রবিবার, ১ মে, ২০১১

অ্যালকোহল বা মাদকাসক্তি

অ্যালকোহলের মতাদর্শে যারা বিশ্বাসী তারা মনে করেন ক্ষমতালিïসাই অ্যালকোহলের নেশার কারণ। শৈশব থেকে হীনম্মন্যতাবোধ জন্মায় যদি বাবা-মা অতিরিক্ত শাসন বা চোখে চোখে রাখেন এবং এই ছেলেমেয়েরাই বড় হয়ে এই হীনম্মন্যতাবোধকে কাটিয়ে ওঠার জন্য অ্যালকোহলের নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় ‘হতাশাব্যঞ্জক উচ্চাকাáক্ষা’ বা অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রতি ঝোঁক ছেলেমেয়েদের অ্যালকোহলের নেশার প্রতি আকৃষ্ট করে থাকে। কারণ অ্যালকোহল একটা কিছু পাওয়া গেল বা আমি ক্ষমতাবান­ এই রকম একটা ভাব বা ধারণা মনে সৃষ্টি করলেও তা সাময়িক।
অনেকে মনে করেন যাদের মধ্যে অ্যালকোহলের নেশার প্রবণতা আছে তাদের মানসিক অবস্খা একটু অন্যরকম। এই ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিত্বের গঠন কিছুটা অস্বাভাবিক, একে অ্যালকোহলিক পার্সোনালিটি বলা হয়।
সাধারণভাবে কী দেখে ‘অ্যালকোহলিক পার্সোনালিটি’ চেনা যাবে তা বলা অনেক সময় কঠিন। বিভিন্ন মানসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে বলা যায়। এখন নিয়মিত অ্যালকোহল ব্যবহার করার জন্য, না এই ধরনের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে সঠিকভাবে বলা কঠিন।
চঢ়ীধভসথষথলীয়মধ য়ভপসড়ী ফন্সয়েডীয় দৃষ্টিকোণ বিচার করলে অ্যালকোহলিজমের কারণ অন্তর্দ্বন্দ্ব। নেশায় আসক্ত অদম্য ইচ্ছা ও আক্রোশপ্রবণতার মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে অ্যালকোহলের নেশার উৎপত্তি।
 অবদমিত আবেগ
 নিরাপত্তা বোধের অভাব
 নিজেকে কষ্ট দেয়ার প্রবণতা
 নিজেকে শাস্তি দেয়ার প্রবণতা
 বাবা-মায়ের প্রতি বিজাতীয় বিদ্বেষ প্রভৃতি নানা কারণের কথা মনে করা হয়। নিয়মিত অ্যালকোহল খাওয়া ও ক্রমশ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার সঙ্গে প্রতিবর্ত-ক্রিয়া বা রিফ্লেক্স সম্বন্ধে আছে বলে মনে করা হয়। এ সম্বন্ধে খপথড়ষমষব ও ওষফসড়ধপশপষয় য়ভপসড়ী আছে। অ্যালকোহল সাময়িকভাবে­
 মনের উদ্বেগ
 উৎকণ্ঠা
 ভয়
 কষ্ট
 পারিবারিক সমস্যা
 হতাশা দূর করে এবং তার জন্য অনেকে অ্যালকোহল খায় এবং অসুবিধা, কষ্ট, উদ্বেগ ভুলে যেতে চায়। ‘মন’ ভালো করার জন্য তারা ক্রমশ অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ে। আবার নেশা করার জন্য
 শাস্তি
 যন্ত্রণা নেশাগ্রস্তদের ভোগ করতে হয়। দুর্ভাগ্যের কথা এ অস্বস্তি যন্ত্রণা ভুলতেই আবার অ্যালকোহলের নেশা করে­তারা যন্ত্রণা দু:খ-কষ্ট ভোলার চেষ্টা করে অ্যালকোহল পান করে, আবার দু:খ-যন্ত্রণা এই আবর্তের মধ্যে বারে বারে আসতে থাকে।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শারীরিক কারণগুলো পাওয়া যায় অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে। যদিও অনেকটাই যায়নি ও সে সম্বন্ধে এখনো গবেষণা চলছে প্রতিনিয়তই।
এন্ডোক্রিন থিওরি­অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তির কারণ হিসেবে শরীরের হরমোন গ্ল্যান্ডের অস্বাভাবিকতার কথা ভাবা হয়। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড, অ্যাড্রেনালিন কর্টেক্স প্রভৃতির গণ্ডগোল অ্যালকোহল বেশি খেলে অথবা যারা নিয়মিত অ্যালকোহল খায় তাদের মধ্যে দেখা যায়।
জেনেটোট্রাফিক থিওরি­ মেটাবলিজমের জন্মগত ত্রুটির জন্য কিছু মানুষের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা বেশি হয়। অ্যালকোহল যারা খায় তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক পুষ্টির চাহিদা দেখা যায় এবং এই চাহিদার জন্যই তারা অ্যালকোহলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
জেনেটিক থিওরি­ অনেক বৈজ্ঞানিক মনে করেন অ্যালকোহলের নেশা বংশগত। একই পরিবারের অনেকে অ্যালকোহলের নেশা করে থাকে। তার জন্যই পারিবারিক বা বংশগত যোগসূত্রতার কথা অ্যালকোহলের নেশার ক্ষেত্রে ভাবা হয়, যারা নিয়মিত অ্যালকোহলের নেশায় আক্রান্ত তাদের মধ্যে উপরের কারণগুলোর একটি মাত্র কারণই যে দেখা যায় তা নয়। একের বেশি কারণও থাকতে পারে।
নেশাগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের কীভাবে চেনা যায়
যখন কিশোর-কিশোরী নেশা শুরু করে তখন তাদের প্রথম অবস্খাতেই অনেক সময় ধরা যায় না। প্রাথমিক অবস্খায় মাদকাসক্ত হওয়ার লক্ষণ ধরা বেশ কঠিন। খুব সতর্ক ও অভিজ্ঞ চোখে এই পরিবর্তন বুঝতে পারা যায়। যেমন­
 মুডের পরিবর্তন
 উৎসাহী সতেজ মনের দিনে দিনে নিরুৎসাহী হয়ে ওঠা
 লেখাপড়ায় উৎসাহ না থাকা
 কাজকর্মে উৎসাহ না থাকা
 সব সময় শুয়ে-বসে থাকা
 ঝিমুনি
 বেশি ঘুমানো
 বেশি রাতে ঘুমাতে যাওয়া
 সকালে ঘুম থেকে না ওঠা
 অতিরিক্ত অলসতা
 ক্লান্তি
 বাবা-মাকে এড়িয়ে চলা
 বাড়ির লোকজনকে এড়িয়ে চলা
 আলাদা থাকতে চাওয়া
 বাড়ির বাইরে বেশি সময় কাটানো
 বন্ধ ঘরে বেশি সময় একা একা কাটানো
 বাথরুমে বেশি সময় পার করা
 সবার প্রতি উদাসীন থাকা
 বাবা-মার প্রতি উদাসীনতা
 টাকা-পয়সার প্রতি ঝোঁক
 টাকা চাওয়া
 প্রয়োজনে চুরি করা
 ছিনতাই করা
 মিথ্যা কথা বলা
 বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া
 নিজের যত্ন না নেয়া
 অপরিচ্ছন্ন থাকা
 অত্যধিক ফ্যাশনেবল হওয়া
 চুল এলোমেলো করে রাখা
 ঝগড়াঝাটি করা
 গালি-গালাজ করা ইত্যাদি
অবশ্য ছেলেমেয়েদের মধ্যে সামান্য অস্বাভাবিকতা বা উপরে যে উপসর্গ, লক্ষণ বলা হলো তা প্রকাশ পেলেই যে সন্তান নেশা করছে এটাও সবসময় ভাবা ঠিক নয়। মনে সন্দেহ এলে সঠিকভাবে অনুসন্ধান করে তবেই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

অ্যালকোহলের ব্যবহার
বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্খা ও সংস্কৃতির ওপর অ্যালকোহলের ব্যবহার ও প্রভাব নির্ভর করে। কোনো সমাজে অ্যালকোহলের ব্যবহার পানি পানের মতো, আবার কোথাও অ্যালকোহল বা মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার প্রভৃতি অ্যালকোহলের ব্যবহারকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অ্যালকোহলের ব্যবহার খুবই বেড়ে গেছে। মদ খাওয়ার নেশা নতুন কোনো বিষয় নয়, কিন্তু ইদানীং কলেজের ছেলেমেয়েদের মধ্যে নেশার ব্যাপারটি যেন ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামগঞ্জের বা মফস্বলের ছেলেমেয়েরাও শহরে পড়তে এসে নেশার শিকার হচ্ছে। সিনেমা, ভিডিও, সিডি, ফিল্মে অ্যালকোহল পানাহারের যত ছবি দেখানো হচ্ছে ততই যুবসমাজ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। ঝয়থয়ৎঢ় ও ঝভসা-ৎহ করার প্রবণতা যে কত ছেলেমেয়ের জীবনকে নেশাচ্ছন্ন করছে তার হিসাব পাওয়া কঠিন। তাছাড়া রয়েছে বাড়ির পরিবেশের প্রভাব। কিছু বাবা-মা রয়েছেন যারা ছেলেমেয়ের সামনেই বন্ধুবান্ধব বা অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে মদ বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন এবং এই পানাহার তাদের ছেলেমেয়েদের প্রভাবিত করে থাকে, অ্যালকোহলে আসক্ত করে।
অনেক রকমের রাসায়নিক যৌগ আছে যাদের অ্যালকোহল বলা হয়, তাদের মধ্যে ঊয়ভীল অলধভসভসল বা ঊয়ভথষসল সাধারণভাবে বিভিন্ন ধরনের মদের মধ্যে থাকে। যদিও ওষনৎঢ়য়ড়মথল অলধসভসল পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ থেকে তৈরি হয় কিন্তু ‘পান’ করার যে অ্যালকোহল তা ণবধং: দিয়ে গুকোজকে ফার্মেন্টশন করে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের ‘ওয়াইন’ পাওয়া যায়। অ্যালকোহলের মাত্রার ওপর নির্ভর করে এদের বিভিন্ন নাম দেয়া হয়। সাধারণত যে মদ পাওয়া যায় তা হলো­
ব্র্যান্ডি :
 ভদকা
 জিন
রাম :
 শেরি
 বিয়ার
হুইস্কি :
 শ্যাম্পেন
 রেড ওয়াইন
হুইস্কি, ব্র্যান্ডি, রাম, জিন, ভদকা প্রভৃতিতে অ্যালকোহলের মাত্রা শতকরা ১৫ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত থাকে। এদের মধ্যে বিয়ারে অ্যালকোহলের পরিমাণ অনেক কম।
১ গ্রাম অ্যালকোহলে প্রায় ক্যালোরি থাকে সাত, যা অন্যান্য উপাদান যেমন­ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাটের থেকে বেশি। কিন্তু অ্যালকোহলে কোনো ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ নেই। যারা অ্যালকোহল পান করে তাদের শরীরের ক্যালোরির চাহিদা কিছুটা পূরণ হলেও তাতে খিদে কমে যায়, খনিজ পদার্থের অভাব ঘটতে থাকে।
ফার্মাকোলজির সংজ্ঞা অনুযায়ী অ্যালকোহল এরকমের ওষুধ যা­
 ঝথনময়মংপ
 ঞড়থষক্ষৎমলম্পড় বা
 অ্যানেসথেটিক এবং অ্যালকোহলের মাত্রার ওপর নির্ভরশীল। অ্যালকোহলে সাময়িকভাবে অবসাদ কিছুটা কমে, তবে তা দীর্ঘস্খায়ীভাবে খারাপ ফলাফল নিয়ে আসে। অ্যালকোহল পান করার পর ধীরে ধীরে রক্তে এর মাত্রা বাড়তে থাকে ও এক ঘন্টার মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। অবশ্য কী ধরনের অ্যালকোহল খাওয়া হচ্ছে এর পরিমাণ, অন্যান্য খাদ্য ও শরীরের ওজনের ওপর তা নির্ভর করে।
অ্যালকোহল মাঝে মাঝে পান করলেও তা কখন পানাহার, কখন নেশায় পরিবর্তিত হয় বুঝতে পারা কঠিন। সোজা কথায় প্রথমে ‘মদ’ কে খেলেও ‘মদ’ই পরে খেতে শুরু করে। খুবই ভাবনার কথা যে অনেক কমবয়সী ছেলেমেয়েও কলেজে মদ্যপান শুরু করতে পারে।
শরীর ও মনের ওপর অ্যালকোহলের
 স্বল্পস্খায়ী
 দীর্ঘস্খায়ী ও
 কমবেশি বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকে। সামাজিক রীতিনীতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে সামাজিক কোনো কোনো ধর্মীয় আচার-আচরণে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়।
 দেশী মদ
 চুলু প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণীর অ্যালকোহল বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করে। দেশ, কাল, পাত্রভেদে এর হেরফের হয়। ধর্মীয়, সামাজিক বা আইনের চোখে অ্যালকোহল শরীর ও মনের ওপর নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া করে ও দীর্ঘদিন অ্যালকোহল ব্যবহার করলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়।
 শরীরের রক্তচাপ
 হার্টের রোগ
 বাড সুগারের সমস্যা
 কিডনি প্রভৃতির নানারকম সমস্যা ও প্রতিক্রিয়া করে এবং অবসাদগ্রস্ত বা ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে থাকে। অ্যালকোহলের প্রভাবে মনের ওপর অনেক রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়­
 সন্দেহপ্রবণতা
 বিষণíতা
 হতাশা
 রাগ
 ক্ষোভ
 হিংসা
 বিরক্তি ইত্যাদি
ঘুমের ওষুধ
বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওষুধগুলো নিদ্রাহীনতায় যেমন ব্যবহৃত হয় তেমনি ‘চিত্তচাঞ্চল্য’ কমানোর জন্য মানসিক অসুস্খতায় ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ বা নির্দেশ ছাড়া ও প্রকৃত প্রয়োজন না থাকলেও অনেকে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে ও ক্রমশ আসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের এমনই নির্ভরশীলতা জন্মায় যে ওষুধ না খেলে­
 ঘুম হয় না
 রাতে ছটফট করে
 কাজে অবসাদ আসে
 বিরক্তি লাগে
 ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয়
 মাথাব্যথা করে
বারবিচুরেট জাতীয় ওষুধ ঘুমের জন্যই নয়, এপিলেপসির চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত, হয়। এছাড়া
 ডায়াজিপাম
 ক্লোরডায়াজেক্সাইড
 নাইট্রাজিপাম প্রভৃতি ঘুমের ওষুধ  ও ট্রাঙ্কুলাইজারের খুবই প্রচলন দেখা যায়। ইদানীং অনেক কিশোর-কিশোরীও সামান্য­
 অবসাদ
 ঘুমের সমস্যা
 মানসিক চঞ্চলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অথবা বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শে, পালায় পড়ে এই ঘুমের ওষুধ ও ট্রাঙ্কুলাইজার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ব্যবহার করে ও আস্তে আস্তে ‘নির্ভরশীল’ হয়ে পড়ে।
নিয়মিত নেশার দ্রব্য বা মাদকদ্রব্য ব্যবহার করলে যা হয়­ যে সমস্ত কিশোর-কিশোরী নিয়মিত মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন রকমের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। অবশ্য কী ধরনের পরিবর্তন হবে সেটা মাদকদ্রব্যের­
 বৈশিষ্ট্য
 মাত্রা
 কতদিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে নেশা করা অবস্খায় মাদক ব্যবহারের পরিমাণ অনেক সময় ঠিক থাকে না ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকে এ সময় আত্মহত্যাও করে ফেলতে পারে। মানসিক স্খিতিবস্খা বা ভারসাম্য নষ্ট হয়­
 ভুলে যাওয়া
 অমনোযোগ
 হতাশা দেখা যায়
মাত্রাতিরিক্ত মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয় বা দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে। মত্ত অবস্খায় বিশেষ করে
 গাঁজা
 মদ প্রভৃতির নেশার জন্য
 অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে
 মারধর
 আগুন লাগানো
 দাঙ্গা-হ্ঙ্গাামাতে জড়িয়ে পড়ে
 যৌনবিকৃতি
 যৌন বিকার ও
 যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যায়

তামাক বা নিকোটিনে আসক্তি
ধূমপানে প্রায় প্রতি বছর এক-পঞ্চমাংশ মানুষের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে ধূমপানে পাকস্খলী, হার্ট এবং রক্তনালির ওপর প্রভাব ফেলে। এটি অধিকাংশ সময়ে নানাবিধ হার্টের রোগের জন্য প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
মূলত ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রভাবেই ধূমপান আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়া যায়। তবে নিকোটিন রিপেসমেন্ট থেরাপি এ বিষয় খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। নিকোটিনের বিকল্প নিকোটিন প্যাঁচ এবং নিকোটিন গাম ধূমপান সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ধূমপান ত্যাগের ব্যাপারে কয়েকটি ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করলে ভালো ফল পাওয়া যায় যেমন­
