আমাদের উপমহাদেশে, অসংখ্য মানুষ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কফ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগেন। অনেকসময় শীতকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনেও কফ সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। আমাদের দেশের মানুষ এক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক ও বাসায় তৈরি টোটকা ব্যবহার করেন। এতে তারা সাময়িক মুক্তি পান, কিন্তু কখনোই একবারে ভালো হয় না, কারণ তারা কফের কারণ সমন্ধে অনুসন্ধান করে না। দীর্ঘদিনের শুষ্ক কফ একটি চিন্তার বিষয়। সঙ্গে রক্ত বের হলে তা আরও ভয়নক। এটা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই প্রত্যেকের উচিত
এসময় গলার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা। ড. কে কে পান্ডে ভারতের, নয়াদিল্লির ইন্দ্রাপ্রস্থা এপোলো হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক ও ভাসকুলার সার্জারির একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট । এ প্রসঙ্গে তার নিবন্ধটি আমাদের অর্থনীতি পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো:
কফের সময় কেন রক্ত বের হয়?
কফের সময় রক্ত বের হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে যক্ষাজনিত সংক্রমণ। এটা যখন যতœ ও চিকিৎসা ছাড়া চরম আকার ধারণ করে তখন রক্ত বের হয়। রোগীর অবস্থা মারাত্মক হলে অতিরিক্ত রক্তপাত ও সুস্থ অপর ফুসফুসে রক্ত গিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।
সাধারণত দেখা যায়, যক্ষার চিকিৎসার পরে ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার পরও কফের সময় রক্ত বের হয়। এর কারণ, সংক্রমণের ফলে ফুসফুসে গর্ত সৃষ্টি হয়। সেখানে অন্যান্য ছত্রাক ঢুকে অবস্থান করতে থাকে। একে বলা হয় এসপারজিলোমা। আমাদের দেশে অনেক মানুষ এতে ভোগে ও ভুল চিকিৎসা করে। এতে সুস্থ অপর ফুসফুসটিও আক্রান্ত হয় ও রোগীর মৃত্যু ঘটে।
ফুসফুসের নিয়মিত সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকুন
কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ব্রঙ্কিয়াক্টাসিস। এতে ফুসফুসের বায়ু নালিকাগুলো সংক্রমণের ফলে ফুলে যায় ও প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এসময় বায়ু নালিকাগুলো বুক থেকে শ্লেষ্মা বের করতে পারে না। এতে থুথু ঘন হয়ে বায়ুনালিকাগুলোয় জমা হতে থাকে। বায়ুনালিকাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত রক্তনালী চিকন হয়ে প্রসারিত হতে থাকে। শেষে তা বিদীর্ণ হয়ে মুখ দিয়ে রক্তসহ শ্লেষা বের হয়ে আসে। তাই এ ধরনের রোগীর উচিত এসময় গলার ডাক্তারের অথবা বক্ষ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা।
সিগারেট ত্যাগ করুন, এতে ফুসফুস ক্যান্সার হয়
কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে ফুসফুস ক্যান্সার। এতে শরীরের রক্তবাহী নালিকাগুলো চিকন হয়ে যায়। যদি একজন ক্রমাগত ধূমপায়ীর কফের সঙ্গে রক্ত বের হয় তার ক্যান্সারের আশঙ্কা রয়েছে।
ফুসফুসের ফোড়ার জন্যে রক্ত যেতে পারে
কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে ফুসফুসের ভেতর পুঁজ জমা হওয়া। মারাত্মক অবস্থায় রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়ে যায়, তাতে চাপ বেড়ে রক্তনালীগুলো ফেটে রক্ত বের হয়।
কফের সঙ্গে রক্ত, কোথায় যেতে হবে?
যদি কফের সঙ্গে রক্ত যায়, বসে না থেকে দ্রুত বক্ষ শল্যবিদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সমস্যার কারণ ও ব্যাপকতা নির্ণয়ে ব্রঙ্কোস্কপি, থোরাসোকপি, মিডিয়াস্টিনোকপি, সিটি গাইডেড বায়োপসি, প্যারাস্টানটর্মি ইত্যাদি আধুনিক পরীক্ষা রয়েছে।
শ্লেষার সঙ্গে রক্ত গেলে কী করতে হবে?
শ্লেষার সঙ্গে রক্ত গেলে দ্রুত বক্ষ শল্যবিদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ও এর কারণ বের করা উচিত। পরীক্ষার জন্যে বুকের এক্স-রে, মাল্টিস্লাইড সিটি স্ক্যান, এমআরআই ও বায়োপসি করা উচিত। যদি একটি ফুসফুস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় তবে দ্রুত তা ফেলে দেওয়া উচিত, তাহলে অপর ফুসফুসটি অক্ষত থাকবে। ক্যান্সার হলেও অপর ফুসফুস ফেলে দেওয়া উচিত কারণ কিডনির মতো একটি ফুসফুস নিয়েও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে।
নেট থেকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন