শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১১

ডায়াবেটিস নিয়ে ভুল ধারণা

 
প্রচলিত ভুল ধারণা : চিনি বেশি খেলে ডায়াবেটিস হয়।
বাস্তব সত্য : না, এটি সত্য নয়। জিনগত এবং কিছু অজানা প্রভাবক টাইপ-১ ডায়াবেটিসের কারণ। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ জিনগত এবং জীবনযাত্রার ধরন। ওজন বেশি হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে এবং বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার, তা চিনি বা চর্বি যেখান থেকেই আসুক না কেন, ওজন বাড়ায়। কারও যদি ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে তার উচিত হবে স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখা।
প্রচলিত ভুল ধারণা : শুধু বেশি ওজনের বা মোটা মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
বাস্তব সত্য : মাত্রাতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার একটি ঝুঁকি মাত্র, এক্ষেত্রে অন্যান্য ঝুঁকি, যেমন পারিবারিক ইতিহাস, জাতিসত্তা, বয়স ডায়াবেটিসে আক্তান্ত হওয়ার জন্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই এই ধারণা পোষণ করেন যে, বেশি ওজনই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার একমাত্র ঝুঁকি। অনেক মোটা মানুষেরই ডায়াবেটিস নেই। আবার অনেক ডায়াবেটিক রোগীর ওজনই স্বাভাবিক, এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
প্রচলিত ভুল ধারণা : ডায়াবেটিক রোগীদের বিশেষ ডায়াবেটিক খাবার খেতে হয়।
বাস্তব সত্য : ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য একটি খাবার তালিকা সুস্থ মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা থেকে ভিন্নতর কিছু নয়। কম চর্বি, পরিমিত লবণ আর চিনি; এর সঙ্গে পূর্ণদানাযুক্ত খাদ্য, শাকসবজি ও ফলমূল_ এগুলোর মিশ্রণই হতে পারে আদর্শ খাবার। তথাকথিত ডায়াবেটিক খাবারে অতিরিক্ত কোনো উপকার পাওয়া যায় না।
প্রচলিত ভুল ধারণা : ডায়াবেটিক রোগী মিষ্টি জাতীয় কোনো কিছু বা চকোলেট খেতে
পারবে না।
বাস্তব সত্য : যদি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকার সঙ্গে উপযুক্ত শরীরচর্চার যোগ ঘটানো যায়, তবে ডায়াবেটিক রোগীরাও মিষ্টি জাতীয় খাবার ও ফলাহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগী এবং সুস্থ মানুষের মধ্যে কোনো সীমারেখা নেই। মিষ্টি জাতীয় খাবার একদম বাদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই, শুধু পরিমাণটা সীমার মধ্যে থাকা চাই। মিষ্টি জাতীয় খাবারে যে শুধু ক্যালরিই থাকে তা নয়, এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা রক্তের গ্গ্নুকোজের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। রক্তের গ্গ্নুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু কম শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার পরই ফলাহার করা উচিত।
প্রচলিত ভুল ধারণা : ডায়াবেটিক রোগীদের কেবল অল্প পরিমাণ শর্করাসমৃদ্ধ খাবার, যেমন_ রুটি, আলু ও পেস্তা খেতে হবে।
বাস্তব সত্য : শর্করাসমৃদ্ধ খাবার একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকার অংশ। এখানে পরিমাণটাই মূল বিবেচ্য বিষয়। লাল-আটার রুটি, ভাত, সিরিয়াল, পেস্তা এবং শর্করাসমৃদ্ধ সবজি, যেমন_ আলু, মটরদানা, ভুট্টা খাবার তালিকায় থাকতে পারে। অন্যান্য ধরনের খাবারের সঙ্গে শর্করার অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের দিনে তিন থেকে চারবার শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যুক্তিযুক্ত। প্রচলিত ভুল ধারণা :ফল স্বাস্থ্যকর খাদ্য, তাই যত ইচ্ছা ফল খাওয়া যেতে পারে।
বাস্তব সত্য : অবশ্যই ফল স্বাস্থ্যকর খাদ্য। এতে আঁশ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে; কিন্তু ফলে শর্করাও থাকে, যাকে অবশ্যই খাদ্য তালিকার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করুন কোন ফল কত বার, কী পরিমাণে খাবেন।
প্রচলিত ভুল ধারণা : আপনার অতি সামান্য বা অল্প পরিমাণ ডায়াবেটিস থাকতে পারে।
বাস্তব সত্য : সামান্য পরিমাণ ডায়াবেটিস বলে কোনো কথা নেই, হয় আপনার ডায়াবেটিস আছে অথবা নেই_ এর মাঝামাঝি কিছু নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন