শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১০

শিশুর অটিজম: বিদেশে চিকিৎসা

বাংলাদেশে অটিজমের চিকিৎসা (শনাক্তকরণ ও নিবিড় পরিচর্যা) সুবিধা অপ্রতুল বলে কেউ কেউ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী-
১. অটিজম আছে এমন তথ্যের উল্লেখ থাকলে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভিসা পেতে অসুবিধা হতে পারে, বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউএসএ, ইউকে'র মতো দেশে। তাই সঙ্গতি থাকলে শিশু যথাসম্ভব ছোট থাকতেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
২. দীর্ঘ মেয়াদের জন্য উন্নত কোন দেশে অবস্থানের সুযোগ পেলেও মনে রাখবেন, সাধারণ হেলথ ইন্সুরেন্স অটিজমের চিকিৎসার খরচ বহন নাও করতে পারে।
৩. সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না হলে চিকিৎসায় বিপুল অর্থ ব্যয় হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমান তালিকায় থাকার সম্ভাবনা আছে।
৪. কিন্ডারগার্টেন/প্রি-স্কুল এবং বিশেষায়িত প্রাথমিক স্কুলে ভর্তিও ব্যয়সাপেক্ষ।
যে কোন দেশে চিকিৎসার জন্য যাবার আগে এসব বিষয়ে নিশ্চিত হোন।
এই সাইটে মাঝেমধ্যে কোন কোন পাঠক বিদেশে অটিজমের চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চান। তাদের জ্ঞাতার্থে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু তথ্য সন্নিবেশিত করে দিচ্ছি। মনে রাখতে হবে, সংশ্লিষ্ট দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিশুর বয়স, ভিসার ধরণ, নাগরিক সুবিধার প্রাপ্যতা এমন কিছু বিষয়ভেদে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হয়তো অভিন্ন থাকবে না।
অস্ট্রেলিয়ায় ভিক্টোরিয়া প্রদেশে ৩ থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা প্রিস্কুল বা কিন্ডারগার্টেনে যায়। স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত প্রিস্কুলের পাশাপাশি সরকারী কাউন্সিল পরিচালিত কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যাই বেশি।
প্রথাগত লেখাপড়া নয়, বরং ছবি আঁকা, ব্লক দিয়ে কোন মডেল তৈরি, আকৃতি ও রং চেনা, সমবেত খেলাধূলা, ছড়াগান, নিজস্ব স্কুলব্যাগ-টিফিনবক্স ইত্যাদি সামলে রাখা, দৈনন্দিন সামাজিকতা-সম্ভাষণের মতো কাজে শিশুকে অভ্যস্ত করার জন্য কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত থাকেন। অটিজম থাকলে শিশু সামাজিক যোগাযোগসহ অন্যান্য যেসব সীমাবদ্ধতায় ভোগে, সচেতন শিক্ষক সেটা আন্দাজ করে শিশুর পরিবারকে অবহিত করেন। পাশাপাশি প্রি-স্কুল ফিল্ড অফিসারকে অবহিত করেন।
প্রি-স্কুল ফিল্ড অফিসার কিন্ডারগার্টেন এবং বাসায় বিভিন্ন অবস্থায় (situation) শিশুটিকে দীর্ঘসময় ধরে পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ-রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টের কপি শিশুর পরিবারকে দেয়া হয়, যাতে পরবর্তী করণীয়ের দিকনির্দেশনাও থাকে। একইসঙ্গে হাসপাতালে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে শিশুটিকে Developmental Assesment-এর জন্য রেফার করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রি-স্কুল ফিল্ড অফিসারের পত্রপ্রাপ্তি সাপেক্ষে শিশুর অভিভাবককে প্রয়োজনীয় ফর্ম প্রেরণ করেন। এগুলোর মধ্যে থাকে Background Information Form, Consent to Exchange Information Form ইত্যাদি। এসব ফর্ম পূরণ করে হাসপাতালে Assesment Teamকে সরবরাহ করতে হয়। প্রক্রিয়ার শর্ত অনুযায়ী শিশু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে শিশুর শারীরিক অবস্থা, পথ্য, টিকা ইত্যাদির রিপোর্ট সংগ্রহ করে Assesment Teamএর কাছে জমা দিতে হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে অ্যাসেসমেন্ট টিম শিশুকে পর্যবেক্ষণ করেন। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টটি বিভিন্ন কারণে দীর্ঘসূত্রিতায় গড়াতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমান তালিকায় থাকার চেয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করিয়ে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে।
অ্যাসেসমেন্টের প্রথম পর্যায়ে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি যাচাই করা হয়। এরপর পেডিয়াট্রিশিয়ান, স্পিচ প্যাথোলজিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্টসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাসেসমেন্ট টিম শিশুকে কয়েক ঘন্টা ধরে পরীক্ষা করে যেসব বিষয় যাচাই করেন সেগুলো হলো-
মোটরস্নায়ুর ক্ষমতা,
বাকশক্তি ও ভাষাগত দক্ষতা,
খেলাধূলা ও আগ্রহের বিষয়,
সামাজিক আচরণ, ব্যবহার, নিজস্ব দেখভালের দক্ষতা
ইন্দ্রিয়ানুভূতি,
কাজের রুটিনে অভ্যস্ততা ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞদের নিজ নিজ রিপোর্টসহ সমন্বিত অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট তৈরি হতে কিছুদিন সময় লাগে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের বিবরণসহ CARS (Childhood Autism Rating Scale) স্কোর উল্লেখপূর্বক মন্তব্য ও পরামর্শ থাকে। অটিজম শনাক্ত করা হলে প্রয়োজনীয় থেরাপি ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন