ছয় বছরের ছোট ছেলে প্রিয় অতিরিক্ত চঞ্চলতা ও অমনোযোগিতার জন্য স্কুল থেকে তার বাবা-মাকে বারবার সতর্ক করায় উৎকণ্ঠিত হয়ে বাবা-মা বিভিন্ন ডাক্তার হয়ে অবশেষে এলেন আমাদের কাছে। শিশুটির বৃত্তান্ত শুনে ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা করে জানা গেল, প্রিয় ভুগছে এডিএইচডি(ADHD) তথা এটেনসন ডেফিসিট হাইপার অ্যাস্টিভিটি ডিসঅর্ডারে। ইদানীং অনেক শিশু আমাদের কাছে আসছে এ ব্যবহারগত সমস্যাটি নিয়ে ।
ADHD বা শিশুদের অতি চঞ্চলতা প্রকৃতভাবে একই সঙ্গে শিশুদের বিকাশ ও ব্যবহারজনিত সমস্যা। যদিও আমাদের দেশে এ সম্পর্কে সমীক্ষার অভাব আছে, তবে উন্নত দেশসমূহে দেখা যায় প্রতি ১০০ জনে ৩ থেকে ৬ জন শিশু ADHD তে আক্রান্ত। আমাদের চারপাশে অনেক শিশু এ রোগে ভুগছে। বাবা-মা বা শিক্ষকরা না বুঝেই অতিরিক্ত চঞ্চলতার কারণে এসব শিশুকে বকাঝকা এমনকি শারীরিক নির্যাতন করেন। মনে রাখতে হবে এটা শিশুদের একটি বিকাশজনিত রোগ, যার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসা। একটা কথা বলা দরকার সব চঞ্চল শিশু ADHD তে আক্রান্ত নয়।
ADHD-এর কারণ
এ রোগের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া এর কারণগুলো নিন্মরূপ
* বংশগত।
* মাতৃগর্ভের বিরূপ পরিবেশ-তথা মা যদি সিগারেট, অ্যালকোহল ইত্যাদি পান করেন।
* সীসার বিষক্রিয়া।
* মস্তিষ্কে কোন আঘাত, প্রদাহ ইত্যাদি।
* প্রবল মনস্তাত্ত্বিক চাপ।
* অভিভাবক অথবা শিক্ষকের অত্যধিক প্রত্যাশা।
* খাবারে আর্টিফিসিয়াল রঙ ব্যবহার ইত্যাদি।
লক্ষণঅমনোযোগী শিশু
* পড়া অথবা খেলায় ন্যূনতম মনোযোগ।
* স্কুলের প্রতিটি কাজে অসাবধানতাবশত ভুল করা।
* মনোযোগ দিয়ে কারও কথা না শোনা।
* সহজ নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারা।
* কোন কাজ গুছিয়ে না করতে পারা।
* যে সব বিষয়ে মনোযোগ দরকার যেমন- গণিত, তা এড়িয়ে চলা।
* জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা।
* প্রাত্যহিক কাজ- যেমন-গোসল, খাওয়া, হাত ধোয়া ইত্যাদি ভুলে যাওয়া।
অতি চঞ্চল শিশু
* অযথা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা।
* ক্লাসরুমে সিটে বেশিক্ষণ বসে না থাকা।
* অযাচিতভাবে দৌড়ানো, লাফানো ইত্যাদি।
* কোন কাজই সুস্থির, শান্তভাবে না করা।
* অতিরিক্ত কথা বলা।
* প্রশ্ন না করতেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা।
* অন্যদের বিরক্ত, মারামারি করা।
উল্লেখ্য, এ রাগ অবশ্যই সাত বছরের আগে প্রকাশ পাবে এবং রোগের পরিধি এমন হতে হবে যা শিশুর সামাজিক/শিক্ষাগত/ পারিবারিক জীবনকে ব্যাহত করে।
চিকিৎসা
ADHD-তে ভুগছে এমন শিশুকে প্রথমেই মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা করা হয়, এরপর অবস্থাভেদে চিকিৎসা দেয়া হয়। মূলত সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে তথা শিশু বিশেষজ্ঞ, শিশু নিউরোলজিস্ট, সাইকোলজিস্ট, থেরাপিস্টদের যৌথ উদ্যোগে এর চিকিৎসা দেয়া হয়। কিছু ওষুধ দিয়ে ADHD-এর চিকিৎসা করা সম্ভব, তবে অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করাতে হবে। এ ছাড়া শিশুর ব্যবহারগত সমস্যা উন্নতির জন্য সাইকোলজিস্টের সাহায্য প্রয়োজন।
বিশেষায়িত স্কুল
ADHD-এর শিশুদের জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত স্কুল। যেখানে কম ছাত্র এবং বেশি শিক্ষক থাকবে এবং প্রতিটি শিশুকে যত্ন সহকারে পড়ানো হবে। স্কুলে শিশুদের একটি নির্ধারিত রুটিন মেনে চলতে হয় এবং প্রতিটি শিশুর সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
অভিভাবকদের জন্য কথা
ADHD-এর শিশুরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অথবা অটিস্টিক নয়। তাদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক। সময়োপযোগী চিকিৎসা ও শিক্ষা দিলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। মনে রাখবেন, অতি চঞ্চলতা তার ইচ্ছাকৃত নয় বরং এটা তার সমস্যা। তাই ধৈর্য ধরুন, শিশুকে সময় দিন। যেসব খেলা খোলা মাঠে খেলা যায়, তাতে উৎসাহিত করুন। শিশুকে যথেষ্ট বিশ্রামের পরিবেশ দিন, একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা রুটিনে তার প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে আসুন। তবে শিশু যদি মারামারি, ভাংচুর করে, তাহলে তাকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করতে হবে, শিশুকে বুঝাতে হবে অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রতিটি শিশুর মনোজগত অসীম সম্ভাবনাময়। প্রাথমিক বিকাশের সময় যে কোন সমস্যাই যদি যথাযথ চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে পরে তা মারাত্নক আকার ধারণ করতে পারে। তাই যথাযথ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার মাধ্যমে সমন্বিত চিকিৎসা দিয়ে ADHD আক্রান্ত শিশুদের যথাসম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
ADHD বা শিশুদের অতি চঞ্চলতা প্রকৃতভাবে একই সঙ্গে শিশুদের বিকাশ ও ব্যবহারজনিত সমস্যা। যদিও আমাদের দেশে এ সম্পর্কে সমীক্ষার অভাব আছে, তবে উন্নত দেশসমূহে দেখা যায় প্রতি ১০০ জনে ৩ থেকে ৬ জন শিশু ADHD তে আক্রান্ত। আমাদের চারপাশে অনেক শিশু এ রোগে ভুগছে। বাবা-মা বা শিক্ষকরা না বুঝেই অতিরিক্ত চঞ্চলতার কারণে এসব শিশুকে বকাঝকা এমনকি শারীরিক নির্যাতন করেন। মনে রাখতে হবে এটা শিশুদের একটি বিকাশজনিত রোগ, যার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসা। একটা কথা বলা দরকার সব চঞ্চল শিশু ADHD তে আক্রান্ত নয়।
ADHD-এর কারণ
এ রোগের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া এর কারণগুলো নিন্মরূপ
* বংশগত।
* মাতৃগর্ভের বিরূপ পরিবেশ-তথা মা যদি সিগারেট, অ্যালকোহল ইত্যাদি পান করেন।
* সীসার বিষক্রিয়া।
* মস্তিষ্কে কোন আঘাত, প্রদাহ ইত্যাদি।
* প্রবল মনস্তাত্ত্বিক চাপ।
* অভিভাবক অথবা শিক্ষকের অত্যধিক প্রত্যাশা।
* খাবারে আর্টিফিসিয়াল রঙ ব্যবহার ইত্যাদি।
লক্ষণঅমনোযোগী শিশু
* পড়া অথবা খেলায় ন্যূনতম মনোযোগ।
* স্কুলের প্রতিটি কাজে অসাবধানতাবশত ভুল করা।
* মনোযোগ দিয়ে কারও কথা না শোনা।
* সহজ নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারা।
* কোন কাজ গুছিয়ে না করতে পারা।
* যে সব বিষয়ে মনোযোগ দরকার যেমন- গণিত, তা এড়িয়ে চলা।
* জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা।
* প্রাত্যহিক কাজ- যেমন-গোসল, খাওয়া, হাত ধোয়া ইত্যাদি ভুলে যাওয়া।
অতি চঞ্চল শিশু
* অযথা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা।
* ক্লাসরুমে সিটে বেশিক্ষণ বসে না থাকা।
* অযাচিতভাবে দৌড়ানো, লাফানো ইত্যাদি।
* কোন কাজই সুস্থির, শান্তভাবে না করা।
* অতিরিক্ত কথা বলা।
* প্রশ্ন না করতেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা।
* অন্যদের বিরক্ত, মারামারি করা।
উল্লেখ্য, এ রাগ অবশ্যই সাত বছরের আগে প্রকাশ পাবে এবং রোগের পরিধি এমন হতে হবে যা শিশুর সামাজিক/শিক্ষাগত/ পারিবারিক জীবনকে ব্যাহত করে।
চিকিৎসা
ADHD-তে ভুগছে এমন শিশুকে প্রথমেই মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা করা হয়, এরপর অবস্থাভেদে চিকিৎসা দেয়া হয়। মূলত সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে তথা শিশু বিশেষজ্ঞ, শিশু নিউরোলজিস্ট, সাইকোলজিস্ট, থেরাপিস্টদের যৌথ উদ্যোগে এর চিকিৎসা দেয়া হয়। কিছু ওষুধ দিয়ে ADHD-এর চিকিৎসা করা সম্ভব, তবে অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করাতে হবে। এ ছাড়া শিশুর ব্যবহারগত সমস্যা উন্নতির জন্য সাইকোলজিস্টের সাহায্য প্রয়োজন।
বিশেষায়িত স্কুল
ADHD-এর শিশুদের জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত স্কুল। যেখানে কম ছাত্র এবং বেশি শিক্ষক থাকবে এবং প্রতিটি শিশুকে যত্ন সহকারে পড়ানো হবে। স্কুলে শিশুদের একটি নির্ধারিত রুটিন মেনে চলতে হয় এবং প্রতিটি শিশুর সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
অভিভাবকদের জন্য কথা
ADHD-এর শিশুরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অথবা অটিস্টিক নয়। তাদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক। সময়োপযোগী চিকিৎসা ও শিক্ষা দিলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। মনে রাখবেন, অতি চঞ্চলতা তার ইচ্ছাকৃত নয় বরং এটা তার সমস্যা। তাই ধৈর্য ধরুন, শিশুকে সময় দিন। যেসব খেলা খোলা মাঠে খেলা যায়, তাতে উৎসাহিত করুন। শিশুকে যথেষ্ট বিশ্রামের পরিবেশ দিন, একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা রুটিনে তার প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে আসুন। তবে শিশু যদি মারামারি, ভাংচুর করে, তাহলে তাকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করতে হবে, শিশুকে বুঝাতে হবে অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রতিটি শিশুর মনোজগত অসীম সম্ভাবনাময়। প্রাথমিক বিকাশের সময় যে কোন সমস্যাই যদি যথাযথ চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে পরে তা মারাত্নক আকার ধারণ করতে পারে। তাই যথাযথ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার মাধ্যমে সমন্বিত চিকিৎসা দিয়ে ADHD আক্রান্ত শিশুদের যথাসম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন