শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১১

বিষণ্নতা

শীতকালে আমাদের মধ্যে কিছুটা আড়ষ্ট ভাব, বিষণ্নতা এবং উদ্যমহীনতা দেখা যায়, যা একটি স্বাভাবিক মনোদৈহিক পরিবর্তন। কিন্তু যদি এ বিষণ্ন ভাব আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটায় এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ শীতকালে বিষণ্নতার প্রকোপ বেশি, যা 'শীতকালীন বিষণ্নতা' নামে পরিচিত। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মানসিক রোগের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী শীতকালীন বিষণ্নতা, বিষণ্নতার আলাদা কোনো প্রকারভেদ নয়; একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। শীতপ্রধান দেশে এ ধরনের বিষণ্নতার প্রকোপ বেশি এবং মহিলাদের ঝুঁকির পরিমাণ পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ। যারা দিনের বেশিরভাগ সময় অপর্যাপ্ত আলোতে ঘরের ভেতর কাজ করেন তাদেরও এ সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালীন বিষণ্নতার হার শতকরা দুই থেকে দশভাগ। নরম্যান-ই-রোসেন্থাল ১৯৮০ সালে বিষয়টির ওপর প্রথম গবেষণা করেন ও এর নামকরণ করেন উইন্টার ব্লু। এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ_ যে কারণে সকালে বিছানা থেকে উঠতে অনীহা, শর্করা ও মিষ্টি জাতীয় খাবারে বেশি আগ্রহ, ওজন বৃদ্ধি অন্যতম। অনেক সময় শীতকালীন বিষণ্নতার সাধারণ উপসর্গ যেমন_ সব বিষয়ে অনাগ্রহ, একাকিত্ব বোধ, বন্ধুবান্ধব ও সামাজিকতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, নেতিবাচক চিন্তা, অপরাধ বোধে ভোগা ও জৈবিক আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া প্রভৃতি দেখা যায়। এ ধরনের বিষণ্নতার কারণ শীতকালে দিনের ব্যাপ্তি ও সূর্যালোকের উপস্থিতি কমে যাওয়া এবং আমাদের দেহঘড়ির পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে চলার সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়টি আবার মস্তিষ্কের স্নায়ুচক্রের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে থাকে, যা সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন নামক মস্তিষ্কের রাসায়নিকের তারতম্য ঘটায়; যার পরিণাম বিষণ্নতা। গবেষণায় জানা যায়, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম, দিনের বেলায় আবদ্ধ ঘরে পর্যাপ্ত কৃত্রিম আলো (ফ্লুরোসেন্ট লাইট), কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকা, বন্ধুসানি্নধ্য ও সামাজিকতা শীতকালীন বিষণ্নতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু কেউ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে গেলে তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন, লাইটথেরাপি ও সাইকোথেরাপির চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যথায় শীতকালীন বিষণ্নতার কারণে কর্মক্ষমতা ও উদ্যম হ্রাস, আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি এবং আত্মহত্যা সংঘটিত হতে পারে। এজন্য এ বিষয়ে সচেতন হোন; সবসময় উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান। শীতকালীন বিষণ্নতা থেকে মুক্ত থাকুন ও জীবন উপভোগ করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন