শনিবার, ১১ জুন, ২০১১

ফিস্টুলা অপারেশনের পর


ফিস্টুলা (ভগন্দর বা নালি ঘা) মলদ্বারের একটি বিশেষ রোগ। এ রোগ পায়ুপথের ভেতরে গ্রন্থির সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। প্রথমত সংক্রমণের কারণে মলদ্বারের পাশে ফোড়া হয়। বেশ কয়েকদিন ব্যথা থাকে এবং ফুলে যায়। এরপর এটি ফেটে গিয়ে মলদ্বারের পাশের কোনো এক জায়গা দিয়ে পুঁজ বেরিয়ে যায়। অতঃপর ব্যথা এবং ফুলা কমে যায়। রোগী বেশ কিছুদিন আরামবোধ করেন। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবার মলদ্বার ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। দুই-চারদিন পর পুরনো সে মুখ দিয়ে আবার কিছু পুঁজ বের হয় এবং রোগী আরামবোধ করেন। চিকিৎসা না করা হলে এ প্রক্রিয়া বছরের পর বছর চলতে থাকে। তবে পুঁজ পড়ার বিষয়টির তারতম্য ঘটে। তবে ফিস্টুলা দীর্ঘদিন থাকলেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
ফিস্টুলা বা ভগন্দর রোগের চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। অনেক রোগী আছেন ১০-২০ বছর এ রোগে আবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করছেন কিন্তু অপারেশন করছেন না। অপারেশন করলে নাকি আবার হয় এ জন্য অনেকে অপারেশনকে ভয় পান। শেষ সময় যান হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে। হাতুড়ে চিকিৎসকের ইনজেকশনে রোগী ভীষণ ব্যথা অনুভব করেন এবং মলদ্বারে মাংসের পচন ধরে গায়ে জ্বর আসে। ওই হাতুড়ে চিকিৎসককে যদি বলা হয় এত কষ্ট, পচন ধরবে_ একথা তো আগে বলেননি। তখন তিনি উত্তর দেন, এগুলো বললে আপনি ইনজেকশন নিতেন না। এ প্রক্রিয়ার ফলে মলদ্বারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে যেমন মল আটকে রাখতে না পারা, মলদ্বার ঝুলে পড়া, মলদ্বার অতি সরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
পাইলসের চিকিৎসায় যে ইনজেকশন দেওয়া হয় তা কারও টের পাওয়ার কথা নয়। আর সপ্তাহে একটি করে মোট সাতটি ইনজেকশন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে পাইলস ছাড়া অন্য রোগে ইনজেকশন দেওয়ার বিধানও নেই। তাই আপনার আগে জেনে নেওয়া উচিত যে, রোগটি আসলেই পাইলস কি-না। এবার আসা যাক ফিস্টুলা অপারেশন করলে আবার হয় কি-না এ প্রশ্নে। যেহেতু ফিস্টুলার প্রকারভেদ রয়েছে এবং বিভিন্ন সার্জন ভিন্ন ভিন্ন অপারেশন কৌশল অবলম্বন করেন তাই এর সাফল্য তুলনা করা দুষ্কর। এ ছাড়া কী কারণে ফিস্টুলা হয়েছিল তার ওপরও ফলাফল নির্ভর করে। জটিলই হোক বা বারবার ফিস্টুলাই হোক, অপারেশনের পর আবার হওয়ার ধারণাটি অতিরঞ্জিত এবং এ অবস্থা কালেভদ্রে ঘটে। তাই অপারেশনের পর বারবার ফিস্টুলার কারণ এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায়ের বিষয়টি জটিল। ফিস্টুলা যেহেতু মলদ্বারের গভীরে মাংসপেশির ভেতর প্রবেশ করে তাই এর চিকিৎসাও জটিল। এ ধরনের ফিস্টুলা অপারেশন করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি থাকলে ভালো হয়। যেহেতু মলদ্বারের গভীরে প্রবেশ করে এবং এক ধাপে এ অপারেশন করলে রোগীর পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে তাই কয়েক ধাপে সিটন প্রয়োগের মাধ্যমে করলে অধিকতর সফলতা পাওয়া যায়।
ফিস্টুলার নালিটি বিভিন্ন দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করতে পারে। সেগুলো ধৈর্য নিয়ে খুঁজে বের করতে হবে। ফিস্টুলার ভেতরের মুখটি কোথায় তা শনাক্ত করতে হবে। অনেক সময় ভেতরের মুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।
জটিল ফিস্টুলা অপারেশনে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে ধৈর্য সহকারে সার্জনের কর্মসম্পাদন করা উচিত। যিনি প্রথম অপারেশন করেন তার হাতেই ভালো হওয়ার সর্বোত্তম সুযোগটি থাকে। বারবার অপারেশনে সাফল্যের সুযোগ কমতে থাকে। এ অপারেশনের পর বায়োপসি পরীক্ষা করা উচিত, কারণ যদি এটি যক্ষ্মার কারণে হয়ে থাকে তাহলে যক্ষ্মার ওষুধ না খাওয়ানো পর্যন্ত এটি বারবার হতে থাকবে। আবার যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে বড় ধরনের অপারেশন করতে হবে। পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যেমন ক্রনস ডিজিজ যদি সন্দেহ করা হয় তাহলে মলদ্বারের ভেতর কোলনস্কপি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এতে যদি এ রোগ ধরা পড়ে তাহলে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে ফিস্টুলা অপারেশন করতে হবে।
সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি হচ্ছে তিনটি_ ক. আবার ফিস্টুলা হওয়া, খ. বিলম্বে ক্ষত শুকানো, গ. মল ও বায়ু ধরে রাখার অক্ষমতা। বিভিন্ন গবেষণাপত্রে দেখা যায়, জটিল ফিস্টুলা আবার হওয়ার আশঙ্কা সাধারণত ৭-১৫% এবং সাধারণ ফিস্টুলা হওয়ার আশঙ্কা ৪-৯%। ক্ষত শুকাতে দেরি হয় ৭% ক্ষেত্রে। বায়ু ও মল নিয়ন্ত্রণের সামান্য অক্ষমতা ৭-১২%

1 টি মন্তব্য: