শনিবার, ২১ মে, ২০১১

আইবিএস (ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রোম)

সাহিল মাহমুদ ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পরীক্ষার সময় পড়াশোনার চাপ যতটা না তাকে কাবু করে, তার চেয়ে বেশি কাবু করে বারবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সমস্যা। পরীক্ষার সময় বেশিরভাগ সময়ই বাথরুমে কাটে তার। সঙ্গে থাকে পেট মোচড়ানোর মতো ব্যথা। মলের সঙ্গে শ্লেষ্মা থাকে। মলত্যাগের পর পেট ব্যথা কমে গেলেও মনে হয় পুরোপুরি মলত্যাগ হয়নি। কিছু সময় পর আবারও ছুটতে হয় বাথরুমে। এ সমস্যা নিয়ে সে প্রচণ্ড হতাশ। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সাহিল আইবিএসে আক্রান্ত বলে জানান তিনি। ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রোম সংক্ষেপে আইবিএস মারাত্মক কোনো রোগ না হলেও জীবনকে করে তোলে অস্বস্তিকর, বিষাদময়। আমেরিকায় প্রতি পাঁচজনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আমাদের দেশে এ রোগে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। সচেতনতার অভাবে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই সর্বনাশের শিকার হন। মিটফোর্ড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার মতে, অন্ত্রের নড়াচড়ার তারতম্যের কারণে এ রোগ দেখা দেয়। তবে কেন এ রোগ হয়, তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও কিছু কিছু ফ্যাক্টর এ রোগের লক্ষণ বাড়িয়ে দেয়। চকোলেট, দুধ, অ্যালকোহল, কিছু ফলমূল খেলে সমস্যা বেড়ে যায়। মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ভয়-ভীতি এ রোগের লক্ষণ বাড়ায় বহু গুণ। হরমোনজনিত কারণে মাসিকের সময় ও আগে-পরে মেয়েদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
আক্রান্ত ব্যক্তির পেটে ব্যথা থাকে, সঙ্গে থাকে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য। কারও কারও ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য অলটারনেটিভলি হয়ে থাকে। মলত্যাগের পর পেটব্যথা কমে যায়। কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, আইবিএসে আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার মলত্যাগ করলেও ওজন কিন্তু হ্রাস পায় না, শরীর ভাঙে না। মলের সঙ্গে শ্লেষ্মা গেলেও রক্ত পড়ে না, ব্যক্তি রক্তশূন্যতায় ভোগে না। জেগে থাকলে বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হলেও মলত্যাগের জন্য ঘুম থেকে উঠতে হয় না। যদি আইবিএসের লক্ষণের সঙ্গে এ উপসর্গগুলো থাকে, তবে বুঝতে হবে এটা আইবিএস নয়, অন্য কোনো রোগ। দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
আইবিএস নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রেজাল্ট নরমাল আসে। কিন্তু জটিল ও মারাত্মক কিছু রোগের লক্ষণ এ রোগের মতো হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যে সত্যিই আইবিএসে আক্রান্ত, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বলেন, এ রোগ নির্মূলে কোনো ওষুধ নেই। তবে উপসর্গ দূর করতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০ গ্রাম ইসবগুল কোষ্ঠকাঠিন্য যতটা দূর করতে পারে আঁশজাতীয় খাবার তা পারে না। আঁশযুক্ত খাবার খেলে অনেক সময় সমস্যা কমার পরিবর্তে বাড়ে। তাই ধীরে ধীরে আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ল্যাকটুলোজ সেবন করা যেতে পারে। ডায়রিয়া হলে আঁশজাতীয় খাবার পরিহারের পাশাপাশি লোপিরামাইড, কোডেইন ওষুধ সেবন করা যায়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ যেমন এসএসআরআই-ফ্লুঅক্সিটিন, টিসিএ-এমিট্রিপটিলিন, নরট্রিপটিলিন সেবনে এ সমস্যা দূর হয়।
চকোলেট, সফট ড্রিংকস-কোলা, সালাদ, ব্রকোলি, ফুলকপি পরিহার করাই ভালো। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। কোনো বেলার খাবার বাদ দেবেন না। প্রচুর পানি ও তরল খাবার পান করুন। নিয়মিত ব্যয়াম করুন। এ রোগ শরীরে কোনো খারাপ প্রভাব ফেলে না। তাই দুশ্চিন্তা করবেন না। এ রোগকে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে জীবনযাপন করুন। মলত্যাগের ইচ্ছা জাগলেই বাথরুমে যাবেন না। মনকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য কোনো কাজ করুন। দেখবেন বাথরুমে না গিয়েও থাকতে পারছেন। শ্লেষ্মাযুক্ত মল হলেই মেট্রোনিডাজল সেবন করতে থাকেন অনেকেই। আইবিএসে মেট্রোনিডাজল সেবন করে কোনো উপকার পাওয়া যায় না। অহেতুক এ ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন। আইবিএসে আক্রান্তরা বারবার চিকিৎসক পরিবর্তন করেন। এতে শুধু খরচ বাড়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন