সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

রক্ত পরিষ্কারে প্রকৃতিই সহায়ক


একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে রক্তর পরিমাণ ৫-৬ লিটার থাকে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে নিজেদের অজান্তেই গ্রহণ করি বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান তথা টক্সিন যা রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে আমাদের দেহের কলকব্জাগুলোয় পৌঁছায় এবং সেগুলোর শারীরবৃত্তীয় কাজ করবার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। দেহে টক্সিনের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে এর প্রভাব বাড়তে থাকে, কমতে থাকে দেহের শারীরবৃত্তীয় কাজের সঠিক মাত্রা, যার ফলে দেখা দেয় নানান সমস্যা। আমাদের শরীরে তথা রক্তে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যাবার জন্য যে কারণগুলোকে
দায়ী করা যেতে পারে সেগুলো হলো: অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অবিশুদ্ধ পানি পান, কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত পরিমাণে চা-কফি গ্রহণ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। টক্সিন নামক এই বিষের প্রভাব থেকে আপনি খুব সহজে আপনার দেহ তথা রক্তকে মুক্ত রাখতে পারেন আর এজন্য আ য়ৈ নিতে পারেন কিছু খাবারের যেগুলো রক্ত-পরিষ্কারক হিসেবে চমকপ্রদ ভূমিকা রাখতে পারে। তাহলে আসুন জেনে নেই এগুলো সম্পর্কে কিছু কথা।
রসুন : শুরুতেই বলা যাক রসুনের কথা। রসুন একটি অন্যতম প্রাকৃতিক উপাদান যা একইসাথে রক্ত-পরিষ্কারক ও অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। ৩ কোয়া রসুন নিন, এগুলোকে মিহি কুচি করুন এবং এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে পান করুন। এটি দেহ থেকে টক্সিনকে বিদেয় করে আপনার রক্তকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে যা সঠিক পরিপাকে সহায়ক। আর পরিপাক যত সঠিক হবে দেহে টক্সিনের মাত্রাও ততই কমে কারণ সঠিক পরিপাকের ফলে টক্সিন উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা থাকেনা।
লেবু : এক গ্লাস কুসুমগরম পানিতে লেবু চিপে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন দিনের একদম শুরুতে। এটি আপনার রক্তে তথা পুরো শরীরেই পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে থাকে। শুধু তাই নয় এই মি ণৈটি আপনার বাড়তি ওজন কমিয়ে দেবে সহজেই। দূর করবে ক্ষুধামন্দার মত সমস্যাকে।
সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল : সবুজ শাকসবজি মানেই তাতে আছে ক্লোরোফিল। এই ক্লোরোফিল রক্তের ক্ষতিকর জীবাণুকে দূর করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন সবজি ও ফল নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে যা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া শাকসবজি ও ফলমূলে বিদ্যমান ভিটামিনসমূহ সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে অনেকখানি।
গোলমরিচ : সালাদের সাথে বা বিভিন্ন খাবারে একটুখানি গোলমরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে নিয়ে আমরা প্রায়ই খাবারের স্বাদ বর্ধনের চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু শুধু স্বাদ নয়, এই গোলমরিচের গুণ অনেক। গোলমরিচের গুঁড়ো হজমে সাহায্য করে। এটি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা খাবারের সঠিক পরিপাকের জন্য আবশ্যক। এভাবে সঠিক পরিপাককে নিশ্চিত করে এটি খুব সহজে রক্তকে বিশুদ্ধ রাখে। তবে মশলাদার খাবারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা থাকলে বা ঝাল খাওয়া বারণ হলে এটি অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।
ডালিমের খোসার গুঁড়ো : পড়তে গিয়ে নিশ্চয় একবার হোঁচট খেয়েছেন? কিন্তু কথাটা সত্যি। ডালিমের খোসা পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত গুঁড়ো করুন যতক্ষণ না এটি একেবারে মিহি পাউডারে পরিণত হয়। 
এবার প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চা-চামচ এই গুঁড়ো মিশিয়ে পান করতে পারেন নিয়মিত। এটি আপনার রক্তকে পরিষ্কার করবে, একই সঙ্গে আপনাকে কৃমি থেকেও মুক্ত রাখবে। প্রকৃতির কাছে আমাদের জন্য অনেক কিছুই আছে, শুধু প্রয়োজন একটু চোখ-কান খোলা রাখা। একটু সচেতন হলেই প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলো দিয়ে আপনি আপনার রক্তকে বিশুদ্ধ রেখে নিশ্চিত করতে পারেন সুস্বাস্থ্য খুব সহজেই। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন সবসময়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন