মাথায় গোল টাক বলতে যা বোঝায় তাকে বলা হয় এলোপেসিয়া
নামটাই যেন বলে দিচ্ছে টাকটা কোন ধরনের। আমরা অনেকেই জানি যে কোন টাককে বলা হয় এলোপেসিয়া। বাকি রইল এরিয়েটা। এরিয়া থেকে হয়েছে এরিয়েটা অর্থাৎ একটি জায়গা বা এরিয়াতে বিশেষ ধরনের টাককে বলা হয়েছে এলোপেসিয়া এরিয়েটা। সাধারণভাবে টাক পড়া মাথা বললে বোঝায় এমন একটি টাক যে টাক বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে দেখা যায়। যার মূল কারণই হচ্ছে বংশগত। খুশকির কারণে চুল পাতলা হয়ে আস্তে আস্তে টাকের সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এই টাক সেই টাক নয়।
এ ক্ষেত্রে হঠাৎই এ টাক দেখা দিয়ে থাকে এবং মাথায় একটি অথবা কয়েকটি অংশে বা জায়গায় চুল না থাকলে মাথার অন্য সব স্থানের চুলই একদম স্বাভাবিক থাকবে।
অনেক ক্ষেত্রেই রাতে হয়তো একদম স্বাভাবিক থাকবে। হয়তো ভালোভাবে ঘুমিয়েছিল। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়াতে গিয়ে লক্ষ্য করল, তার মাথায় একটি স্থানের চুল নেই অথবা সে হয়তো খেয়ালই করেনি। হঠাৎ একজন বলে উঠল, কী রে, তোর মাথার চুলের কী হল? কিংবা হয়তো কেউ কেউ মন্তব্য করল নিশ্চয়ই মাথার চুল ঘুমের মধ্যে ইঁদুরে কেটেছে কিংবা কেউ বলবেন, না না ইঁদুর নয়, খেয়েছে তেলাপোকায়। আসলে কিছুতেই খায়নি এ চুল। এ চুল পড়ে গেছে। এ চুল ঝরে গেছে। ঝরে যাওয়া চুল বাতাসের সঙ্গে দূরে কোথাও উড়ে গেছে। এই হচ্ছে এ টাকের বিশেষত্ব। তবে এই টাক যে শুধু মাথায় হবে তা কিন্তু নয়। এ ধরনের টাক হতে পারে মাথায়, হতে পারে দাড়ি ও গোঁফে কিংবা ভ্রƒতে। প্রথম দিকে এ টাক একটি বা দুটিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও কিছু দিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আবার একাধিক জায়গায় নাও হতে পারে। এ ধরনের চুল পড়ার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, আক্রান্ত স্থানে চুলের কোন গোড়া খুঁজে পাওয়া যায় না। চকচকে পিচ্ছিল মনে হবে স্থানটি, তবে কখনও কখনও দু-একটি চুল বা চুলের গোড়া বিদ্যমান থাকতেও পারে এবং আক্রান্ত স্থানের ত্বক দেখলে মনে হতে পারে যেন স্থানটির ত্বক একটু দেবে গেছে। আবার এ রকম দেখা নাও যেতে পারে।
কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এ টাক ক্রমান্বয়ে বেড়ে যেতে পারে। একের পর এক এ ধরনের টাক পড়তে পড়তে পুরো মাথাটাই টাক হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ মাথার সব চুলই পড়ে যাবে। এ অবস্থায় টাককে বলা হয় এলোপেসিয়া টোটালিস। অর্থাৎ টোটাল মাথাটিই একটি টাকযুক্ত মাথা। এর থেকেও ক্রমান্বয়ে বিস্তার ঘটতে ঘটতে পুরো দেহের চুলগুলোই পড়ে যেতে পারে। আর যদি এমনটি হয় তবে সেই অবস্থাকে বলা হয় এলোপেসিয়া এরিয়েটা।
এলোপেসিয়া এরিয়েটা হওয়ার কারণ কিন্তু এখনও অজ্ঞাত। কিছু কিছু কারণের উল্লেখ থাকলেও তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন, এ রোগ বুঝি কোন জীবাণুর আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। আসলে এ ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। তবে বংশগত একটা ব্যাপার এ ক্ষেত্রে থাকতে পারে। মানসিক চাপও একটি কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের টাক আপনা আপনি সেরে যায় বা চুল গজায়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই যদি এ ধরনের টাক হয় দেখা যায় তবে ভালো হওয়া বা আপনা থেকে চুল গজানোর সম্ভাবনা বেশ কম থাকে। যদি খুব বড় একটি স্থানজুড়ে এই টাক হয় কিংবা এ ধরনের সমস্যা যদি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রেও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
মাথার ছত্রাক থেকেও টাক হতে পারে। তবে সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রেই মাথার ফাংগাস বা ছত্রাক হয়। সিফিলিস থেকেও এ ধরনের টাক হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় লুপাস এরিথেমাটোসিস থেকেও এ রকম টাক হতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ নিজের অজ্ঞাতসারে চুল টেনে টেনে তুলে ফেলে এ রকম টাক সৃষ্টি করতে পারেন বা করে থাকেন। কাজেই এর সবই মাথায় রেখে এ রোগ বা টাকের ডায়াগনোসিস নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই টাক আপনা আপনি ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রে এমনটি নাও হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে তার বিপরীতও হতে পারে। যেমন আকারে বাড়তে পারে কিংবা নতুন করে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিতে পারে। তাই অবহেলা না করে বরং যত দ্রুত সম্ভব একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
নেট থেকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন