সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হবু মায়ের ত্বকের যত্ন ...

মা হওয়ার মধ্য দিয়ে নারীর জীবনে পূর্ণতা আসে। প্রতিটি মেয়ের মনেই আশৈশব লালিত থাকে মা হওয়ার স্বপ্ন। আর তাই মাতৃত্ব নিয়ে আসে অনির্বচনীয় আনন্দের স্বাদ। এ সময় অনাগত সন্তানের কথা ভেবে মাকে নিতে হয় বাড়তি যত্নের। বাড়তি যত্ন বলতে সবাই বুঝে খাওয়া-দাওয়ার কথা। আর তাই ঘুরে-ফিরে অভিভাবকেরা গর্ভবতী মায়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন কখনো দুধের গ্লাস, কখনো বা ফলের জুস। কিন্তু গর্ভবতী মায়ের ত্বকের যত্নের কথা যেন সবাই ভুলে যান। অনেকেই হয়তো ভাবছেন,
গর্ভবতী মায়ের আবার ত্বকের যত্ন ? এ সময় মায়ের ঠিকমত খাওয়া-দাওয়াটাই তো মুখ্য। তবে একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় গর্ভাবস্থায় একজন মেয়ের ত্বকে দেখা দেয় মেছতা, ব্রণ, কালো কালো ছোপ। আবার কখনো বা ত্বক ফেটে যায়। তাই এ সময় যদি সঠিক যত্ন নেয়া না হয় তবে ত্বকের এ সমস্যাগুলো স্থায়ী হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারনে মূলত ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
            
গভাবস্থায় শরীর পূর্বের তুলনায় ভারী হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে ময়লা জমতে পারে। তাই এ সময় নিয়ম করে সপ্তাহে অন্তত একদিন হালকা গরম পানি দিয়ে সারা শরীর হালকা ম্যাসাজ করে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন গোসলের পরে তলপেটে আস্তে আস্তে অলিভ ওয়েল অথবা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ লোশন মালিশ করা ভালো। তাহলে পেটের ত্বক সহজে প্রসারিত হবে এবং ত্বকে টান কম পড়ার কারণে সাদা দাগ কম হবে।
মুখের ত্বকের ধরন বুঝে সপ্তাহে একবার ঘরে তৈরি করা প্যাক ব্যবহার করা  উচিত।  তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সিকি চামচ মধু, শসা, গাজরের রস, মেথি গুঁড়া দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা ভালো। যেকোনো রকম ত্বকে মধু ব্যবহার করা যাবে, কারণ মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য কাঁচা হলুদ, মধু, মুলতানি মাটি, মসুর ডাল দিয়ে বেটে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে কাজে দেয়। শুষ্ক ত্বকের জন্য কাঠবাদাম পেস্ট, সয়াবিন পাউডার, গাজরের রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ত্বক হবে মসৃণ। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো।
অনেক সময় ত্বকে কালো বা বাদামি রঙের মেছতা দেখা যায়। অবহেলা করলে এই মেছতার দাগ স্থায়ীভাবে বসে যেতে পারে। মেছতার দাগ তোলার জন্য তেঁতুলের রস ও মধু দিয়ে ম্যাসেজ করে ডিমের সাদা অংশ, ডাবের পানি, কাঁচা হলুদ দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। ব্রণের সমস্যা হলে ব্রণ যেখানে উঠেছে সেখানে লবঙ্গ গুঁড়া পেস্ট করে লাগালে ব্রণ কমে যায়।
এছাড়া নারকেল তেল ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে বেশ ভালো কাজ করে। মুখে নারকেল তেল লাগান। সুতির রুমাল গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালোমতো নিংড়ে নিন। মুখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। মুখটা মুছে নিয়ে এবার গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। সব ধরনের ত্বকেই এটি মানিয়ে যাবে।
গর্ভকালীন অনেকের চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। আমলকী, হরীতকী, বহেড়া, টকদই, ডিম, কাঁচা মেহেদি দিয়ে চুলের প্যাক তৈরি করে ১০ দিন অন্তর ব্যবহার করলে চুল ঝরঝরে থাকবে, চুল পড়া কমে যাবে। আর চুলে নিয়মিত তেল দিতে হবে। তবে রাতে তেল দিয়ে সকালে শ্যাম্পু করলে ভালো।
শুধুমাত্র ত্বক এবং চুলের যত্ন নিলেই হবে না এসময় একজন গর্ভবতী মা’কে তার পরিধেয় পোশাক এবং জুতা ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।
যেহেতু এ সময়ের মধ্যে জরায়ুর আকৃতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাই যাতে পেটের ওপর চাপ কম পড়ে এবং চলাফেরায় আরাম পাওয়া যায় সে জন্য ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। অর্ন্তবাসও এ অনুপাতে ঢিলে নিতে হবে। এ সময় সিনথেটিক কাপড় ব্যবহার না করে সুতি কাপড় ব্যবহার করা উচিত। আর রাতে তো অবশ্যই ঢিলেঢালা নরম কাপড় ঘুমানো উচিৎ এতে ঘুম ভালো হয়। আর ভালো ঘুম হলে শরীর এবং ত্বক দুটোই ভালো থাকবে। 
গর্ভাবস্থায় উঁচু হিলের জুতা ব্যবহার করা উচিত নয়। জুতা নরম ও ঠিক মাপমতো হওয়া আবশ্যক। যেসব জুতা পরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা যাবে শুধু সেগুলোই ব্যবহার করা উচিত। এ সময় শরীরের ওজন ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাই ভারি দেহের ভারসাম্য রক্ষার্থে নিচু অথবা মাঝারি হিলের জুতা ব্যবহার করা উচিত।

নেট থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন