শনিবার, ১৮ জুন, ২০১১

মেদভুঁড়ি


মেদভুঁড়ি নিয়ে আর হাসি তামাশা করা যাচ্ছে না। আগে ভুঁড়ি সচ্ছলতা এবং আভিজাত্যের পরিচয় বহন করত। ভুঁড়িওয়ালা ব্যক্তির খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কিছু রসিকতাও করা হতো। কিন্তু আজকাল ভুঁড়ি একেবারে বেমানান বিষয়। তারপরও আমাদের অনেকের ভুঁড়ি বড় হচ্ছেÑ ভুঁড়িদারদের কাফেলা লম্বা হচ্ছে। এটা মোটেও সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। পেটে প্রতিকেজি অতিরিক্ত চর্বি জমা মানে স্বাস্থ্যের ওপর হুমকি ক্রমশ বেড়ে যাওয়া।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের পেটে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা বেশি। কারও ওজন যাই হোক না কেন, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে; যেমন:
হƒদরোগ
উচ্চ রক্তচাপ
মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত বা স্ট্রোক
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার
ডায়াবেটিস (টাইপ-২)
ইনসুলিনে প্রতিরোধ্যতা বেড়ে যাওয়া
রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়া
কম ঘনত্বের ভালো কোলেস্টেরল কমে যাওয়া
বিপাকজনিত সমস্যা 
ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া
অনেকে জানতে চান পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমেছে কি না তা কেমন করে বোঝা যাবে? সাধারণত কটিদেশ এবং কোমরের মাপ নিয়ে তার অনুপাত নির্ণয় করলে এটা বোঝা যায়। আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে শরীরের ঘনত্ব সূচক নির্ণয় করা। তবে যে কারও কটিদেশের মাপ জানলেই আন্দাজ করা যায় তার অবস্থা কি? সাধারণত যাদের কটি ৪০ ইঞ্চির (১০২ সেমি.) বেশি তারা বিপদের মুখে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে বয়সের সঙ্গে কি ভুঁড়ির কোন সম্পর্ক আছে? এর উত্তর হচ্ছে বয়স বাড়ার পাশাপাশি কেউ যদি শরীরচর্চা বা ব্যায়াম না করেন, তা হলে তার পেশী ক্ষয় হতে থাকে এবং এর ফলে শরীরের ক্যালরি খরচের পরিমাণ আরও কমে যায়। এজন্য বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভুঁড়ি বাড়তে থাকে। 
 স্থূলকায়ত্ব কিংবা অতিরিক্ত ওজনের জন্য অনেকে বংশগতি বা জিনকে দায়ী করে থাকেন। তবে বংশগতি বা জিন যত না ওজন বাড়ার জন্য দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী আমাদের জীবনাচরণ বা লাইফ স্টাইল। যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে এবং বেশি খায় তারাই মোটা হয়। তাদেরই ভুঁড়ি বাড়ে। অতিরিক্ত মদ্যপান বিশেষত বিয়ার সেবন করাকেও ভুঁড়ি হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। অতিরিক্ত বিয়ার সেবন করলে পেটে প্রচুর চর্বি জমে যায়। অতএব যারা ভুঁড়ি কমাতে চান তাদের এ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেমন করে ভুঁড়ি কমাব?
ভুঁড়ি কমানো আর শরীরের ওজন কমানোর মূল সূত্র একটিই ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে আর শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ক্যালরি গ্রহণ কমানোর সহজ কোন বুদ্ধি নেই। তবে কতগুলো কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে; 
*পাতে খাবারের পরিমাণ কম নিতে হবে
*তেল-চর্বির পরিবর্তে শাকসবজি-ফলমূল বেশি খেতে হবে
*ফাস্ট ফুড যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল
*রেস্টুরেন্টে যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল
*রেস্টুরেন্টে গেলে অন্যদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেলে কম খাওয়া হবে।
*শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে। এজন্য
সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি সপ্তাহে আড়াইঘণ্টা (১৫০ মিনিট) মাঝারি মানের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত অথবা ৭৫ মিনিট ভারি ব্যায়াম করা যেতে পারে। যারা ওজন কমাতে চান তাদের এর চেয়ে বেশি ব্যায়াম করতে হবে এবং তা নিয়মিত চর্চা করতে হবে।
*যাদের পক্ষে একটানা বেশি সময় ব্যায়ামের ফুরসৎ নেই, তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প সময়ে কিংবা বারবার ব্যায়াম করতে পারে।
*নৈশ ভোজের পর অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করতে হবে।


একবার ওজন সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসতে পারলে তা বজায় রাখার জন্য যথাযথ খাদ্যাভাস এবং ব্যায়াম চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
সবশেষে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে অতিরিক্ত মেদ ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। শুধু প্রয়োজন একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা এবং ধৈর্য। কয়েক কেজি অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারলেই তা চিত্তকে প্রফুল্ল করে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বহলাংশে লাঘব করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন