মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৪

পুরুষের উরুর সংযোগস্থলে অস্বস্তিকর চুলকানিঃ জানুন এর কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে

cure_jock_itch (6)
রাস্তায় প্রায়ই কিছু ভ্রাম্যমাণ ওষুধ বিক্রেতা দেয়া যায়, যারা হাজারো রোগের ওষুধের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট রোগের ওষুধ বিক্রি করে। আর তা হচ্ছে চুলকানির ওষুধ। এই চুলকানির ওষুধ বিক্রেতার সামনে বেশ বড় মাপের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যদিও খুব মানুষই ওষুধগুলো কিনেন, কিন্তু আগ্রহের কমতি থাকে কারো মধ্যেই। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন কোন ধরণের চুলকানির কথা বলা হচ্ছে।
দুই রানের বা উরুর মধ্যবর্তী স্থানে অস্বস্তিকর চুলকানিতে আক্রান্ত হন অনেক মানুষই। সাধারণত আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি থাকে। এই চুলকানিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হয় “জক ইচ” (Jock itch) বা “টিনিয়া ক্রুরিস” (tinea cruris)
এই লেখায় আমরা জানবো “জক ইচ” বা “দুই রানের বা উরুর মধ্যবর্তী স্থানে চুলকানি” কেন হয়, লক্ষণ ও ঘরে বসেই কিভাবে এর প্রতিকার করা যায় সে সম্পর্কে।

“জক ইচ” কি? (what is jock itch)

জক ইচ বা টিনিয়া ক্রুরিস এক প্রকার রিং ওয়ার্ম বা দাদ। তবে এটি কিছুটা আলাদা ধরণের। সাধারণ চামড়ার বাইরের অংশে, নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে এই রোগটি দেখা যায়। চামড়ার উপরিভাগে লাল বা খয়েরি রঙের র‍্যাশ দেখা যায় যা পানি ভর্তি থাকে, প্রচণ্ড চুলকায় এবং জ্বালাপোড়া হয়। এই রোগটি শরীরের কোন একটি অংশে হলে অন্যান্য অংশেও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া এটি বিভিন্নভাবে অন্যের শরীরেও ছড়িয়ে যায়। 
cure_jock_itch (4)

“জক ইচ” কেন ও কিভাবে হয় (what causes jock itch)

জক ইচ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ফাঙ্গাস। চামড়ার উপরিভাগেই ছত্রাক আক্রমণ করে থাকে। আমাদের শরীরের আর্দ্র স্থান যেমন কটিসন্ধি, উরু বা রানের সংযোগস্থল এবং নিতম্বে এই ফাঙ্গাস/ছত্রাক বেশি জন্মায়। সাধারণত শরীরের এই স্থানগুলোতে ঘাম বেশি হয়, তৈলাক্ত থাকে ফলে ফাঙ্গাস তার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে যায়। 
cure_jock_itch (5)
নারী ও পুরুষ উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হন, তবে নারীদের রোগের ধরন ও প্রতিকারের পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন, যা পরবর্তী লেখায় বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
এই রোগের ভাইরাস বিভিন্নভাবে এক শরীর থেকে অন্য শরীরের ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যবহৃত পোশাক, পানি, বিছানা ইত্যাদি এর বাহক হিসেবে কাজ করে।

লক্ষণ (symptoms)

আপনার জক ইচ আছে কি না বুঝে নিন এই লক্ষণগুলো দেখে-
১. উরুর সংযোগস্থল ও নিতম্বে তীব্র চুলকানি ভাব অনুভূত হওয়া 
cure_jock_itch (6)
২. লাল বা খয়েরি রঙয়ের র‍্যাশ ও পানি ভর্তি ফুসকুড়ি দেখা দেয়া
৩. চুলকানোর পর এই পানি ভর্তি ফুসকুড়িগুলো ফেটে যাওয়া
৪. আক্রান্ত স্থানে পানি লাগলে জ্বালাপোড়া করা
৫. আক্রান্ত স্থান কালো এবং শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

কিভাবে এ থেকে মুক্তি পাবেন (how is jock itch treated)

জক ইচ থেকে সাধারণত ঘরোয়া পদ্ধতিতেই মুক্ত পাওয়া যায়। কিছু ওষুধ রয়েছে যা বিনা প্রেসক্রিপশনেই আপনি যে কোন ফার্মেসিতে পেয়ে যাবেন। আমি ধীরে ধীরে সাধারণ সতর্কতা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রতিকারগুলো বর্ণনা করছি।
১. চুলকানির স্থান প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। কোন অবস্থাতেই অপরিষ্কার থাকা যাবে না। গোসলের সময় জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে আক্রান্ত স্থান ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন, এবং অবশ্যই লক্ষ্য রাখুন সাবানটি যেন আপনার পরিবারের অন্য কোন সদস্য ব্যবহার না করে। নাহলে তারাও এতে আক্রান্ত হবে।
২. প্রতিদিন পরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হচ্ছে সপ্তাহের ৭ দিনের জন্য ৭টি অন্তর্বাস কিনে নিন। প্রতিদিন নতুন অন্তর্বাস পরুন। সম্ভব না হলে একদিন ব্যবহারের পরেই অন্তর্বাস ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখুন।  
৩. চুলকাবেন না। যত বেশি চুলকাবেন ততই তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়া এটি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে, ফলে জনসমক্ষে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হবে। 
cure_jock_itch (1)
৪. আক্রান্ত স্থান যথা সম্ভব শুষ্ক রাখার চেষ্টা করুন
৫. সুতির অন্তর্বাস পরিধান করুন
৬. প্রতিদিন আক্রান্ত স্থানে এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করুন যাতে terbinafine, miconazole, বা clotrimazole উপাদানগুলো আছে। ফার্মেসিতে গিয়ে Lamisil, Lotrimin, Micatin, বা Monistat নামের ক্রিমের খোঁজ করুন। একই নামের না পেলেও একই কাজ করে এমন ক্রিম পেয়ে যাবেন। ক্রিমের গায়ে লেখা ব্যবহার বিধি অনুসরণ করুন। 
cure_jock_itch (7)
৭. ২-৩ সপ্তাহের ভেতর অবস্থার উন্নতি না হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন