রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৪

এখনই গ্যাস্ট্রিক পেইনকে বিদায় বলুন

আপনি রাতে ঘুমাতে গেছেন হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আপনি অনুভব করলেন আপনার তীব্র পেটে ব্যাথা আর বুক জ্বালাপোড়া । এই ব্যাথা আরও গত কয়েক রাত ধরে আপনি অনুভব করেছেন। কিংবা আপনি কোন দাওয়াতে খাচ্ছেন খাবার পর হঠাৎ তীব্র পেটে ব্যাথা কিংবা আমার মতো যারা দীর্ঘদিন হোস্টেল মেসে থাকেন বা বাইরের খাবার খেতে হয় প্রতিদিন তারা মোটামোটি এই রোগের সাথে পরিচিত। হ্যা আমি আপনাদের গ্যাস্ট্রিক পেইন বা মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় পেপটিক আলসার ডিজিস এর কথা বলছি। 

কেন এই পেপটিক আলসার ডিজিস ?? 
১।মুলত ৮০-৮৫% পেপটিক আলসার সংঘটনের জন্য দায়ী H.Pylori নামক ব্যাকটেরিয়া। এখন প্রশ্ন হল H. Pylori কিভাবে আমাদের শরীরে ক্ষতি করে?
মুলত H.Pylori আমাদের লালার মাধ্যমে পাকস্থলিতে প্রবেশ করে। আমাদের পাকস্থলিতে থাকা অম্লীয় পরিবেশে এরা ভালো ভাবেই survive করে এবং বিভিন্ন এনজাইম তৈরি করে পাকস্থলির অম্লকে নিরপেক্ষ করে ফেলে। যা আমাদের খাদ্য পরিপাকে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এছাড়াও এরা ডিওডেনাম ও পাকস্থলির মিউ কাস মেমব্রেনের লাইনিং নষ্ট করে ফেলে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি করে। 
এছাড়াও 
 যথেচ্ছ ও নিয়ম নীতি না মেনে বিভিন্ন রকম পেইন কিলার ও NSAIDs জাতীয় ট্যাবলেট খেলে
 ধূমপান
 অতিরিক্ত চা কফি পান করা
 অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য সেবন
 অতিরিক্ত গরম, ঝাল ও মসল্লা দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে
 মানসিক চাপ, টেনশন, ভয় 
 পাকস্থলিতে অতিরিক্ত অম্ল সৃষ্টি হলে
 যোলিনগার–এলিসন সিনড্রোম 
পেপটিক আলসারের লক্ষনঃ

 মুলত পেপটিক আলসারের ব্যাথাটি Epigastrium অঞ্চলে(চিত্র-২) অর্থাৎ আপনার বুকের নিচের দিকে অর্থাৎ পেটের উপরিদিকে জ্বালাপোড়া ধরনের যন্ত্রণা (burning pain) অনুভূত হবে।
 বেশিরভাগ সময়েই ব্যাথাটি রাতের বেলায় অনুভূত হয়।
 পেট খালি থাকা অবস্থায় ব্যাথা অনুভূত হতে পারে।
 বমি বমি ভাব, অনেক সময় বমিও আসতে পারে।
 পেট ফুলে যায়।
 অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়া করে।
Severe case, উপরোক্ত লক্ষণগুলো ছাড়াও 
 রক্ত বমি হবে( coffee-grounds বর্ণের) 
 পায়খানার সাথে রক্ত যাবে(পায়খানার রঙ হবে গাঢ় কালো বর্ণের)
 জ্বর থাকতে পারে
 শরীরের ওজন কমে যাবে
 মাথাব্যাথা থাকতে পারে। যদি দীর্ঘদিন পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না করেন তাহলে,
 পরিপাক তন্ত্র (গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টাইনাল ট্র্যাকে) ক্রমাগত রক্তপাত হবে ফলশ্রুতিতে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হবেন। 
 পাকস্থলি ও বৃহদান্ত্রের প্রাচীরে ছিদ্র ছিদ্র হয়ে যায়। 
 ক্ষত ও স্ফীত হয়ে ডিওডেনাম ক্রমাগত সরু হয়ে পাচক নির্গমনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। 
 পাকস্থলি বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪-৬ গুন বাড়িয়ে দেয়। 

চিকিৎসাঃ 
 যদি আপনার পেপটিক আলসারের কারন H.Pylori হয় সেক্ষেত্রে নিন্মলিখিত ওষুধ শুরু করতে হবে।
Tablet Rolacin 500 mg ১২ ঘণ্টা পরপর মোট ৭ দিন 
+
Tablet Opton 20 mg ১২ ঘণ্টা পরপর মোট ৭ দিন 
+
Tablet Filmet 400 mg ১২ ঘণ্টা পরপর মোট ৭ দিন 
 এখন ধরুন আপনার আলসারের সমস্যা নেই কিন্তু খাবার পর হঠাৎ পেটের উল্লেখিত অংশে ব্যাথা শুরু হল তখন আপনি 
Tablet Flatameal DS ১টা চুষে অথবা Flatameal DS suspension ২ চামচ খেতে পারেন। 
এখানে উল্লেখ্য Antacid জাতীয় ট্যাবলেট চুষে খেতে হয় এবং খাবার পরবর্তী ১০-১৫ মিনিট তরল বা কোন খাবার গ্রহন না করাই উত্তম। 
 এছাড়াও যারা নিয়মিত গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগেন তারা প্রতিদিন Tablet Asinar or Tablet Neoceptin R 150 mg ১২ ঘণ্টা পরপর খেতে পারেন। 
 এছাড়াও তল পেটের ব্যাথা কমানোর জন্যে Tablet Visceralgine or Tablet Norvis 50 mg ১টা খেতে পারেন। 
 অনেকেই যে ভুলটা করে থাকেন সেটা হল আমাশয়ের ব্যাথার সাথে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা মিলায় ফেলেন। আমাশয়ের ব্যাথা Umbilical অঞ্চল(চিত্র-২)আপনার নাভির নিচের দিক বরাবর কিংবা আশেপাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হবে। কিন্তু আলসারের ব্যাথা নাভির উপরে ও বুকের নিচ বরাবর অনুভূত হবে। 
এছাড়াও 
 ধূমপান ত্যাগ করুন
 অতিরিক্ত মসল্লা দিয়ে তৈরি খাবার বর্জন করুন
 ফাস্ট ফুড অভ্যাস ত্যাগ করুন
 প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করুন ও হাঁটুন
 অতিরিক্ত চা ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য পান হতে বিরত থাকুন।
 অপ্রয়োজনীয় Paracitamol, aspirin জাতীয় পেইন কিলার ট্যাবলেট সেবন হতে বিরত থাকুন। 
 NSAIDs ড্রাগ যেমন Paracitamol ,aspirin জাতীয় পেইন কিলার ট্যাবলেট সেবনের পূর্বে অবশ্যই Anti Peptic Ulcer Drugs যেমন Tablet Asinar or Tablet Neotack 150 mg or Tablet Nexum 20 mg খেয়ে নিতে হবে। 
 যদি আপনার আলসারের সমস্যা ক্রমাগত ও দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকে তবে অতিসত্বর একজন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরে পরামর্শ নিন। 

নিউক্লিওলাস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন