'কুষ্ঠ'_ না ভয়ে আঁতকে ওঠার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার যুগে আমরা কুষ্ঠকে পরাজিত করতে পেরেছি। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, আজও এ বিষয়ে আশানুরূপ সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। এখনও অনেকে কুষ্ঠকে অনিরাময়যোগ্য মনে করেন। ফলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকে চিকিৎসা নেন না। অন্যদিকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অনেকের ধারণা, সৃষ্টিকর্তা কোনো পাপের ফল হিসেবে মানুষকে এ রোগ দেন। ফলে কুষ্ঠ রোগী সম্পর্কে অনেকে অস্পৃশ্যতার মনোভাব পোষণ করেন। কুষ্ঠ রোগীকে আজও অনেক সমাজ উপেক্ষা করে, হেয় করে এবং এড়িয়ে চলে। ফলে ভারত, চীন, রোমানিয়া, মিসর, নেপাল, সোমালিয়া, লাইবেরিয়া, ভিয়েতনাম ও জাপানে কুষ্ঠ রোগীদের বহু কলোনি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ওইসব দেশের তুলনায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃতভাবে বেশ কম। এখানে কুষ্ঠ রোগীদের আলাদা কলোনি নেই। তবে এখানেও কুষ্ঠ রোগীকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না আজও। এ কারণে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েও অনেকে তা গোপন করেন, চিকিৎসা নেন না। আর এটিই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে কেউ চিকিৎসা নিয়ে রোগমুক্ত হওয়ার পরও সমাজ সহজে তাকে গ্রহণ করে না, করতে চায় না। এসব সমস্যা দূর করতে কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলো সবার কাছে পেঁৗছে দিতে হবে। সত্যগুলো হচ্ছে :
১. কুষ্ঠ রোগ কোনো পাপের ফলে হয় না।
২. এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য একটি রোগ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের মাত্রাভেদে ওষুধ সেবন করলে সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব।
৩. এটি একটি সংক্রামক রোগ। কিন্তু এজন্য রোগীকে আলাদা করে রাখা বা আলাদা কোনো কলোনিতে পাঠানোর দরকার নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বনই যথেষ্ট। যেমনটি যক্ষ্মা, এইডস প্রভৃতি সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে করা হয়।
আরও যা করা উচিত
লেপার্স অ্যাক্ট ১৮৯৮ বাতিল করতে হবে। এ আইনের মাধ্যমে কুষ্ঠ রোগীকে গ্রেফতার করে সমাজের অন্য মানুষের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হতো। বর্তমানে আইনটি প্রয়োগ হয় না। তবু এটি বাতিল করে কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে রাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। কারণ এ আইন বাতিল হয়েছে, এমন বার্তা কুষ্ঠ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে।
কুষ্ঠ রোগীকে উপেক্ষা করলে, অস্পৃশ্য হিসেবে আখ্যায়িত করলে, সমাজচ্যুত করলে বা করার চেষ্টা করলে তা হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ সংক্রান্ত আইন করতে হবে। যাতে রোগী এ ধরনের পরিস্থিতির স্বীকার হলে আইনের সাহায্য নিতে পারেন।
আমরা মাদার তেরেসার কথা স্মরণ করতে পারি। তিনি ও তার গড়া প্রতিষ্ঠান 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি' আজীবন যেসব সেবামূলক কাজ করেছে তার অন্যতম কুষ্ঠ রোগীদের সেবাদান ও চিকিৎসা প্রদান। এ সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতায় বলেছেন, 'প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা আছেন। আমি যখন কোনো কুষ্ঠ রোগীর ক্ষত পরিষ্কার করি, তখন অনুভব করি আমি যেন স্রষ্টারই সেবা করছি। এর চেয়ে সুখময় অনুভূতি আর কী হতে পারে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন