। ধীরে ধীরে মন খারাপ ভাব বাড়তে থাকে। উদ্বেগ, অনিদ্রা, খাওয়ায় অরুচি—সব মিলে বিধ্বস্ত লাগে। কেউ তার পরিবর্তনটা লক্ষ্য করলেও হয়তো গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। অবশেষে সবার টনক নড়ে সেদিন, যেদিন অচেতন তানিশার বিছানার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় ঘুমের ওষুধের চারটি খালি পাতা।
সন্তানের আগমন আনন্দের উপলক্ষ হলেও সদ্য মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া নারীদের নেতিবাচক অনুভূতির ঘটনা মোটেও বিরল নয়। বরং, গবেষকরা বলেন, প্রসবের চার থেকে ছয় সপ্তাহের ভেতর প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রসূতি আবেগজনিত সমস্যায় ভোগেন। নতুন মা অস্থিরতা বোধ করেন, অকারণেই মন খারাপ হয়ে যায়—কান্না পায়, সবকিছু কেমন যেন বিশৃঙ্খল-এলোমেলো মনে হয়, আবার হঠাত্ করেই খানিকটা সময়ের জন্য উত্ফুল্ল হয়ে ওঠেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রসবের তিন থেকে পাঁচদিনের ভেতরেই এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে নারী দেহে হরমোনের তারতম্য, প্রসবজনিত মানসিক চাপ, মাতৃত্বের দায়িত্ববোধের উপলব্ধি—সব মিলিয়েই নারীর এই বিশেষ মানসিক অবস্থাটির সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে এর অধিকাংশই হয়ে থাকে ক্ষণস্থায়ী। কয়েকদিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত এই লক্ষণগুলো স্থায়ী হতে পারে। প্রসবপরবর্তী সাময়িক এই মানসিক অবস্থাটিকে চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘বেবি ব্লু’ বা ‘ম্যাটারনিটি ব্লু’। এ সময় নতুন মায়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সমর্থন, সহমর্মিতা আর দৃঢ়তার সঙ্গে মানসিক চাপ মোকাবিলার শিক্ষা।
উপসর্গগুলো যদি দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রয়ে যায়, তাহলে নারী আক্রান্ত হতে পারেন ‘বিষণ্নতা’ নামের মানসিক অসুখে। প্রয়োজন পড়তে পারে বিশেষজ্ঞ সহায়তার। গবেষকরা বলেন, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসূতি আক্রান্ত হন ‘পোস্ট-পারটাম ডিপ্রেশন’ বা প্রসবপরবর্তী বিষণ্নতায়। ‘বেবি ব্লু’র মতো ক্ষণস্থায়ী হয় না এ রোগ, উপসর্গগুলোও হয় তীব্রতর। প্রায় সব সময় মন খারাপ থাকে, হতাশা, অতিরিক্ত উদ্বেগ, অনিদ্রায় ভোগেন নতুন মা। দৈনন্দিন কাজকর্মে উত্সাহ হারান, মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না কোনোকিছুতে। এমনকি নিজের শখের বা পছন্দের কাজগুলো করতেও আর ভালো লাগে না। অল্প পরিশ্রম বা বিনা পরিশ্রমেই ক্লান্তি বোধ করেন। বেশিরভাগেরই খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। স্বল্পাহার বা অনাহারে থাকার ফলে কিছুদিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে ওজন কমে যায়। কেউ কেউ আবার বেশি বেশি খেতে শুরু করেন। ফলে তাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে অস্বাভাবিক হারে। অনেকেই অকারণে অপরাধবোধে ভোগেন, বিগত দিনের তুচ্ছ-প্রায় ঘটনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ফলে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিবারের সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে খোলসবন্দি হয়ে পড়েন। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিজীবন। নারী তার নিজের জীবন সম্পর্কেই এক সময় উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন, আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তি খোঁজেন।
প্রসবের ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে নারী আক্রান্ত হতে পারেন বিষণ্নতায়। যাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব ইতিহাস আছে অথবা যাদের পরিবারে কারও বিষণ্নতা আছে বা ছিল, তাদের ক্ষেত্রে প্রসবপরবর্তী বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া মানসিক চাপ, সহায়ক সামাজিক বন্ধনের অভাব, বিশৃঙ্খল দাম্পত্য সম্পর্ক, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এ ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যথাযথ চিকিত্সা না নিলে মাস থেকে বছরব্যাপী এ রোগ স্থায়ী হতে পারে। এদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে গুরুতর বিষণ্নতায় পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিষণ্ন নারী তার সন্তানের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। মায়ের বিষণ্নতার কারণে সন্তান বঞ্চিত হয় উপযুক্ত মাতৃস্নেহ ও সেবা থেকে।
তাই সন্তান জন্মের উত্সবের মাঝেও লক্ষ্য রাখুন সদ্য মা হওয়া নারীটির মানসিক অবস্থার দিকে। উপযুক্ত সমর্থন ও সহযোগিতা দিন নতুন মাকে। পরিবারের, বিশেষ করে স্বামীর এ সময়ে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। নতুন মায়েরও উচিত মনের দুঃখবোধ চাপা না রেখে স্বামী বা প্রিয় কারও কাছে তা ব্যক্ত করা, সহযোগিতা কামনা করা।
সন্তানের আগমন আনন্দের উপলক্ষ হলেও সদ্য মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া নারীদের নেতিবাচক অনুভূতির ঘটনা মোটেও বিরল নয়। বরং, গবেষকরা বলেন, প্রসবের চার থেকে ছয় সপ্তাহের ভেতর প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রসূতি আবেগজনিত সমস্যায় ভোগেন। নতুন মা অস্থিরতা বোধ করেন, অকারণেই মন খারাপ হয়ে যায়—কান্না পায়, সবকিছু কেমন যেন বিশৃঙ্খল-এলোমেলো মনে হয়, আবার হঠাত্ করেই খানিকটা সময়ের জন্য উত্ফুল্ল হয়ে ওঠেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রসবের তিন থেকে পাঁচদিনের ভেতরেই এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে নারী দেহে হরমোনের তারতম্য, প্রসবজনিত মানসিক চাপ, মাতৃত্বের দায়িত্ববোধের উপলব্ধি—সব মিলিয়েই নারীর এই বিশেষ মানসিক অবস্থাটির সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে এর অধিকাংশই হয়ে থাকে ক্ষণস্থায়ী। কয়েকদিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত এই লক্ষণগুলো স্থায়ী হতে পারে। প্রসবপরবর্তী সাময়িক এই মানসিক অবস্থাটিকে চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘বেবি ব্লু’ বা ‘ম্যাটারনিটি ব্লু’। এ সময় নতুন মায়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সমর্থন, সহমর্মিতা আর দৃঢ়তার সঙ্গে মানসিক চাপ মোকাবিলার শিক্ষা।
উপসর্গগুলো যদি দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রয়ে যায়, তাহলে নারী আক্রান্ত হতে পারেন ‘বিষণ্নতা’ নামের মানসিক অসুখে। প্রয়োজন পড়তে পারে বিশেষজ্ঞ সহায়তার। গবেষকরা বলেন, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসূতি আক্রান্ত হন ‘পোস্ট-পারটাম ডিপ্রেশন’ বা প্রসবপরবর্তী বিষণ্নতায়। ‘বেবি ব্লু’র মতো ক্ষণস্থায়ী হয় না এ রোগ, উপসর্গগুলোও হয় তীব্রতর। প্রায় সব সময় মন খারাপ থাকে, হতাশা, অতিরিক্ত উদ্বেগ, অনিদ্রায় ভোগেন নতুন মা। দৈনন্দিন কাজকর্মে উত্সাহ হারান, মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না কোনোকিছুতে। এমনকি নিজের শখের বা পছন্দের কাজগুলো করতেও আর ভালো লাগে না। অল্প পরিশ্রম বা বিনা পরিশ্রমেই ক্লান্তি বোধ করেন। বেশিরভাগেরই খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। স্বল্পাহার বা অনাহারে থাকার ফলে কিছুদিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে ওজন কমে যায়। কেউ কেউ আবার বেশি বেশি খেতে শুরু করেন। ফলে তাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে অস্বাভাবিক হারে। অনেকেই অকারণে অপরাধবোধে ভোগেন, বিগত দিনের তুচ্ছ-প্রায় ঘটনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ফলে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিবারের সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে খোলসবন্দি হয়ে পড়েন। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিজীবন। নারী তার নিজের জীবন সম্পর্কেই এক সময় উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন, আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তি খোঁজেন।
প্রসবের ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে নারী আক্রান্ত হতে পারেন বিষণ্নতায়। যাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব ইতিহাস আছে অথবা যাদের পরিবারে কারও বিষণ্নতা আছে বা ছিল, তাদের ক্ষেত্রে প্রসবপরবর্তী বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া মানসিক চাপ, সহায়ক সামাজিক বন্ধনের অভাব, বিশৃঙ্খল দাম্পত্য সম্পর্ক, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এ ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যথাযথ চিকিত্সা না নিলে মাস থেকে বছরব্যাপী এ রোগ স্থায়ী হতে পারে। এদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে গুরুতর বিষণ্নতায় পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিষণ্ন নারী তার সন্তানের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। মায়ের বিষণ্নতার কারণে সন্তান বঞ্চিত হয় উপযুক্ত মাতৃস্নেহ ও সেবা থেকে।
তাই সন্তান জন্মের উত্সবের মাঝেও লক্ষ্য রাখুন সদ্য মা হওয়া নারীটির মানসিক অবস্থার দিকে। উপযুক্ত সমর্থন ও সহযোগিতা দিন নতুন মাকে। পরিবারের, বিশেষ করে স্বামীর এ সময়ে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। নতুন মায়েরও উচিত মনের দুঃখবোধ চাপা না রেখে স্বামী বা প্রিয় কারও কাছে তা ব্যক্ত করা, সহযোগিতা কামনা করা।
ডা. মুনতাসীর মারুফ
সহকারী রেজিস্ট্রার
মানসিক রোগ বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মানসিক রোগ বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন