জলবসন্ত বা চিকেনপক্স, হাম, ডেঙ্গুর মতো এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। গুটিবসন্ত নির্মূল হলেও এ জলবসন্তকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। জলবসন্ত গুটিবসন্তের মতো প্রাণসংহারী রোগ না হলেও রোগটি নিয়ে জনমনে নানা ধরনের কুসংস্কার ও ভীতি রয়েছে। একবার কোনো পরিবারে বসন্ত দেখা দিলে তাদের আশপাশে, এমনকি সেবার জন্যও লোকজন খুঁজে পাওয়া যায় না। জলবসন্ত অত্যন্ত ছোঁয়াচে হলেও রোগীর সংস্পর্শে এলেই যে তা নিশ্চিত ছড়িয়ে পড়বে এ ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়।
রোগীর একেবারে সংস্পর্শে এলে তার কফ, শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নির্গত হওয়া জীবাণু অথবা বসন্তের কারণে সৃষ্টক্ষতের নিবিড় সংস্পর্শে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারা মাস্ক এবং গ্গ্নাভস পরে সেবা দিয়ে থাকেন। অনেকের আবার ধারণা, ত্বকের ওপর সৃষ্ট শুকনো খোসাগুলো রোগের উৎস। সুতরাং এদের পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আসলে ত্বকের ক্ষত কাঁচা অবস্থাতেই রোগটি সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার অনেকে মনে করে থাকেন, পক্স হলেই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এ ধারণাটিও ঠিক নয়। বরং একবার চিকেনপক্স দেখা দেওয়ার পর অপেক্ষাকৃত মারাত্মক হারপিসজনিত ভাইরাসের রোগের উদ্ভব হতে পারে। এছাড়া পুষ্টিহীন ও এইডস রোগী এ রোগীর সংস্পর্শে এলে অথবা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে একাধিকবার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অনেকেই জলবসন্ত হলে মাছ, ডাল, মাংস এসব খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেন_ পাছে বসন্তের ক্ষত যেন না বেড়ে যায়। এ ধারণাটিও অমূলক। পক্স আক্রান্ত রোগীর জন্য সব খাবার উন্মুক্ত। তবে মুখের তালু ও অভ্যন্তরে পক্সের গুটি দেখা দেওয়ায় এ সময় ঝালযুক্ত খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।
পক্সের দাগ বা ক্ষতের চিহ্ন কমানোর কারণে অনেকেই ডাবের পানি দিয়ে গোসল করে থাকেন। এ ধরনের কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত নয়। জলবসন্ত দেখা দিলে ত্বকের ক্ষতটি কোনোক্রমেই চুলকানো যাবে না। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে হিস্টাসিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। ক্ষতটি যেন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে পেকে না যায় সে কারণে ক্ষতের ওপর প্রয়োজনে লোশন বা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে। জলবসন্ত সাধারণ ছোঁয়াচে রোগমাত্র। তবে অবহেলা করলে এ রোগ থেকেও অন্ধত্ব, স্নায়ুবিক দুর্বলতা এমনকি জীবনহানি ঘটতে পারে। সুতরাং জলবসন্তের সময় নিজেকে নিরাপদে সরিয়ে রাখা, আক্রান্ত শিশু বা শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়তনে না পাঠানো এবং আক্রান্ত হলে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণসহ পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিলে রোগটি আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন