ব্যাথা রোগের উপসর্গ।রোগের যে সমস্ত উপসর্গ সম্ভব তার মধ্যে ব্যাথা হল সবচে বেশি।ব্যাথা আছে বলেই আমরা বুঝতে পারি অসুখ বিসুখ, ডাক্তার ডাকি চিকিৎসা করাই।ভাবুন তো ব্যাথা না থাকলে কি হত? হাত পুড়ে গেলো টের পেলেন না, হাতে ইনফেকশান হয়ে হাত অকেজো অথচ ব্যথা নেই চিকিৎসা করার প্রয়োজন টুকু ও অনুভব করলেন না।সুতরাং ব্যাথা কষ্টকর হলেও শরীরের জন্য উপকারী।আবার ব্যাথা উপকারী হলেওকিন্ত কষ্টের কারন ও বটে।ফাইব্রোমায়ালজি্যা হল ব্যাথার রোগ,রোগী কষ্ট পান ব্যাথার জন্য।গায়ে হাতে, পায়ে সারা শরীরে ব্যাথা আর ব্যথা।
ফাইব্রোমায়ালজিয়া কথাটা এসেছে ফাইব্রো্+মায়া+ অ্যালজিয়া থেকে।ফাইব্রো=
ফাইব্রাস টিস্যু বা তন্তু কলা, মা্য়া=মাসল বা মাংশপেশী,আর অ্যালজিয়া = পেইন বা ব্যাথা ।সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে শরীরের মাংশপেশী এবং তন্তুকলা, যেমন টেন্ডন, লিগামেন্ট,ইত্যাদিতে ব্যাথার রোগ এটি।ফাইব্রোমায়ালজিয়া কথাটা এসেছে ফাইব্রো্+মায়া+ অ্যালজিয়া থেকে।ফাইব্রো=
অনেকদিন বিতর্ক চলেছে ।অবশেষে বিঞানীরা একমত হয়েছেন রোগটি সম্পর্কে।আমেরিকান কলেজ অফ রিউমাটোলোজি হল আমেরিকাতে বাত রোগের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আর তারাই এই রোগটির নিরুপন ও চিকিৎসা সম্পর্কে নিদৃষ্ট ধারনা দিয়েছেন।
নামটা অপরিচিত হলেওঅনেকেই কিন্তু এই রোগে ভোগেন। আমেরিকার পরিসংখ্যান মতে সে দেশের ২-৩% ভাগ লোক এই রোগে ভুগে থাকেন।সে হিসেবে আমাদের দেশের ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ লক্ষ লোক এই রোগের রুগী- নিতান্ত হেলা ফেলার নয়।
ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগের বিস্তারিত
ফাইব্রোমায়ালজিয়া দুই প্রকার:প্রা্ইমারি এবং সেকেন্ডারি।
সেকেন্ডারি ফাইব্রোমায়ালজিয়া তে অন্য রোগ যেমন মাইগ্রেন,মাসিকে অত্যধিক ব্যাথা(Dysmenorrhoea), রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস ইত্যাদি এই রোগের সাথে থাকে। দুটোর ই চিকৎসা করা দরকার ভাল ফল পেতে।
কারন:-- সঠিক কারন জানা না গেলেও রোগটি যে মস্তিষ্কের অনুভুতি বেড়ে যাওয়ার কারনে হয় তা নিশ্চিত। ব্যাথা অনুভুতি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে মস্তিষ্কে যাওয়ার পর তার বিশ্লেষন হয়, কোথায় ব্যাথা? কতটুকু ব্যাথা, কি ধরনের ব্যাথা, কারন কি হতে পারে ইত্যাদি।অনুভুতি ব্রেইনে গিয়ে উপস্থিত হয় নার্ভের মাধ্যমে।একটা নার্ভ অনুভুতি পৌছে দেয় আরেক নার্ভকে অনেকটা রিলে রেস এর মত।আর এই ব্যাথা অনুভুতি বেড়ে যায় মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন সাবস্ট্যান্স পি, গ্লুটামেট(SubstanceP, Glutamate) এর হেরফেরের কারনে।আর এই কমা বা বেড়ে যাওয়া রাষায়নিক পদার্থকে স্বাভাবিক অবস্থাতে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ই এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
কাদের এই রোগটি হয়?
লিংগ:- দশ জনের মধ্যে নয় জন রোগি ই মহিলা অর্থাৎ মহিলাদের মধ্যে নয় গুন বেশি হয় রোগটি।
বয়স: জীবনের মধ্য বয়সে ৩০- থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশী
নিদ্রাহীনতা, দুশ্চিন্তা,অবসাদ,অত্যধিক কাজের চাপ,ক্লান্তি ইত্যাদি ও এই রোগের কারনগুলোর অন্যতম।
উপসর্গ:-আগেই বলেছি সারা শরীরে ব্যথা এই রোগের প্রধান উপসর্গ। ব্যাথার সাথে জড়তা, ভালো ঘুম না হওয়া,অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত অনুভব করা ,
ইত্যাদি।
লক্ষন:- রোগটির লক্ষন বা সাইন কিছু নেই। হাড় ,জয়েন্ট, মাংশ পেশী সবই স্বাভাবিক, কোনো গিঠ ফোলা থাকে না।শরীরের নিদৃষ্ট কিছু "পয়েন্ট" এ চাপ দিলে রোগী ব্যাথা অনুভব করেন।
ডাক্তারী বা রক্ত, প্রস্রাব ,X-Ray পরীক্ষা নিরীক্ষা সব কিছুই স্বাভাবিক।
যেহেতু পরিক্ষা নিরীক্ষা করে কিছুই পাওয়া যা্য না অনেকে চিন্তা করতেন রোগটি মানসিক।
রোগ নির্নয় করা হয় উপসর্গের ভিত্তিতে।শরীরের বাম ডান উভয় দিকে, প্রতিদিকে নয় টি করে মোট আঠার টি পয়েন্টের মধ্যে এগার টা তে ব্যাথা, শরীরে কোমোরের উপর এবং নীচ উভয় অংশেই , ৩মাসের অধিক কালের ব্যাথা এই রোগের ডায়াগনোসিসের ভিত্তি।Blood:-Routine examination, R/A test, CRP, Anti-CCP,ANA, LFT, S Cretinine,Urine:-Routine, পরীক্ষা গুলো করে অন্য কোন প্রকার বাত রোগ আছে কিনা দেখা যেতে পারে।প্রয়োজন বোধে আরো অন্যান্য পরিক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে কোন প্রকার রোগের অস্তিত্ব নেই।
চিকিৎসা:- সবচে প্রথম হল ডায়াগনোসিস। চিকিৎসার ফলাফল সব সময় আশাব্যন্জক নয়।সেই হিসেবে রোগটি কঠিন বটে।
ব্যায়াম হল চিকিৎসার গুরুত্ত্ব পুর্ন অংশ। অনেকের ব্যায়াম করলে ব্যাথা বেড়ে যায়,সে ক্ষেত্রে যে ব্যায়ামে ব্যাথা বাড়ে না যেমন সাতার কাটা -এ গুলো চেষ্টা করা যেতে পারে।ব্যায়াম করতে হবে সহ্যের মধ্যে। অল্প মাত্রা দিয়ে শুরু করে বাড়াতে হবে, সপ্তাহে অন্তত্ঃ পা্চঁ দিন ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট জোরে হাটা বা হাটার সম পরিমান ব্যায়াম করতে হবে।
ঔষধ:-প্রচলিত ব্যাথার ঔষধ যেমন : ডাইক্লোফেন(Diclofen), ন্যা্প্রোক্সেন(Naproxen), ইত্যাদি বেশী ফলদায়ক নয়।
অন্যান্য ঔষধ : অবসাদ নিরাময় কারী ঔষধ যেমন: অ্যামিট্রিপটাইলিন(Amitryptiline), নরট্রিপটাইলিন(Nortryptiline) বেশ কার্যকর।যেহেতু মানসিক রোগ অবসাদ(Depression) এর ঔষধ (Tricyclic antideperssants)এই রোগে ফলদায়ক অনেকে এটা কে মানসিক রোগ চিন্তা করতেন।ধারনা টা ভুল।
আমেরিকার ফুড এবং ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশান (FDA- Food and Drug adminsitration)ইদানিং অধিক কার্যকর কিছু ঔষধের অনুমোদন দিয়েছে। সেগুলো হল প্রিগ্যাবালিন(Pregabalin),ডুলোক্সেটিন(Duloxetin),মিলনাসিপ্রান(Milnacipran) । ঔষধ গুলো দামী।
সাইক্রিয়াট্রি চিকিৎসা:- রোগীর শিক্ষা:-রোগটি সম্পর্কে ধারনা দিতে হবে রোগিকে।রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে রোগটি থেকে বড়ো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।কগনিটিভ বিহেবিয়ারাল থেরাপী,সাইকোথেরাপি ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ন।আনুসংগিক দুষ্চিনতা অবসাদ এর চিকিৎসা ও করতে হবে।
রোগটির ভালো দিক হল:- এই রোগ থেকে কোন অংগের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।পংগু বা অচল হয়ে যাওয়ার ভয় একেবারে নেই।
খারাপ দিক হল:- রোগটি পুরোপুরি সারে না অনেক ক্ষেত্রে।
বাত ,ব্যাথা রোগের যে কোনো পরামর্শের জন্য মেইল করতে পারেন
birendra@hotmail.com
Prof(retd) Dr. Birendra Nath Bhattacharjee
MBBS,FCPS(Physical Medicine), MS(Orthopedic surgery)
Prof(retd) Dr. Birendra Nath Bhattacharjee
MBBS,FCPS(Physical Medicine), MS(Orthopedic surgery)
আমার স্ত্রীর বয়স ২২-২৩ বছর, ওর মাঝে মাঝে, সারা গায়ে প্রচন্ড ব্যাথা, চোখ জ্বালা পুড়া, মাথা ব্যাথা, এবং সেই সাথে জ্বর(জ্বর কখনও বাড়ে কখনও কমে) হয়। কিন্তু কেন এরকম হয়, আর এর চিকিৎষা কি? জানালে খুব কৃতঙ্গ থাকবো ।
উত্তরমুছুন