বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১১

অল্প বয়সেই লিভার ক্যান্সার

দেশে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরে এই হার আশংকাজনক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মূলত বিষাক্ত কেমিক্যাল ও রংয়ে তৈরি ভেজাল খাদ্য গ্রহণের জন্য কিশোর-তরুণদের মধ্যে এই জটিল ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে।

দেশী-বিদেশী লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, বাংলাদেশে যেভাবে লিভারের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধি বাড়ছে তা এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। গর্ভবতী মা ও পেটের সন্তানসহ সকল বয়সের মানুষের লিভার ক্যান্সারসহ জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। এই ঘাতক ব্যাধি ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রী প্রতিরোধে সময় থাকতে সংশিস্নষ্ট প্রশাসনসহ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ২০২০ সাল নাগাদ মরণব্যাধি লিভার ক্যান্সার এ দেশে মহামারি আকার ধারণ করবে। এই মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে কিশোর থেকে তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েদের সংখ্যা সর্বাধিক বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান।

গত ১২ জানুয়ারি থেকে ৫ দিন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বামংরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে সেখানে চিকিৎসারত বাংলাদেশী রোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় , তাদের মধ্যে বেশির ভাগই লিভার ক্যান্সারসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত। আক্রান্তের মধ্যে বেশির ভাগ কিশোর থেকে তরুণ বয়সের ছেলে-মেয়ে। এই হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নয়। প্রাথমিকভাবে কারণ অজ্ঞাত হলেও খাদ্যাভ্যাস থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে, কিশোর ও তরুণ বয়সে তাদের লিভার ক্যান্সারসহ জটিল ব্যাধি হওয়ার জন্য বিষাক্ত কেমিক্যাল ও রংয়ের সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্য সামগ্রীই দায়ী। শুধু তাই নয়, গর্ভবতী মা ও শিশুরা মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে। প্রতিদিন এদেশ থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত মা ও শিশু এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আক্রান্তদের পরিবার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। লিভার ক্যান্সার ছাড়াও কিডনি, ডায়াবেটিস, হূদরোগ, অন্যান্য ক্যান্সার বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে বাড়ছে বলেও বামংরুনগ্রাদ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।

লিভার বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মবিন খান বলেন, দেশব্যাপী সকল সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে আগত রোগীদের মধ্যে ১০ ভাগ লিভার ক্যান্সারসহ জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত। সম্প্রতি এসব রোগীর উপর জরিপ চালিয়ে এই মরণব্যাধি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এদেশে সাধারণত লিভার ক্যান্সার লিভার সিরোসিস হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে শিশু-কিশোর ও তরুণ বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এই দুইটি ভাইরাস ছাড়াই লিভার ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিষাক্ত কেমিক্যাল ও রং সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্যসামগ্রী। বিশেষ করে ফাস্ট ফুড খেতে অভ্যস্ত শিশুদের মধ্যে লিভার ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধিতে আক্রান্তের হার বেশি। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা বেশি বলে তিনি জানান।

কান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, কিশোর ও তরুণ বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্তের হার গত ২ বছর ধরে বাড়ছে। এর কারণ হিসাবে তিনিও ভেজাল খাদ্যসামগ্রীকেই দায়ী করেছেন। গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রাশিদা বেগম বলেন, শাকসবজি, ফলসহ নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী গর্ভবতী মায়েদের খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। পরামর্শ অনুযায়ী তারা নিয়মিত এই সকল খাবার খাচ্ছেন। কিন্তু তারা জানে না, খাদ্যের নামে তারা বিষ খাচ্ছে। এ কারণে মা ও শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিমত ব্যক্ত করেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরো বলেন, রোগীরা সাধারণ পেট ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকদের নিকট আসে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের অনেকের লিভার ক্যান্সারে নষ্ট হয়ে গেছে। যা চিকিৎসা দিয়েও লাভ হয় না। নিরব ঘাতক এই মরণব্যাধি থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং রং সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্যসামগ্রী ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ একমাত্র উপায় বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত পোষণ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন