
সাধারণত নবজাতকের চার থেকে আট মাসের মধ্যে দাঁত উঠতে শুরু করে। আস্তে আস্তে পুরো মাড়ির দাঁত উঠে যায়। পরে এসব দাঁতের স্থানে ৬-৮ বছরের স্থায়ী দাঁত ওঠে।
জন্মের পর থেকেই শিশুর দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিতে হবে। প্রথমদিকে প্রতিবার দুধ বা অন্য কিছু খাওয়ার পর পরিষ্কার আঙুল বা পাতলা কাপড় দিয়ে মুখের ভেতরে, মাড়ি ও দাঁত পরিষ্কার করে দিতে হয়। শিশুকে বোতলের দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। এতে শিশুর দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। রাতে বোতলের দুধ না খাইয়ে শেষ খাওয়ার পর বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে পারেন। এতে দাঁত ভালো থাকে।
শিশুর দাঁত উঠতে শুরু করলে মাড়িতে কিড়মিড় করে, অস্বস্তি লাগে বা ব্যথা করে। এজন্য নরম কিছু কামড়াতে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে এমন নরম কিছু দিন, যাতে দাঁত ধারালো হয়। গরম পানিতে এসব ধুয়ে দিলে জীবাণুমুক্ত থাকবে, ডেটল বা স্যাভলনও দেওয়া যেতে পারে। ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে ধোয়ার পর গরম পানি দিয়ে ধুলে তাও ভালো কাজে দেবে। খেয়াল রাখতে হবে, এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র কোনো বস্তু যেন দেওয়া না হয়। ক্ষুদ্র বস্তু গলায় আটকে শিশুর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পার।
শিশুর বয়স এক থেকে দেড় বছর হলেই তাকে দাঁত ব্রাশ করা শেখাতে হবে। সন্তানকে পাঁচ-সাত বছর বয়স পর্যন্ত নিজের সঙ্গে নিয়েই ব্রাশ করান, এতে তার অভ্যাস গড়ে উঠবে। শোবার আগে ও সকালের নাশতার পর ব্রাশ করা ভালো। লক্ষ্য রাখবেন, ব্রাশ যাতে নরম থাকে। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি দাঁতের আবরণ এনামেল গঠনে সাহায্য করে। খেয়াল রাখতে হবে, সন্তান যেন টুথপেস্ট খেয়ে না ফেলে। একটু-আধটু খেলে সমস্যা নেই কিন্তু নিয়মিত খেলে দাঁতে ছোট ছোট দাগ হয়ে দাঁতগুলো কদাকার দেখায়।
পাঁচ-ছয় বছরের নিচে ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই ভালো। এসএলএস সমৃদ্ধ টুথপেস্ট থেকেও সাবধান, এগুলো মুখের ক্ষতের জন্য দায়ী। আপনার সন্তানকে শুধু দাঁত ব্রাশ করালেই হবে না, এর নিয়ম-কানুনও জানাতে হবে। যেমন_ ব্রাশ করার সময় শুধু সামনের দাঁতগুলো ব্রাশ করলে হবে না, সব দাঁতই ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশ করার সময় জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে।
শিশুর দাঁতের প্রধান শত্রু চকোলেট, চুইংগাম, মিমি। এসব মিষ্টিজাতীয় খাবারে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। দাতের মাড়ি ছিদ্র হয়ে যায়। তাই এসব পরিহার করতে হবে। প্রতিবার মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণের পর দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। দাঁতের যত্নে ফলমূল, শাকসবজি, পর্যাপ্ত পানি ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কেমিক্যাল, সুগন্ধি ও মাউথওয়াশ ব্যবহার না করা ভালো, এতে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
এত কিছুর পরও দুধদাঁতের কোনো সমস্যা হলে অভিজ্ঞ দন্তচিকিৎসকের (ডেন্টিস্ট) পরামর্শ নেওয়া ভালো
সন্তানের বয়স এক বছর হলেই তাকে নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখাতে হবে। এভাবে বছরে অন্তত দু'বার ডাক্তার দেখানো উচিত।
শিশুর দুধদাঁত নড়ে গেলে তা টেনে তোলা উচিত নয়। হালকা নড়লে যদি উঠে যায় তো ভালো, নয়তো নিকটস্থ ডেন্টিস্টের কছে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। পড়ে যাওয়া দাঁত মাটিতে পুঁতে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গে সুন্দর দাঁতের কোনো সম্পর্ক নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন