শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১১

ঘুম

 
 
ঘুম সারাদিনের ক্লান্তি, পরিশ্রম দূর করে সতেজ করে তোলে। চাঙ্গা হয় দেহমন। ঘুম ঠিকমতো না হলে সারাদিন কাটে অসহ্য ক্লান্তিতে, মেজাজ হয় খিটখিটে। অসহ্য লাগে পুরো পৃথিবী। যাদের রাত কাটে নিদ্রাহীনতায় কেবল তারাই বোঝেন এর যন্ত্রণা। অনেকেই বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন। কয়েকবার ঘুম থেকে জেগে যান, সকালেই ঘুম থেকে জেগে যান। আবার অনেকে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরও মনে হয় ঘুম ভালো হয়নি। তারাই নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত। কেউবা নিদ্রাহীনতায় ভোগেন স্বল্প সময়ের জন্য। আবার কারও রাতের পর রাত কাটে নির্ঘুম। ফলে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। বিভিন্ন কারণে নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। ক্যান্সার, হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস, মানসিক চাপ, অবসাদ, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, বেডরুমের বেশি আলো ও শব্দের কারণে হতে পারে নিদ্রাহীনতা। যারা স্বল্প সময়ের জন্য নিদ্রাহীনতায় ভোগেন তাদের সমস্যা মিটে যেতে পারে আপনাআপনি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি নিদ্রাহীনতার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসা। চিকিৎসা কিন্তু নিজের হাতে। পরিবর্তন করতে হবে ঘুমের অভ্যাস, মেনে চলতে হবে নিয়মকানুন। দিনের বেলার ঘুম রাতের ঘুমকে ব্যাহত করে। দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে বাদ দিন। চা-কফি রাতে পান না করাই ভালো। ভালো ঘুমের জন্য মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান, এমনকি ছুটির দিনেও। ঘুমানোর আগে পড়তে পারেন মজার কোনো বই। ঘুমের আগে জটিল কোনো আলোচনা থেকে বিরত থাকুন। রাতে কম্পিউটার ব্যবহার, ইন্টারনেটে বসে চ্যাট, টিভি দেখার অভ্যাস দূর করুন। বেডরুম হতে হবে ঘুমের উপযোগী। অতিরিক্ত আলো ও শব্দমুক্ত হতে হবে। হতে হবে শীতল। রাতের খাবার শোয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগেই শেষ করুন। ডিনারে পরিহার করুন রিচ ফুড, চর্বি জাতীয় খাবার। অবশ্য ঘুমানোর আগে হালকা স্ন্যাকস ঘুম ভালো করে। অতিরিক্ত তরল পানে বারবার প্রস্রাব রাতের ঘুমে ব্যাঘাত করতে পারে। সিগারেটের নিকোটিন মস্তিষ্ককে উদীপ্ত করে নিদ্রাহীনতার কারণ হতে পারে। ঘুমের আগে কোনো ধূমপান নয়। ব্যায়াম ঘুম গাঢ় করে। তাই বলে ব্যায়াম নয় বিছানায়। কমপক্ষে ঘুমানোর ৫-৬ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম শেষ করুন। ঘুম না এলে বিছানায় শুধু শুধু শুয়ে থাকবেন না। বিছানা থেকে উঠে কম মনোযোগ দিতে হয় এমন কাজ যেমন বই, পত্রিকা পড়া, মৃদু বাজনার গান শুনতে পারেন। কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমাবেন না। সমস্যার সমাধান করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ূন।
ঘুম না এলে করতে পারে রিলাক্সেশন টেকনিক। শুয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন। প্রতিবারের শ্বাস হতে হবে আগেরবারের চেয়ে গাঢ়। পায়ের মাংসপেশিগুলো টানটান করে কিছুক্ষণ ধরে রেখে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। এভাবে প্রতিটি মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ করতে পারেন। ভাবতে থাকুন কোনো সুখস্মৃতি। ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ না ঘুমাতে পারার যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই আছেন একটু ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলেই শুরু করেন ঘুমের ওষুধ সেবন। এটা একেবারেই উচিত নয়। ঘুমের ওষুধ সেবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ওষুধের আছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এক সময় এমন অবস্থা দেখা দেয় যে ওষুধ সেবন ছাড়া ঘুম আসেই না। তাই দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে পারেন ওষুধ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন