শীতকালে যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে জন্য গরম কাপড় পরতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে। শীতকালে গলায় ব্যথা হলে টনসিলের তীব্র প্রদাহ হতে পারে। তীব্র প্রদাহের জন্য গলাব্যথা, জ্বর এবং ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। যদি ভাইরাসজনিত হয় তাহলে লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া করলে এবং প্যারাসিটামল খেলে ভালো হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত টনসিল প্রদাহ হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অনেক সময় ঠাণ্ডা লেগে কণ্ঠনালিতে ইনফেকশন হতে পারে বা গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন এবং মেন্থলের ভাব নেওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগলে শিশুদের শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে এমনকি নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শিশুদের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। শিশুদের নাকের পেছনে এক ধরনের টনসিল থাকে, যাকে এডিনয়েড বলা হয়। এডিনয়েড বড় হয়ে গেলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক বন্ধ হয়ে গেলে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। তাই রাতে শিশুরা মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয়। এডিনয়েড অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং রাতে ঘুমের সময় নাক ডাকে। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এডিনয়েডজনিত কারণে শিশুদের মধ্যকর্ণে পানি জমে যেতে পারে। তখন শিশুরা কম শুনতে পায়। ফলে দেখা যায় শিশুরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে এবং রেডিও-টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের সমস্যা হলে নিকটস্থ নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোনো রকম এলার্জেন যেমন_ ধুলাবলি, গাড়ির ধুয়া, নাকে ঢুকে যায় তাহলে নাকে অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ হতে পারে। এতে নাকে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে এবং যে কারণে নাকে সর্দি অ্যালার্জি হয় তা থেকে দূরে থাকলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সাধারণত দীর্ঘদিন নাকে অ্যালার্জি থাকলে নাকে পলিপ হতে পারে। পলিপ দেখতে আঙুর ফলের মতো দেখায়। নাকের পলিপে নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং সঙ্গে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে। এ সমস্যার চিকিৎসা হলো অপারেশন। প্রচলিত নিয়মে অপারেশনে আবার পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আধুনিক এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারির মাধ্যমে সফলভাবে অপারেশন করা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে বড় বড় হাসপাতালে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারি নিয়মিত হচ্ছে। শীতকালে নাকের দুই পাশের সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়, যাকে সাইনুসাইটিস বলা হয়। সাইনুসাইটিস এর জন্য নাকের দু'পাশে ব্যথা এবং মাথাব্যথা হতে পারে। সাইনাসের এক্স-রে করলে রোগ নির্ণয় করা যায়। তীব্র অবস্থায় ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। দীর্ঘমেয়াদি সাইনাস প্রদাহে ওয়াশ এবং শেষ পর্যায়ে এন্ডোস্কপিক সাইনাস সার্জারি লাগতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন