বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১২

স্মৃতিশক্তির সমস্যা ‘ডিমেনশিয়া’


ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক পর্যায়
ডিমেনশিয়ার রোগে সমস্যা একেকজনের একেক রকমের হয়ে থাকে এবং একেকজনের রোগের বা সক্ষমতার অবনতির গতি হয়ে থাকে একেক রকমের। ডিমেনশিয়ার রোগীর সামর্থ্য বা সক্ষমতা দিনের পর দিন পরিবর্তিত হতে পারে অথবা এমন কি একই দিনে একেক রকমের আচরণের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। নিশ্চিত বিষয় হলো ডিমেনশিয়া রোগীর সক্ষমতার অবনতি কোনো কোনো সময় খুব দ্রুত সংঘটিত হয়­কয়েক মাসের মধ্যে আবার অন্য ক্ষেত্রে, খুব ধীরগতিতে পরিবর্তিত হয়­এতে কয়েক বছরও লেগে যায়।


ডিমেনশিয়ার রোগের পর্যায়
ডিমেনশিয়া রোগের বৈশিষ্ট্য সাধারণত ৩টি স্টেজে বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়। তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, রোগের সবগুলো বৈশিষ্ট্যই প্রতিটি রোগীর বেলায় সমানভাবে উপস্খিত থাকে না। আবার প্রতিটি রোগীই রোগের প্রতিটি পর্যায় বা স্টেজ অতিক্রম করে না। তবে ডিমেনশিয়া রোগের অগ্রগতির দরকারি বর্ণনা পাওয়া যায় রোগের স্টেজের সহযোগিতায়।

প্রাথমিক ডিমেনশিয়া
প্রায়ই এই পর্যায়টি দৃষ্টির আড়ালে থাকে। এটা প্রায়ই অদৃশ্যে থেকে যায় অথবা বেশি বয়স বা বেশি কাজের আড়ালে প্রাথমিক ডিমেনশিয়া ঢাকা পড়ে যায়। ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত সাধারণত আস্তে আস্তে হয়, অনেক সময় এর সূত্রপাত খুবই আস্তে আস্তে হয় এবং এটি প্রায়ই শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে ওঠে যে কোন সময় এ রোগটি শুরু হতে পারে। ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক স্টেজে ব্যক্তি­

 একটু বেশি উদাসীন হয়

 ব্যক্তির মাঝে কম উজ্জ্বলতা থাকে

 শখের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে

 তৎপরতা হন্সাস পায়

 কোনো নতুন কিছু করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না

 পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না

 বিচার-বিবেচনাবোধ কমে যায়

 মন্দ সিদ্ধান্ত নেয়

 জটিল ধারণা বা চিন্তা-ভাবনায় আগের চেয়ে ধীর হয়ে যায়

 দৈনন্দিন কাজ করতে বেশি সময় নেয়

 জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার কারণে অন্যদের দোষ দিতে থাকে। দেখা যায় ডিমেনশিয়ার রোগী রোগের কারণে স্মরণশক্তি হারিয়ে ফেলে বা তার স্মরণশক্তি কমে যায়, এতে করে তিনি কোন জিনিস কোথায় রেখেছেন বা কোথাও ভুলে রেখে এসেছেন, এসব কথা আর মনে থাকে না বা মনে করতে পারেন না, কিন্তু পরে যখন তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না তখন তিনি অন্যদের বকাঝকা করতে থাকেন। কারণ তিনি সে সময় মনে করেন যে তার জিনিসপত্র কেউ সরিয়ে ফেলেছে অথবা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে অনেক সময় ডিমেনশিয়ার রোগী রেগে ওঠে। অনেক সময় রাগের কারণে রোগীর মাঝে এক ধরনের উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়। আর এ উত্তেজনার কারণে রোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে কোনো কোনো সময় ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ তার নিজের ভুলে যাওয়া সমস্যার কারণে যে এমনটি হচ্ছে রোগী তা বুঝতে পারে না।

 রোগী বেশি মাত্রায় নিজেকে নিয়ে বা নিজের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অন্যদের ব্যাপারে বা অন্যদের অনুভূতির ব্যাপারে সচেতন হয়ে পড়েন। ফলে কোনো কোনো সময় ডিমেনশিয়ার রোগী­

 সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি খেয়াল রাখে না।

 বাড়ির কোনো প্রয়োজনীয় ব্যাপারে সজাগ থাকে না

 পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না।

 কারো কোনো ব্যাপারে কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে চায় না।

 পারিবারিক অর্থনৈতিক সাহায্যের কথা মনে থাকে না।

 ডিমেনশিয়ার রোগী খুব বেশি ভুলোমন হয়ে যায় এবং সাম্প্রতিক সময়ের কথাও ভুলে যান। যেমন­তার নিজের বা স্ত্রীর জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর কথা ভুলে যান। আবার দেখা যায় কয়েক সপ্তাহ আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সেই বিয়েতে কত রকমের কত দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এসব কথা তিনি পুরোপুরি মনে করতে পারেন না।

আবার ডিমেনশিয়ার রোগী এমন ভুলোমনের হয়ে যান যে ফোন করার জন্য মোবাইল হাতে নিল কিন্তু পরক্ষণেই ভুলে গেল যে কার কাছে ফোন করবে বা কোন নাম্বারে ফোন করবে।

 ডিমেনশিয়ার রোগী কোনো কোনো সময় একই কথা বারবার রিপিট করতে থাকে। আবার তাদের কথার সূত্র হারিয়ে ফেলে, দেখা যায় কথা বলছে কিন্তু কী নিয়ে, কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছে তা থেকে থেকে ভুলে যায়।

 খুব বেশি খিটখিটে হয়ে যায়­ডিমেনশিয়ার রোগী আগের চেয়ে বেশি খিটখিটে হয়ে যায়। সামান্য ব্যাপারেই বিরক্ত হয়ে পড়ে।

 যদি কোনো কিছুতে ব্যর্থ হয় তাহলে ডিমেনশিয়ার রোগী সহজেই হতাশ হয়ে পড়ে। হতাশায় মুষড়ে পড়ে। অনেক সময় হতাশার কারণে রোগীর মধ্যে এক ধরনের অশান্তি তৈরি হয়। রোগী এ সময় একাকিত্বতায় ভোগে।

 টাকা-পয়সার ঠিকমতো ব্যবস্খাপনা করতে পারে না। দেখা যায় কোনো কাজে টাকা-পয়সা একটুও খরচ করতে চায় না। আবার অন্য কোনো অদরকারি কাজে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে ফেলে। এতে করে অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এ সময় এমন একজন বিশ্বস্ত মানুষ দরকার যিনি রোগীকে টাকা-পয়সার সঠিক ব্যবস্খাপনায় সাহায্য করতে পারবে। এতে করে রোগী এবং রোগীর পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

ডিমেনশিয়ার রোগীর রোগের প্রাথমিক স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায় শনাক্ত করা যদিও একটু কঠিন। কিন্তু রোগীর ইতিহাস এবং আচার-আচরণ, উপসর্গ-চিহ্ন দেখে শুনে পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার ব্যক্তির ডিমেনশিয়া রোগ শনাক্ত করতে পারেন। আর প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে তার সঠিক কারণ বের করাও অনেক সময় সহজ হয়ে যায় এবং রোগীকে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয়।

ডিমেনশিয়ার মডারেট এবং সেভিয়ার স্টেজ
ডিমেনশিয়া রোগীর কিছু কিছু সক্ষমতা অক্ষুণí থাকে, তবে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। রোগ যত বাড়তে থাকে বা রোগ যত সামনের দিকে এগিয়ে যায়, ততই রোগীর সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে ডিমেনশিয়ার রোগীর যতই সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাক না কেন, তার কিছু সেন্স যেমন­স্পর্শ এবং শ্রবণ সক্ষমতা এবং আবেগের প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দেয়া অক্ষুণí থাকে ঠিকই।

ডিমেনশিয়ার ‘মডারেট’ স্টেজ বা পর্যায়ে, ব্যক্তির সমস্যাগুলো আরো প্রকট হয়ে ওঠে এবং ব্যক্তিকে আরো অক্ষম করে তোলে। এগুলোর মধ্যে থাকে­

 সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতি খুবই ভুলোমন সৃষ্টি হয়। যেমন গত সপ্তাহের কোনো ঘটনা বা গতকালের কোনো প্রোগ্রামের কথা রোগীর মনে থাকে না। তবে মজার কথা হলো দূর অতীতের কথা রোগীর ভালোভাবেই মনে থাকে। তবে এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা রোগী দিতে পারে না বা মাঝে মাঝে অতীত ঘটনা বলতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগতে থাকে।

 সময় এবং স্খান সম্পর্কে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। রোগী বলতে পারে না যে এখন ঠিক সময় কয়টা বা দিনের তারতম্য বুঝতে পারে না, অনেক সময় সন্ধ্যাবেলাকে রোগী সকাল বলে ভুল করতে পারে, অনেক সময় ঘরের অন্ধকারকে রাত বা সন্ধ্যাবেলা মনে করতে পারে।

রোগী কোন জায়গায় বা স্খানে আছে তা বুঝে উঠতে পারে না। অনেক সময় রাস্তায় বের হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে পারে না। কারণ তার কাছে বাড়ি ফেরার পথ যেন অপরিচিত মনে হয়। তাই তো অনেক সময় রোগী দিগভ্রান্তের মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে থাকে।

কোনো কোনো সময় রোগী হারিয়েও যায়। আবার অনেক সময় রোগীর হঠাৎ বাড়ির কথা মনে পড়ে, তখন বাড়ির দিকে আসতে থাকে। কোনো কোনো সময় রোগী বাড়িতে ফেরার পথ চিনেও ফেলে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী স্খান চিনতে পারে না। তাই এ সময় রোগীর নিরাপত্তার জন্য রোগীর সাথে কোনো পরিচয়পত্র রাখার ব্যবস্খা করা প্রয়োজন। এই পরিচয়পত্রে রোগীর নাম, ঠিকানা এবং বাড়ির ফোন নাম্বার থাকা দরকার।

 রোগী পরিবারের নাম এবং বন্ধু-বান্ধবের নাম ভুলে যায়।

 ডিমেনশিয়ার রোগী অনেক সময় মডারেট পর্যায়ে চলে এলে পরিবারের সদস্যদের অনেক সময় চিনতেও পারে না, আবার এক সদস্য থেকে অন্য সদস্যের চেহারার পার্থক্য করতে পারে না­বিভ্রান্তিতে ভোগে।

 রোগী কোনো কোনো সময় নিজের ঘর চিনতে পারে না, তাই বাড়িতে এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরে বেড়ায় তার নিজের রুম খোঁজার জন্য।

 রোগী অনেক সময় চুলায় কোনো সসপেন রাখল, দেখা গেল তার কথা ভুলে গেল। আবার রোগী কোনো কিছু রান্না করা শুরু করল, রান্না শেষ না হওয়ার আগেই মনের ভুলে রান্না ফেলে ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকে।

 রাস্তায় এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় ডিমেনশিয়ার রোগী, বিশেষ করে রাতের বেলায়। মাঝে মাঝে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি হারিয়েও যায়।

 ডিমেনশিয়ার রোগী অনুপযুক্তভাবে আচরণ করে, যেমন­

 তাদের রাতের ড্রেস পরেই বাড়ির বাইরে চলে যায়।

 হাত না ধুয়েই খেতে বসে যায়।

 লাইট না জ্বালিয়েই ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করতে থাকে।

 চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বাড়ির বাইরে চলে যায়।

 সেভ করতে করতে রাস্তায় বের হয়ে যায়।

 খাবারের প্লেট নিয়ে খেতে খেতে হঠাৎ খাবার না খেয়েই খাবারে হাত ধুয়ে ফেলে।

 ডিমেনশিয়ার রোগী এমন কিছু দেখে বা এমন কিছু শোনে যার বাস্তবে কোনো সত্যতা নেই। যেমন­রোগী দেখে­

 কোনো ভূত তার সামনে এসে তাকে ভয় দেখাচ্ছে।

 বিরাট অজগর সাপ তাকে মেরে ফেলার জন্য তেড়ে আসছে।

 বাঘ বা সিংহ তার সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। রোগী শোনে­

 গায়েবি আওয়াজ

 কেউ তাকে কমান্ড করছে

 তাকে কাউকে আঘাত করার কথা বলছে

 কোনো কিছু ফেলে দিতে বলছে

 তাকে ধমক দিচ্ছে

 রোগী ভ্রান্ত বিশ্বাসে আক্রান্ত হয়। রোগী ভুলভাবে বিশ্বাস করে যে, তাকে­

 সবাই মেরে ফেলতে চাইছে

 কেউ তার ক্ষতি করছে

 তাকে নিয়ে সবাই জ্বলছে, তার ভালো কেউ সহ্য করতে পারছে না

 রোগী ভাবে তার মাঝে কোনো বিশেষ শক্তির আবির্ভাব হয়েছে

 ভাবে সে কোনো বড় মাপের নেতা হয়ে গেছে

 একই কাজ বারে-বারে করে

  নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি খেয়াল রাখে না

 অপরিচ্ছন্নভাবে থাকে

 খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়

 হতাশ অথবা বিষণí অথবা দ্বিধান্বিত হয়ে যায়

 মারাত্মক ডিমেনশিয়া (সেভিয়ার স্টেজ)

এটি ডিমেনশিয়ার শেষ পর্যায়। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্মকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং নিজে নিজের যত্ন নিতে পারে না। তাই এ সময় সেবা-যত্ন দানকারীর প্রয়োজন হয়। এই স্টেজে রোগী­

 কোনো কিছু স্মরণ করতে পারে না, তা হতে পারে সকালের কোনো কথা বা কয়েক মিনিট আগের কথা, যেমন­রোগী কিছুক্ষণ আগে খেল, কিন্তু পরক্ষণেই খাওয়ার কথা ভুলে গেল।

 কারো কথাবার্তা বোঝার মতো ক্ষমতা বা সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

 পরিবারের কোনো সদস্যকে এমনকি কোনো কোনো সময় নিজের মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোনকেও চিনতে পারে না।

 অন্যের সাহায্য ছাড়া খেতে পারে না।

 গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা কাপড়-চোপড় পরা বা টয়লেটে যাওয়ার মতো কাজও অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে পারে না।

 প্রাত্যহিক জীবনের দরকারি জিনিসপত্র চিনতে পারে না।

 রাতে অনেক সমস্যার তৈরি করে।

 অস্খিরতায় ভোগে, সম্ভবত অনেক দিন আগে মরে যাওয়া মৃত কোনো আত্মীয়কে দেখতে পায়।

 অ্যাগ্রেসিভ হয়ে ওঠে।

 ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারে না।

 কোনো কিছুতে সাড়া দেয় না।

 অসংযত বা সংযমহীন হয়ে পড়ে।
ডিমেনশিয়া রোগীর হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশন
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝে মাঝে এমন কতগুলো সমস্যা ও উপসর্গের অভিজ্ঞতা লাভ করে যা তারা কখনোই অনুভব করেনি। ডিমেনশিয়া রোগী যে হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশন অনুভব করে থাকে তা হলো কাল্পনিক, কিন্তু এটা তাদের কাছে একেবারে বাস্তব মনে হয় এবং এটি রোগীর মধ্যে মারাত্মক ধরনের উদ্বিগ্নতা এবং এমনকি আতঙ্কেরও সৃষ্টি করে থাকে।

হ্যালুসিনেশন (মতিভ্রম)
হ্যালুসিনেশন এক ধরনের অনুভবময় অভিজ্ঞতা যা একেবারে বাস্তব মনে হয়। কিন্তু অন্য মানুষ তার কোনো সত্যতা খুঁজে পায় না। হ্যালুসিনেশনে অনেক ধরনের অনুভূতির সমন্বয় থাকতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দৃষ্টিগত এবং শ্রবণগত হ্যালুসিনেশন।

দৃষ্টিগত হ্যালুসিনেশনে রোগী নানা রকম জিনিস দেখতে পায়। যেমন­রোগী দেখতে পায় যে কোনো দৈত্য তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে নানা রকমের কথা বলছে, ভয় দেখাচ্ছে। আবার রোগী দেখতে পায় যে কোনো সাপ তার দিকে তাড়া করে আসছে। সে ভয়ে পালাতে চায়। এ সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা বন্ধু-বান্ধব এসে এগুলোর কোনো বাস্তব সত্যতা খুঁজে পায় না। রোগীকে যতই বলা হয় যে এগুলো সত্য নয় কাল্পনিক ব্যাপার কিন্তু রোগী এসব কথা বিশ্বাস করতে চায় না বা বিশ্বাস করতে পারে না। রোগী ভাবে যে সবাই তার মতো দেখে ও সত্য কথা বলছে না। তাই এ সময় রোগীর মনে পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধবদের বিরুদ্ধে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

অনেক সময় রোগী গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়। যেমন­রোগী শুনতে পায় যে কোনো দৈত্য বা অন্য কেউ তাকে কোনো কিছু করতে আদেশ করছে। যেমন বলল যে, ‘তুমি ওই কাজটি কর’ বা ‘তুমি তোমার সব টাকা অন্যজনকে দিয়ে দাও’ বা ‘তুমি ওই লোকটাকে গিয়ে আঘাত কর’­আর রোগী এসব কথা সত্য বলে মেনে নেয়। রোগী ভাবতে থাকে যে এসব কথা তাকে বলা হচ্ছে তাই তাকে এসব আদেশ শুনতে হবে। যেমন­ রোগী গায়েবি আওয়াজ শুনল, তাকে বলা হলো­‘তোমার বিরুদ্ধে ওই লোকটি ষড়যন্ত্র করছে তুমি তাকে মেরে এসো’­ তখন রোগী ওই লোকটিকে মেরে আসতে যাবে বা মেরে আসবে। তাই এসব অবস্খায় কোনো কোনো সময় কিছুটা বিপজ্জনক অবস্খা তৈরি হওয়ার ভয় থাকে। হ্যালুসিনেশনের কারণে রোগীর মাঝে উদ্বিগ্নতা বা ভয় সৃষ্টি হয় যখন সে ভয়ানক কোনো কিছু বা কোনো দৃশ্য দেখতে পায় বা কোনো ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পায়। অনেক সময় রোগীর উদ্বিগ্নতা রূপান্তরিত হয়ে যায় আতঙ্কে। আর আতঙ্কের ফলে রোগীর মাঝে সৃষ্টি হয় নানা উপসর্গ যেমন­

 অস্খিরতা

 বিরক্তি/উত্তেজনা

 বিভ্রান্তি

 মাথাব্যথা

 প্যালপিটিশন

 ঘাম নি:সরণ

 মাথা ঘোরানো

 বমি বমি ভাব

 বিষণíতা

 দুশ্চিন্তা

 স্ট্রেস

 ডায়রিয়া

ডেলিউশন (ভ্রান্ত বিশ্বাস)
ডিমেনশিয়ার রোগীর মাঝেমধ্যে ডেলিউশন দেখা দিতে পারে। ডেলিউশন হলো ভ্রান্ত বিশ্বাস। এ সময় রোগীর মনে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন মাত্রার ডেলিউশন তৈরি হতে পারে। রোগী এর ফলে ভাবতে পারে যে তার উন্নতি নিয়ে কেউ জ্বলছে। তার ভালো কেউ চায় না। তার ক্ষতি করার জন্য নানা রকম প্ল্যান-পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আবার রোগী ভাবতে পারে যে তাকে যে খাবার দেয়া হচ্ছে তার সাথে বিষ মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে­এ ভয়ে অনেক সময় রোগী খেতে চায় না বা খায় না। অনেক সময় রোগী না খেতে খেতে অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা নামক আরেকটি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ সময় রোগী খাওয়া দেখলেই ভয় পায়, খেতে চায় না, খাওয়ার পর বমি করে ফেলে। এতে করে রোগীর শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে রোগী সহজেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ অবস্খাটা অতি গুরুত্বের সাথে দেখা প্রয়োজন।

ডেলিউশনের কারণে ভ্রান্ত বিশ্বাসে রোগী সন্দেহের বশে অন্যের ওপর চড়াও হতে পারে বা কোনো কোনো সময় ভায়োলেন্সও করে ফেলতে পারে। এসব ব্যাপারই ডিমেনশিয়া রোগীর জন্য কঠিন সমস্যার তৈরি করতে পারে। অনেক সময় রোগীর এবং রোগীর পরিবার নানা রকম আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এসব ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ডাক্তারের সাথে কথা বলে এসব ব্যাপারে করণীয় কাজ করতে হবে।

ডিমেনশিয়া রোগীর হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশন দেখা দেয়ার সাথে সাথেই ডাক্তারকে জানানো উচিত। ডাক্তার প্রয়োজনে ওষুধ দেবেন। ওষুধ প্রয়োগে রোগীর মাঝে সৃষ্টি হওয়া এসব হ্যালুসিনেশন ও ডেলিউশন অনেকাংশে কমে আসবে বা চলে যাবে। তবে গ্রহণে কোনো রকম উদাসীনতা দেখা দিলে অন্যান্য কোনো চিকিৎসা রয়েছে কি না তাও ডাক্তারের সাথে আলাপ করে জেনে রাখা প্রয়োজন।

ডিমেনশিয়া রোগ কঠিন প্রকৃতির রোগ। তাই এ রোগের প্রাপ্য চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।

ডিমেনশিয়া রোগীকে জানুন
ডিমেনশিয়া রোগীর সাথে তর্কে জড়ানো ঠিক নয়­কারণ ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি ভীত থাকতে পারেন তাদের হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশনের কারণে। কারণ হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশনের কারণে রোগী নানা রকমের অনাকাáিক্ষত অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে। যা বাস্তববহির্ভূত এবং কষ্টকর।

ডেলিউশন রোগীর যেসব খারাপ আচরণ
কিছু কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যা ডিমেনশিয়া রোগীর আচরণের অবনতি করে, এগুলো হলো­

 দৃষ্টিগত সমস্যা, শ্রবণের সমস্যা

 কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

 মানসিক অসুস্খতা

 অপরিচিত পরিবেশ

 অপর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্খা

 সংক্রমণ

 জ্বর

 ব্যথা-বেদনা

 কোষ্ঠকাঠিন্য

 রক্তশূন্যতা

 পুষ্টিহীনতা অথবা ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা

 অপরিচিত সেবাদানকারী ব্যক্তি

 পারিবারিক রুটিনের বা শৃঙ্খলার বিচ্যুতি

 পরিবেশ-পরিস্খিতির ভুল ব্যাখ্যা

 সেনসরি ওভারলোড অনেকগুলো বিষয় একসাথে হতে দেখলে

ওষুধ অনেক সময় ডিমেনশিয়া রোগীর হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশনের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে করে রোগীর মিসআইডেনটিফিকেশন সিনড্রোম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয়। অবশ্য এসব ডিসঅর্ডার চিকিৎসার জন্য যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়, এগুলোর নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন­

 কাঠিন্যতা

 শরীর কাঁপুনি

 ঝিমানো

 পড়ে যাওয়া

 মুখ শুকিয়ে আসা

 ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া

আজকাল নতুন নতুন অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে কম। তবে এগুলোও ঝিমানোভাব তৈরি করে।

ডিমেনশিয়ার রোগীকে কোনো কিছু হারিয়ে ফেলার কারণে বকাবকি বা গালমন্দ করা ঠিক নয়। কারণ তারা ইচ্ছা করে কোনো কিছু হারিয়ে ফেলে না। অনেক সময় স্মরণশক্তি হারানোর কারণে থেকে থেকে ভুলে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই ভুলে যাওয়ার কারণে অনেক সময় হাতের কাছের জিনিস ভুলে অন্য কোথাও রেখে দেয়া হয় বা ফেলা দেয়া হয়। আর জিনিস হারিয়ে যায় বা খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে যায়। তাই এ সময় রোগীকে বকাবকি করতে থাকলে রোগী বুঝতে পারে না যে ঠিক কী কারণে তাকে বকুনি দেয়া হচ্ছে। এতে করে রোগী মনে কষ্ট পায়, হতাশায় ভুগতে শুরু করে। আর হতাশা থেকে রোগীর মাঝে অপরাধবোধ এবং একাকিত্বতা চলে আসতে পারে। এ সময় রোগী মনের কষ্টে বিষণíতায় ভোগে। ফলে তার কোনো কিছু ভালো লাগে না। অশান্তি লাগে, উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয়। এতে করে ডিমেনশিয়া রোগীর রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে রোগীর অন্যান্য উপসর্গ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতে করে রোগের যাতনা এবং সমস্যা বেড়ে যায়। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের এবং সেবাদানকারীর কাজের চাপ আরো বেড়ে যায়।

অনেক সময় ডিমেনশিয়ার রোগী কোনো ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে থাকে। তাদের এই সন্দেহ কতটুকু সত্য তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যদি সত্য হয় তাহলে তার সমাধান করা দরকার। আর যদি কল্পিত হয় তাহলে তা রোগীকে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা যায়।

ডিমেনশিয়ার রোগীকে অন্যদিকে সরানো
ডিমেনশিয়ার রোগীকে অন্যদিকে সরানো অর্থাৎ রোগীর মনোরোগ অন্যদিকে সরানোর ব্যবস্খা করা। এতে করে রোগীর যাতনাময় উপসর্গগুলো কিছুটা লাঘব হতে পারে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও। এগুলো হতে পারে­

 ব্যায়ামের দ্বারা

 নানা রকম কাজ-কর্মের দ্বারা

 বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনায় মেতে ওঠা

 পুরনো দিনের ডায়রি পড়া

 বাগান করা

ডিমেনশিয়া রোগীর ভালো লাগার জন্য করণীয়
ডিমেনশিয়া রোগীর ঘর আলোয় আলোকিত করা প্রয়োজন। যাতে করে রোগীর প্রফুল্লতার সৃষ্টি হতে পারে। রাতে নাইট-লাইট বা শোয়ার সময় হালকা মনোরম আলোর ব্যবস্খা করা প্রয়োজন।

 রোগীর প্রিয় কোনো জিনিস করা

 রোগীর কোনো প্রিয় জায়গায় নিয়ে যাওয়া

 ডায়েরি লেখা। এতে করে রোগীর রোগের উপসর্গগুলো কখন বা দিনে-রাতের কোনো সময় বা কোনো মানুষ বা ফ্যাক্টরের সামনে বেড়ে যায় বা প্রকাশিত হয় সেগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখা ভালো। এগুলোর শনাক্তকরণের ফলে রোগীর সেবা যত্নকারী সে অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে পারবে, রোগীর সেবা-যত্ন করতে পারবে। এতে করে নানা রকম সমস্যাগুলো জয় করা সহজ হবে।

যদি সম্ভব হয়, দরকারি জিনিসের বাড়তি বা অতিরিক্ত সেট রাখা। যেমন­
 চাবি

 ব্যাগ

 মানিব্যাগ

 চশমা

 কলম

 খাতা

ডিমেনশিয়া রোগীর কিছু কিছু হ্যালুসিনেশন এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস তেমন গুরুত্ব না দিলেও চলবে, যদি সেগুলো ক্ষতিহীন হয় এবং সেগুলো যদি ব্যক্তির উত্তেজনার কারণ না হয়।

ডিমেনশিয়া রোগীর কিছু দ্বন্দ্ব এবং চিন্তা স্বাভাবিক।
ডিমেনশিয়ার রোগীর যত্ন নেয়া, সেবা করা একটি বড় ধরনের ভালো কাজ। এটা অনেক সময় কঠিন, ক্লান্তিময় ও বিরক্তিকর হতে পারে। তাই এ সময় কিছুটা অপরাধবোধ করা, হতাশা অনুভব করা সেবাদানকারীর জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার।

ডিমেনশিয়া রোগীকে সঙ্গদান
ডিমেনশিয়ার রোগী পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের দেখে আনন্দবোধ করেন। তাই ডিমেনশিয়া রোগীর সাথে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের ঘন ঘন দেখা দেয়া উচিত। এ সময় শিশু-কিশোরদেরও রোগীর সাথে দেখা করতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। যদি শিশুরা তরুণ বয়সের থাকে তাহলে তাদের একটি ভিজিটিং ব্যাগ রাখা ভালো যাতে করে তারা বিভিন্ন রকমের ভালো খাবার-দাবার বহন করে আনতে পারে রোগীর জন্য। প্রয়োজনে বিনোদন সৃষ্টিকারী কোনো বস্তুও তারা ব্যাগে করে রোগীর সাথে দেখা করার সময় নিয়ে আসতে পারে। এতে করে রোগীর সাথে শিশুদের এক প্রাণখোলাভাব সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। রোগী শিশুদের সঙ্গ পেয়ে আনন্দিত হতে পারবে।

ডিমেনশিয়া রোগীর সাথে সঙ্গ দেয়ার জন্য
 নিউজপেপার ও ম্যাগাজিন আনা যেতে পারে এবং তা রোগীর সাথে মিলে পড়েও দেখা যেতে পারে।

 এক সাথে মেইল পড়া যেতে পারে।

 এমন কোনো খেলা খেলা যেতে পারে যা পূর্বে রোগীকে আনন্দ দিত।

 এক সাথে কোনো অডিও গল্প শোনা যেতে পারে।

 ডিমেনশিয়া রোগীর সাথে মিলে ঘর পরিষ্কার  ও গোছগাছ করা যেতে পারে, ঘর সাজানো যেতে পারে।

 রোগীকে চুল আঁচড়ে দেয়া যায়, নখ কেটে দেয়া যায়

 রোগীর কাপড়-চোপড় গোছগাছ করা যায়।

 পরিবারের কোনো সদস্যকে বা বন্ধু-বান্ধবকে চিঠি লেখার ক্ষেত্রে রোগীকে সাহায্য করা যেতে পারে।

 রোগীকে দেখার জন্য অন্য কাউকে সাথে নিয়ে আসতে পারেন, তার সাথে কিছুটা সময় সাক্ষাৎ ও কথা বলে রোগীর ভালো লাগবে।

 একজন ডিমেনশিয়া রোগী বাইরে বেড়াতে গিয়ে আনন্দ পেতে পারেন, বাইরে বেড়ানোর মধ্যে থাকতে পারে­

 গাড়িতে করে একটু বেড়িয়ে আসা যায়।

 অন্য কারো বাড়িতে সামান্য সময়ের জন্য বেড়িয়ে আসা যায়।

 কোনো বাগান বা পার্কেও যাওয়া যায়।

ডিমেনশিয়া রোগীর সামনে এমন পরিবেশ তৈরি করা যায় যাতে করে নানা রকমের আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ পায়।

বই পড়া
কোনো প্রিয় লেখকের বই পড়া অথবা কোনো আনন্দদায়ক কবিতা আবৃত্তি করা যায় ডিমেনশিয়া রোগীর সামনে। এতে করে রোগী সুখ অনুভব করতে চেষ্টা করতে পারে।

স্পর্শ
 রোগীর কপালে হাল্কা চুমু দেয়া যায়

 মাথায় হাত বোলানো অন্য রকম সান্তবনা সৃষ্টি করবে

 হাত ধরা যায় যাতে করে এক ধরনের সান্তবনার পরিবেশ তৈরি হবে।

সেনসরি
হাত-পা ম্যাসেজ করা যায়। এতে করে রোগীর মাঝে এক ভালো লাগা অনুভূতির সৃষ্টি হবে।

হাঁটাহাঁটি
কোনো কিছু ধরে হাঁটা বা এমনকি হুইল চেয়ারে করে ঘুরে বেড়ানো একটু আনন্দময় ভাব সৃষ্টি করবে।

মুখভঙ্গি
একটুখানি হাসি ডিমেনশিয়া রোগীর জন্য সান্তবনাদায়ক হতে পারে। হাসির দ্বারা রোগীর মনে প্রফুল্লতা সৃষ্টি হবে। আদরের চাহনি ডিমেনশিয়া রোগীকে সান্তবনা দেবে। রোগী নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারবে।

ডিমেনশিয়া রোগীর সাথে কতবার সাক্ষাৎ করতে হবে এমন কোনো ধরাবাধা হিসেব নেই বা কত সময় রোগীর সাথে কাটাতে হবে এমনও কোনো হিসাব নেই। আসল কথা হলো সাক্ষাৎ যতবার যতটা সময়ের জন্যই হোক না কেন তা যেন হয় রোগীর জন্য প্রশান্তিমূলক। রোগী যেন ভাবতে পারে যে আপনি তাকে অনুভব করছেন, তার কষ্ট বুঝতে পারছেন, তাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করছেন।

ডিমেনশিয়া রোগীকে সাক্ষাৎ শেষে বিদায়ের ক্ষণে তা রোগী এবং সাক্ষাৎকারী উভয়ের জন্য একটা কঠিন মুহূর্ত। তাই এ সময় উভয়ের স্ট্রেস কমানোর জন্য যা করা হয়­

 এমন একটি কাজ বের করুন যা আগে থেকে নির্ধারিত থাকবে যে এ কাজটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই চলে যেতে হবে বা বিদায় নিতে হবে।

 রোগীকে যখন খাওয়া দেয়া হয় ঠিক সে মুহূর্তেও বিদায় নেয়া যেতে পারে। এ সময় রোগীর মনোযোগ খাওয়ার দিকে ডাইভার্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে বিদায়বেলার কষ্ট রোগীর কম লাগতে পারে।

 রোগীকে সাক্ষাৎ করতে এসেই বলে দেয়া যায় যে কত সময়ের জন্য আপনি আছেন এবং কোনো একটা কাজের জন্য আপনাকে বেরিয়ে পড়তে হবে­ যেমন­ বলা যায় যে, ‘আমি এক ঘন্টা সময় থাকব কিন্তু এরপর আমাকে একটু মার্কেটে যেতে হবে’ অথবা ‘আমাকে একটু ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।’

 বিদায়ক্ষণটিকে যথাসম্ভব সংরক্ষিত করুন এবং সোজা চলে যান। বিদায়বেলা দীর্ঘায়িত করা, ক্ষমা চাওয়া, কান্নাকাটি করা বিদায়বেলাকে কঠিন করে তুলতে পারে। আর সে কঠিন ক্ষণ ডিমেনশিয়া রোগীর মাঝে এক ধরনের সেপারেশন অ্যাংজাইটির সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে রোগীর মনে এক ধরনের একাকিত্বতার ভাব সৃষ্টি হতে পারে। রোগীর মাঝে হতাশার জন্ম নিতে পারে। 

ফলে রোগীর রাতের ঘুম নষ্ট হতে পারে, খাওয়ায় রুচি কমতে পারে। আর এগুলো রোগীর ডিমেনশিয়াকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন