শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১০

হাঁটু মচকে গেলে

বাস্তব সত্য যে, জীবনের কোনো না কোনো সময় যে কেউ হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়। শরীরের বড় ও ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে হাঁটু অন্যতম। হাঁটু এমন একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ জোড়া, যা বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌড়াতে, ওপরে উঠতে এবং নামতে একান্ত প্রয়োজন। হাঁটু তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট ও দুটি মেনিসকাস (তরুণাস্থি) থাকে। লিগামেন্ট হলো টিস্যু, যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে, জোড়ায় শক্তি প্রদান করে, হাড়ের নড়াচড়ায় অংশগ্রহণ করে এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। মেনিসকাস শরীরের ওজন সমভাবে ঊরুর হাড় থেকে পায়ের হাড়ে সরবরাহ করে, হাড়ের প্রয়োজনীয় নড়াচড়ায় সহায়তা করে এবং জোড়ার দৃঢ় অবস্থা বজায় রাখে। বিভিন্ন ইনজুরির মধ্যে মচকানোতে (টুইসটিং) হাঁটু বেশি আক্রান্ত হয় এবং এতে হাঁটুর লিগামেন্ট ও মেনিসকাস ইনজুরি হয়ে থাকে। মচকানোর কারণে লিগামেন্ট বিস্তৃত হতে এবং আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। হাঁটু মচকানোর জন্য মেনিসকাসের বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি ছাড়াও মেনিসকাস আংশিক বা সম্পূর্ণ টিয়ার হতে পারে। ৭০ ভাগ ব্যক্তির এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরির সঙ্গে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে।
মচকানো ইনজুরির কারণগুলো
* হঠাৎ মোচড়ানো গতি, যেকোনো দুর্ঘটনা অথবা আঘাত।
হাঁটুর ইনজুরির লক্ষণগুলো
প্রথমে তীব্র ব্যথা, পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে।
ব্যথা হাঁটুর বাইরের পাশে এবং পেছনে অনুভূতি হবে।
হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়।
আঘাতের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়।
ফোলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না।
দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু খুলে বা বেঁকে যাচ্ছে। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি 'পপ' বা 'ক্র্যাক' শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে।
বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়। অনেক সময় হাঁটু আটকে যায়। রোগী হাঁটুকে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে। * উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়। * হাঁটু অস্থিতিশীল বা খুলে বা ঘুরে যাচ্ছে, এ রকম মনে হবে। * দীর্ঘদিন লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশি শুকিয়ে যায় এবং শক্তি কমে আসে।
প্রাথমিক করণীয়
হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। বরফের টুকরো টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পল্গাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফোলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দু'ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে এটি সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এ পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। হাঁটুতে ইলাসটো কমপ্রেসন বা স্পিলিন্ট ব্যবহারে ফোলা ও ব্যথা কমে আসে। হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফোলা কম হবে। অ্যানালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম এমন চিকিৎসকের কাছে বা সেন্টারে রোগী পাঠাতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন