দীর্ঘদিনের অল্প অল্প জ্বর

মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪হ্ন ফারেনহাইট। শরীরের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে জ্বর বলে। অল্প অল্প জ্বর বলতে বোঝায় যখন শরীরের তাপমাত্রা থার্মোমিটারে ৯৯ থেকে ১০১হ্ন ফারেনহাইটের মধ্যে থাকে। 

বিভিন্ন কারণে শরীরে দীর্ঘদিন অল্প অল্প জ্বর থাকতে পারে। তা হল :
যক্ষ্মা, লিম্ফোমা, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া
এইচআইভি ইনফেকশন
শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া যেমনÑ ফুসফুসে ফোঁড়া, লিভারে ফোঁড়া।
কানেকটিভ টিস্যু রোগ যেমন : রিউমাটয়েড আর্থ্রাটিস, ঝখঊ.
থাইরয়েড রোগ (যেমন : হাইপারথাইরয়েডিজম),
কৃত্রিম জ্বর , ওষুধজনিত কারণে জ্বর 
অন্যান্য কারণে যেমন : ফুসফুসে ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার।
দীর্ঘদিন জ্বর থাকলে তার অন্তর্নিহিত কারণ জানার জন্য রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস নিতে হবে, এই জ্বর কখন আসে, কিভাবে আসে (কাঁপিয়ে না আপনা আপনি), কিভাবে জ্বর চলে যায় (ঘাম দিয়ে, না এমনি চলে যায়, না জ্বর কমার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হয়)। দিনের কোন ভাগে বেশি জ্বর থাকে, জ্বরের সঙ্গে অন্য কোন উপসর্গ আছে কিনা।
যেমন দীর্ঘদিনের অল্প অল্প জ্বর, বিকালের দিকে আসে, রাতে থাকে, সকালে কমে যায়, ঘাম দিয়ে জ্বর ভালো হয়ে যায়, সঙ্গে ৩ সপ্তাহের বেশি কাশি থাকে, কখনও কখনও কাশির সঙ্গে রক্ত যায়, শরীরের ওজন কমে যায়, খাবারে অরুচি থাকে, যক্ষ্মা রোগীর সঙ্গে বসবাসের ইতিহাস থাকে, তাহলে সন্দেহ করা হয় তার যক্ষ্মা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের জ্বরের ইতিহাসের সঙ্গে রাতে শরীর ঘামানোর ইতিহাস, ক্ষুধামন্দা, শরীরে চুলকানি, জন্ডিসের ইতিহাস, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্লান্ড ফুলে যাওয়ার ইতিহাস থাকলে লিম্ফোমা সন্দেহ করা হয়। 
অল্প অল্প জ্বরের সঙ্গে ডান দিকের উপরের পেটে ব্যথা, মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানার ইতিহাস, পরীক্ষা করে যদি জন্ডিস ও লিভার বড় পাওয়া যায় তাহলে সন্দেহ করা হয় লিভারে ফোঁড়া হয়েছে।
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ঘাম দিয়ে জ্বর কমা, দুর্গন্ধযুক্ত হলুদ রঙের কাশি থাকলে সন্দেহ করা হয় ফুসফুসে ফোঁড়া হয়েছে। 
দীর্ঘদিনের জ্বরের সঙ্গে যদি খাবার রুচি স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও ওজন কমে যায়, যে স্থানে কালাজ্বর হয়েছে সেখানে বসবাসের ইতিহাস, মাটির ঘরে মেঝেতে থাকার ইতিহাস, পাশে গরুর ঘর থাকার ইতিহাস থাকলে এবং পরীক্ষা করে রক্তশূন্যতা, পেটের উপরিভাগে চাকা থাকলে সন্দেহ করা হয় কালাজ্বর হয়েছে।
দীর্ঘদিনের জ্বরের ইতিহাসের সঙ্গে গিঁটে গিঁটে ব্যথা এবং সকালে ঘুম থেকে জাগার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বেড়ে যায় এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ব্যথার তীব্রতা কমে যাওয়ার ইতিহাস, মুখে ঘা, গায়ে লাল লাল দাগের ইতিহাস থাকলে কানেকটিভ টিস্যু রোগ যেমন : রিউমাটয়েড আর্থ্রাটিস, ঝখঊ হয়েছে সন্দেহ করা হয়।
স্বাভাবিক রুচি থাকা সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া, সবসময় অস্থির লাগা, বুক ধড়ফড় করার ইতিহাস, গলার সামনের দিকে উঁচু হয়ে যাওয়া (থাইরয়েড), ঢোক গিলার সঙ্গে সঙ্গে তা উঠা নামা করে, শরীর দুর্বল লাগার ইতিহাস বিশেষ করে মহিলাদের মাসিকে সমস্যার ইতিহাস থাকলে সন্দেহ করা হয় থাইরয়েডের রোগ, যেমন হাইপার থাইরয়েডিজম। 
দীর্ঘদিনের জ্বর, সঙ্গে শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকা, জ্বরের সঙ্গে নাড়ীর স্পন্দন না বাড়া, স্বাভাবিক রুচি, ইচ্ছা করে থার্মোমিটারে জ্বর বাড়ানোর ইতিহাস অথবা ওষুধ খেয়ে জ্বর বাড়ানোর ইতিহাস থাকলে সন্দেহ করা হয় কৃত্রিম জ্বর।
আরও বহুবিধ কারণে দীর্ঘকালীন অল্প অল্প জ্বর থাকতে পারে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক ইতিহাস দিয়ে এবং সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে বেশিরভাগ রোগ ভালো করা সম্ভব।

নেট থেকে