 ধূমপানের ব্যাপারটি ভুলে থাকা
 বাড়ির কাজকর্মে মনোযোগী হওয়া
 অন্যের সাহায্য কামনা না করা
 নিজের মানসিকতার পরিবর্তন করা
 সৌখিন কোনো ভালো কাজ করা
 সমাজসেবা করা
মাদকাসক্তি :
বিভিন্ন ধরনের মাদকের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি হলো মাদকাসক্তি। যে মাদকদ্রব্যগুলো মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্খার ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করে তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি থাকে। বিভিন্ন ধরনের মাদকাসক্তির প্রকারগুলো হলো­
ঘুমের ওষুধ­
 ডায়াজিপাম
 অ্যালপ্রাজোলাম
 এটিভান
 লিথিয়াম
 ক্লোনোপিন ইত্যাদি
এছাড়া
 কোকেইন
 ক্যানাবিস
 হ্যালুসিনোজিনস
আরো রয়েছে
 চায়না
 ইভস
 আদম
 হোয়াইট জাতীয় মাদকদ্রব্য
লক্ষণ এবং উপসর্গ
 মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি করা
 অপকর্ম করা
 প্রতিদিন ড্রাগস গ্রহণের ইচ্ছা
 নিজের সমস্যার ব্যাপারে নিজেই অজ্ঞাত থাকা
 দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপারে উদাসীনতা
এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্খার ওপর চাপ প্রয়োগের ফলে যে সমস্ত উপসর্গ পরিলক্ষিত হতে পারে, এগুলো হলো­
 রাগান্বিত হওয়া
 আত্মদ্বিধায় ভোগা
 স্মরণশক্তি কমে যাওয়া
 ভাঙা ভাঙা কথাবার্তা বলা
 মাংসপেশির ব্যথা
 হাড়ের ব্যথা
 প্যারানোয়া
 আবেগজনিত সমস্যা
 গভীর ঘুমে থাকা
 অচেতন অবস্খায় থাকা
সন্তান বা বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনরা কেউ মাদকাসক্ত কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। তাই এ ব্যাপারে কয়েকটি ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি­
 শারীরিক স্বাস্খ্য
 ব্যক্তিগত ব্যবহার
 আচার-আচরণ
 স্কুলে উপস্খিতির হার
 টাকা-পয়সার ব্যাপারে মানসিকতা
 কেউ মাদকাসক্ত হলে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্রমাগত সমস্যা শুরু হতে পারে যেমন­
 কর্মক্ষেত্রে সমস্যা
 পারিবারিক সমস্যা
 স্কুলে সমস্যা
 সামাজিকতা রক্ষায় সমস্যা
 অর্থনৈতিক সমস্যা এবং
 আইনগত সমস্যা
মাদকদ্রব্যের নেশা এক ধ্বংসকারী নেশা। একটি পরিবারকে বরবাদ করে দেয়ার জন্য একজন নেশাগ্রস্ত সদস্যই যথেষ্ট। মাদকদ্রব্যের বা মাদকাসক্তের নেশার কুফল সম্পর্কে কমবেশি জানে না এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাদকদ্রব্যের নেশা মানুষকে খারাপ পথে তাড়িত করে, ব্যক্তির জীবনব্যবস্খাকে অগোছালো করে দেয়।
মাদকাসক্তের চিকিৎসা আছে, তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজন সচেতনতা এবং মাদক ত্যাগের ব্যাপারে নেশাকারী ব্যক্তির অনুপ্রেরণা মাদকাসক্তির রোগীকে ৪টি পর্যায়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। যেমন­
 উদ্বুদ্ধকরণ
 মাদকবিমুক্তকরণ
 পুনর্বাসন বা পুন:সামাজিকীকরণ ও
 ফলোআপ
মাদকমুক্তকরণের চিকিৎসায় আসক্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি ছাড়া এ চিকিৎসায় সফলতা পাওয়া কঠিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন