সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

মলদ্বারের সমস্যা-১ "কোষ্ঠকাঠিন্যতা" বা CONSTIPATION



আমাদের জীবনে খুবই common একটি সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিন্যতা। কিন্তু অনেকসময় আমরা একে খুবই সাধারণ অসুখ ভেবে অবহেলা করে থাকি যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘস্থায়ী শারিরীক ও মানসিক ক্ষতির পরিনাম বয়ে নিয়ে আসতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যতা কী???

খুব সাধারনভাবে বলতে গেলে পায়খানা কষে যাওয়া কে কোষ্ঠকাঠিন্যতা বলে। সাধারনত সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ ত্যাগ করা অথবা এত শক্ত আর শুষ্ক মল যে তা মলদ্বার থেকে বের করাই কষ্টকর সাথে রোগী তার পেটের মধ্যে নানারকম অস্বস্তি বোধ করাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগটি Constipation নামে পরিচিত।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা কেন?
মুলত কোষ্ঠকাঠিন্যতা আমাদের পরিপাকজনিত ও অন্যান্য কিছু রোগের পরিনতিতে দেখা দিতে পারে।
খাদ্য গ্রহন জনিতঃ খাদ্য তালিকায় আঁশ জনিত খাদ্যের অভাব
 প্রতিদিন খুবই অল্প মাত্রায় বা পানি ও তরল জাতীয় খাবার না খাওয়া।
পরিপাকতন্ত্রীয় রোগসমূহ যেমনঃ
 Irritable bowel syndrome
 Chronic intestinal pseudo obstruction
 Diverticular Disease
 Hirschsprung’s disease
 Colonic Carcinoma
 Intestinal Obstruction
 কোলোন ও রেক্টাম এ সমস্যা
মলত্যাগ জনিত সমস্যাঃ
 মলদ্বারে obstruction
 পাইলস
 Crohn’s disease

ওষুধ জনিত কারনঃ
 Anticholinergics medicine
 Opiates
 Iron supplements
 Calcium antagonists
 Aluminium containing antacids


হরমোন ও বিপাকীয় সমস্যা যেমনঃ
 বহুমূত্র রোগ বা Diabetes Mellitus
 Hypercalcaemia
 Hyperthyroidism
 গর্ভাবস্থা

Neurological ও মানসিক রোগ সংক্রান্তঃ
 Multiple Sclerosis
 Spinal cord lesions
 Parkinsonism
 Stroke and Cerebrovascular accidents
**(Depression, Anxiety, Tension, Fear ইত্যাদি )
**এছাড়াও আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যদি আপনি_______
 আপনার বয়স ৪০ এর উর্ধে হয়
 সবসময় উপবিষ্ট হয়ে শুয়ে থাকেন বিছানায়
 প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় হঠা ৎ পরিবর্তন
 দীর্ঘদিন ধরে বমি ও ডায়রিয়া চলতে থাকলে
 দীর্ঘ ভ্রমন জনিত দুর্বলতা
 অনিয়ন্ত্রিত ভাবে laxatives ওষুধের ব্যবহার
 পায়খানা আসলে সেটা উপেক্ষা করা বা চেপে যাওয়া
 দীর্ঘদিন ধরে কোন শারীরিক কাজকর্ম না করা এক জায়গায় সবসময় উপবিষ্ট থাকা।

কিভাবে বুঝবেন আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত?
মনে করুন আপনার পরপর দুই তিনদিন পায়খানা হল না তার মানে এই না যে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত। নিচের কমপক্ষে দুইটি লক্ষণ যদি গত ছয় সপ্তাহ বা তিন মাস ধরে ক্রমাগত চলতে থাকে বুঝবেন আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত?
 তিন সপ্তাহ ধরে আপনার পায়খানা না হওয়া
 পায়খানা যদি খুবই শক্ত ও শুষ্ক হয়
 পায়খানা করার সময় খুবই চাপ প্রয়োগ করতে হয়।
 আপনার পুরাপুরি মলত্যাগ হয় নাই এরকম একটা অনুভূতি সবসময় কাজ করলে
 যদি আপনি অনুভব করেন মলত্যাগে মলদ্বারে কোন বাধা
উপরোক্ত লক্ষণগুলোর সাথে নিচের লক্ষণ গুলো থাকতে পারেঃ
 প্রচণ্ড তলপেটে ব্যাথা
 পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
 মলদ্বারে ব্যাথা
 চিকন পেন্সিল এর মতো পায়খানা বের হওয়া
 কোষ্ঠকাঠিন্যতার সাথে হঠাৎ করে ডায়রিয়া শুরু হওয়া।
চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ
আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ ঘটনায় খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ স্টাইল এ পরিবর্তন এনে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান সম্ভব হয়। খুব অল্প ক্ষেত্রেই মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট এর দরকার পড়ে।
 প্রতিদিন আঁশ যুক্ত খাবার যেমন কম মিহি সাদা রুটি, শাকসবজি, তরিতরকারী,বেল,পেঁপে, বেশী করে খাওয়া
 প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি খাওয়া
 অনিয়মিতভাবে খাবার না খেয়ে নির্দিস্ট সময়ে খাবার গ্রহন করা।
 প্রতিদিন exercise করা
 প্রতিদিন রাতে ১ গ্লাস ইসুবগুলের ভূষির শরবত খেতে পারেন।
 পায়খানা আসলে সেটা চেপে না রাখা বা উপেক্ষা না করা।
এছাড়াও Syrup Inolac বা Syrup Conlax ২ চামচ সকালে ১ বার করে সাত দিন খেতে পারেন।
( বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই চিকিৎসা কেবলমাত্র প্রাইমারি লেভেলের ও ** চিহ্নিত কারনসমুহের জন্যে। যদি এরপরও আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর না হয় কিংবা যদি অন্য কোন রোগের কারনে কোষ্ঠকাঠিন্যতা হয়ে থাকে সেজন্য অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 


 কৃতজ্ঞতাঃ কাজী রমি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন