রবিবার, ১ মে, ২০১১

মানসিক রোগঃ সামাজিক আতঙ্ক!

আপনি যদি সাধারণ সামাজিক আতঙ্কে ভোগেন তবে কোনো স্খানে অনেক লোকের মাঝে, তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার ব্যাপারে আপনি ক্রমাগত মানসিক অস্বস্তিতে ভুগবেন। প্রত্যেকেই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এবং আপনি যা যা করছেন তা লক্ষ করছে এসব ব্যাপারে আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন। মানুষের সাথে পরিচিত হতে আপনি ভয় পেতে পারেন। এমনকি প্রকাশ্যে খাওয়া বা পান করার ব্যাপারেও সংকটে ভুগতে পারেন। কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্টে যাওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এমনকি প্রয়োজনের সময়েও অফিসের বস বা সহকর্মীদের মুখোমুখি হওয়াও আপনার জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, যেখানে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে। আমাদের অনেকেই লোকভর্তি ঘরে প্রবেশের পূর্বে ইতস্ততবোধ করি। আপনার যদি সামাজিক আতঙ্ক থাকে তাহলে আপনার প্রবেশদ্বারের আশপাশে বা বাইরের ঘরগুলোতে ঘোরাফেরা করতে ইচ্ছা হতে পারে। এ ধরনের অনুভূতির জন্য অনেকে মনে করেন তারা ক্লস্ট্রফোবিয়ায় ভুগছে। যখন আপনি ওই ঘরে প্রবেশ করবেন আপনার মনে হতে পারে যেন সকলেই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। এ জাতীয় পরিস্খিতির সাথে পেরে উঠতে আপনি অ্যালকোহল বা মদ্যপানের প্রতি প্রলুব্ধ হতে পারেন। কোনো পার্টিতে যাওয়ার আগে আপনি হয়তো মদ্যপান শুরু করলেন। যাতে ওই সমস্ত স্খানের আনন্দ-ফুর্তি সত্যিকারভাবে উপভোগ করার জন্য নিজেকে যথেষ্ট তৈরি করে নিচ্ছেন। কিন্তু  এটা কখনোই ঠিক নয়, এতে করে আপনার রোগ উপসর্গ আরো বেড়ে যাবে।
 
বিশেষ সামাজিক আতঙ্ক এটি একটি বিশেষ ধরনের আতঙ্ক যা ওই সমস্ত মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে যাদেরকে জীবনযাপনের অংশ হিসেবে অন্যদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে হয়। যাদের জনসম্মুখে কথা বলতে হয় বা কাজ করতে হয়, তাদের ওপর এটা প্রভাব ফেলতে পারে।
 
 বিক্রেতা
 
 মুদিদোকানি
 
 অভিনেতা
 
 বাদ্যকর
 
 শিল্পী
 
 শিক্ষক বা
 
 সমিতির প্রতিনিধি সকলেই এ প্রকার সামাজিক ভীতিতে ভুগতে পারে। এ সত্ত্বেও এটা তাদের সাধারণ সামাজিক পরিস্খিতিতে কোনোরূপ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। আপনি যদি সামাজিক আতঙ্ক বা সোশ্যাল ফোবিয়া রোগে ভোগেন তবুও দেখবেন কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই আপনি অন্যদের সাথে মিশতে পারছেন। তবে আপনাকে যখন অন্যের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করতে হবে বা কিছু বলতে হবে, তখন আপনি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন। হয়তো কথা বলতে গিয়ে বারবার কথা আটকে যাবে কিংবা গলা সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে আসবে। এটা জনসম্মুখে নিয়মিত কথা বলতে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের ওপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। এর সবচেয়ে বড় কুফল হলো এর ভুক্তভোগীদের পক্ষে জনসম্মুখে কথা বলা এমনকি একটি প্রশ্ন করাও অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। যদি আপনার সামাজিক আতঙ্ক থাকে, তাহলে অন্যদের সামনে বোকা বনে যাওয়ার ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন এবং কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে (যা আপনাকে ক্রমাগত মানসিক অস্বস্তিতে ফেলে) যাওয়ার আগে খুব উদ্বিগ্ন করে তুলবে। এমনও হতে পারে যে, আপনি অস্বস্তিবোধ করেন এমন সব ঘটনার মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হচ্ছে। আপনি অন্যান্য মানুষের সাথে এক সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন এবং আপনি যা বলতে বা করতে চান তা বলা বা করা আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে কিনা এটাও আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। আপনাকে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তিত দেখানোর ব্যাপারে আপনি এতই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন যে, সত্যি সত্যি আপনাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখাবে। আপনার উদ্বেগ, অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তাই আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু। এ সময় আপনার মাঝে আরো যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা হলো­
 
 প্রচুর ঘাম হওয়া
 
 মুখ শুকিয়ে আসা
 
 মাথা ঝিনঝিন করা
 
 অস্খিরতা লাগা
 
 ক্লান্তি লাগা
 
 বুক ধড়ফড় করা বেশি মাত্রায় বা প্যালপিটিশন দেখা দেয়া
 
 মুখ লাল হয়ে যাওয়া
 
 মুখে কথা জড়িয়ে যাওয়া
 
 কম্পিত হওয়া
 
 দুশ্চিন্তা লাগা
 
 লজ্জা লজ্জা লাগা ইত্যাদি
 
১০০ জন পুরুষের মধ্যে শতকরা ১-২ জন এবং ১০০ জন নারীর মধ্যে শতকরা প্রায় ২-৩ জন সামাজিক আতঙ্কে ভোগেন। কিছু কিছু মানুষ তাদের সামাজিক আতঙ্ক দ্বারা মানসিকভাবে এতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন যে তাদের ভেতরের বিষাদগ্রস্ত অবস্খাটি ক্রমেই রোগ আকারে বাড়তে থাকে। এর চিকিৎসা সামাজিক আতঙ্কের চিকিৎসা হতে ভিন্ন।
 
সামাজিক আতঙ্ক অসুখটি একটি মানসিক রোগ। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করতে হবে। এ রোগের কারণ যাই হোক না কেন, এ রোগের চিকিৎসা আছে এবং রোগী সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়।
 
আমদের বেশির ভাগ লোক কোনো না কোনো সামাজিক পরিবেশে লজ্জাবোধ করে কিংবা দুশ্চিন্তা অনুভব করে। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এটাকে বলা হয় ‘জিটর’ বা সাময়িক টেনশন। সামাজিক ভয় অসুখটি এ ধরনের সাময়িক টেনশন থেকে একটু আলাদা। সামাজিক ভয় রোগটি অন্য সাময়িক টেনশন থেকে এতটুকু তফাৎ যে, সামাজিক ভয়ের টেনশনটি কোনো পরিবেশেই চলে যায় না এমনকি নিত্যদিনের জীবন-যাপন, সামাজিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। ক্যারিয়ার কিংবা লেখাপড়ার সুযোগকেও অনেকাংশে ধ্বংস করে দেয়। যেসব ব্যক্তির সামাজিক ভয় অসুখটি থাকে তাদের ক্ষেত্রে নিচের উপসর্গগুলো পাওয়া যায়।
 
ভীতিপ্রদ পরিবেশ এতটা হয় যে, আক্রান্ত ব্যক্তি যে কোনো মূল্যে এই পরিবেশকে এড়িয়ে যেতে চায়। অতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি একটি ভয় যা কোনো কাজ করতে গেলে কিংবা সামাজিক পরিবেশের মুখোমুখি হলে শুরু হয়। ব্যক্তির ধারণা হয় যে আশপাশের লোকজন তাকে এক বিশেষ দৃষ্টিতে দেখছে।
 
সামাজিক ভয় কতগুলো শারীরিক উপসর্গের সৃষ্টি করে যেমন­
 শরীর ঘেমে যাওয়া
 
 মুখ লাল হয়ে যাওয়া
 
 শরীর কাঁপা
 
 মাংসপেশি শক্তভাব
 
 গলার স্বরে নার্ভাস ভাব
 
 মুখ শুকিয়ে যাওয়া
 

 প্যালপিটিশন বেড়ে যাওয়া
 
 মাথা ঘোরা ইত্যাদি
 
সাধারণত কিশোর বয়সে যাদেরকে ‘টিনএজ’ বলা হয় এ বয়সে সামাজিক ভয় শুরু হতে পারে। ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে এটি সমান মাত্রায় পাওয়া যায়। আমেরিকায় প্রায় ১ কোটি সামাজিক ভয় রোগী আছে।
 
লজ্জার সাথে সামাজিক ভয়ের একটি লক্ষণীয় তফাৎ আছে। পরিবেশের বিপরীতে কোনো কিছু ঘটলে ছেলেমেয়ে যেই হোক না কেন লজ্জায় পড়ে। এটা কিন্তু অসুখ নয়। পরিবেশজনিত প্রতিক্রিয়া, লজ্জাটি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে একটু বেশি হলে, কোনো পরিবেশ হলে, দীর্ঘমেয়াদি হলে তাকে সামাজিক ভয় রোগ বলা যায়। সামাজিক ভয়ের কারণ হিসেবে কোনো একটি জিনিসকে চিহ্নিত করা যায় না। তবে গবেষকরা অনেকগুলো মনস্তাত্ত্বিক কারণ হিসেবে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। যদিও পরিবেশ কিছুটা দায়ী। তথাপি সামাজিক ভয় অসুখটিতে শরীরের ‘সেরোটনিন’ নামক আনুপাতিক হারে শরীরের পরিবর্তন ঘটে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন নার্ভ সেলে ‘সেরোটনিন’ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সাহায্য করে। এজন্য সেরোটনিনকে একটি স্খিতি অবস্খায় থাকতে হয়।
 
 সামাজিক ভয়
 
 টেনশন
 
 বিষণíতা এবং
 
 ম্যানিয়া রোগে স্নায়ুতন্ত্রের সেরোটনিন কমবেশি হয়। কতক কতক ক্ষেত্রে বংশের ধারাকে রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়। পিতা-মাতা বা নিকট আত্মীয়-স্বজনদের এই রোগ থাকলে রক্তের সম্পর্কিত লোকদের এ রোগটি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতাকে কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ যাই হোক বা উৎপত্তি যাই হোক জেনে খুশি হওয়ার মতো কথা যে, এ রোগের চিকিৎসা আছে এবং শতকরা ১০০ ভাগ ভালো ফল পাওয়া যায়।
 
ভয় এবং শারীরিক উপসর্গ আতঙ্কে রূপ নিতে পারে। তবে এটা খুব অল্প সময়ের জন্য সাধারণত কয়েক মিনিট স্খায়ী হয়ে থাকে। এ সময় ভুক্তভোগী প্রচণ্ড উদ্বিগ্নতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন আতঙ্কে ভুগতে পারে। এ সময় তার এমনও হতে পারে যে, সে বুঝি পাগল হয়ে যাচ্ছে বা মরে যাচ্ছে এই অনুভূতিগুলোর সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছে যাওয়ার প্রবণতা থাকে এবং অত:পর দ্রুত চলে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি এ সময়ে দুর্বল এবং ভীষণ পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। তবে এখানে   উল্লেখ্য যে, যদিও এসব আক্রমণ খুব ভয়ানক হয়ে থাকে, এক সময় এসব আক্রমণ চলে যায় এবং শারীরিকভাবে মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
 
সামাজিক আতঙ্কে ভোগা আপনার মনোবলহীনতার কারণ হতে পারে। কারণ অন্যরা যা সহজে করতে পারে আপনার কাছে তা অসম্ভব মনে হবে। আপনার মনে হবে যে আপনি একজন বিরক্তিকর মানুষ হয়ে উঠেছেন এবং এই ভেবে উদ্বিগ্ন হবেন যে অন্যরাও আপনার সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ করবে। এটা আপনাকে অতিরিক্ত স্পর্শকাতর এবং অন্যদের বিরক্ত করা থেকে বিমুখ করে তুলবে। এমনকি যখন এটি করা উচিত তখনও। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, কীভাবে এটি মানুষকে বিষাদগ্রস্ত ও অসুখী করে তোলে। সামাজিক আতঙ্কে এটি আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
 
অনেক ভুক্তভোগী রোগের লক্ষণ অনুযায়ী তাদের জীবনধারা আয়ত্তে এনে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়। এর অর্থ তাদেরকে এবং তাদের পরিবারকে স্বাভাবিকভাবে উপভোগ্য বিভিন্ন পরিস্খিতি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যেমন­তারা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারে না। কেনাকাটা করতে পারে না বা ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেতে পারে না। তারা সক্রিয়ভাবে নিজের পদোন্নতিও এড়িয়ে যায় এমনকি যখন তারা উন্নততর চাকরিতে উচ্চ বেতনে কাজ করার যোগ্যতা রাখে তখনও। ভয়ানক সামাজিক ফোবিয়া বা আতঙ্কগ্রস্তদের প্রায় অর্ধেক বিশেষত পুরুষদের পক্ষে দীর্ঘ সময়ের জন্য সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে।
 
সবাই ভয় পায়। ভয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট মাত্রায় ও নির্দিষ্ট বস্তুর জন্য এটির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, ভয়ের মাত্রা অনির্দিষ্টভাবে প্রকট ও বস্তুবিহীন বা কাল্পনিক হয় তাহলে এটিকে রোগ বলা হয়। সাধারণত আমরা এটিকে ফোবিয়া বা অহেতুক ভীতি রোগ বলে থাকি। যেমন শিশু হঠাৎ শব্দে ভয় পায় আবার কেউ অন্ধকারে ভয় পায়, এগুলো সামাজিকভাবে স্বীকৃত ভয়। ফোবিয়া রোগটিকে অহেতুক ভয় বলা হয় অর্থাৎ সমাজ একে স্বীকৃত দেয় না। ভয় যখন এর কারণ ও বাস্তবতার সীমা অতিক্রম করে অস্বাভাবিক ও বাস্তবতাবর্জিত মানসিক রূপ ধারণ করে তখনই আমরা ফোবিয়া বা অহেতুক ভয় বলে থাকি। ভয়রোগটি বড় বিচিত্র। একটি স্খান, কাল, পাত্রভেদে ভয় বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন­
 
 একা একা থাকার ভয়
 
 অন্ধকারে থাকার ভয়
 
 কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীকে ভয়
 
 কোনো নির্দিষ্ট স্খানের প্রতি ভয়
 
 রক্তের ভয়
 
 পরীক্ষা সম্বন্ধীয় ভয়
 
 মৃত্যুর ভয়
 
 মৃত্যু সম্বন্ধীয় যাবতীয় কিছু নিয়ে ভয়
 
 কিছু অসুখ নিয়ে ভয় (যেমন এইডস বা ক্যান্সার ভয়)
 
মনোবিজ্ঞানীরা ভয়কে বিশ্লেষণ করে কতগুলো কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো­
 মস্তিষ্কের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনজনিত কারণ
 
 বংশগত কারণ
 
 ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, যেমন­
 
 বাতিকতার ব্যক্তিত্বের বা
 
 হিস্টিরিক্যাল ব্যক্তিত্বের
 
 শৈশব পর্যায় থেকে শিশুর মানসিক বিকাশে ত্রুটি, যেমন­
 
 বিভিন্ন ধরনের অসুখী অভিজ্ঞতা
 
 অভিভাবকের ভালোবাসায় ত্রুটি
 
 সহযোগিতা ও সহমর্মিতার অভাব
 
 সাহসবোধের অভাব
 
 শৃঙ্খলাবোধের অভাব
 
 বিভিন্ন প্রকার সামাজিক চাপ, নানা প্রকার মনোসামাজিক চাপ, যেমন­
 
 প্রিয় কাউকে হারানো
 
 আর্থিক ক্ষতি
 
 দারিদ্র্য
 
 অবিচার
 
 নিরাপত্তাহীনতা
 
 তীব্র প্রতিযোগিতা
 
 সামাজিক অবমূল্যায়ন
 
 আর্থসামাজিক কারণ­
 
 বারবার ঝগড়া-বিবাদ
 
 পরিবারের সদস্যদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি
 
 আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
 
 বিভিন্ন প্রকার আসক্তিকর ড্রাগের প্রভাব, যেমন­
 
 অ্যামফিটামিন
 
 বারবিচুরেটস
 
 গাঁজা
 
 মরফিন
 
 হেরোইন
 
 পেথেডিন ইত্যাদি ড্রাগ নির্ভরশীলতা গড়ে তুলতে পারে এবং পরবর্তীতে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে ভয়ের উদ্রেক করে
 
 মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়কারক রোগ এবং অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যা, যেমন­
 
 বিষণíতা
 
 সিজোফেন্সনিয়া ইত্যাদির সাথে সমন্বিত হয়ে ভয়ের উদ্রেক করতে পারে।
 
ভয়রোগের বিভিন্ন উপসর্গ­
 মাথা ঝিমঝিম করা
 
 মাথা ঘোরা
 
 শরীরে বেশি ঘাম বের হওয়া, বিশেষত কপালে ও হাতের তালুতে প্রচুর পরিমাণে ঘাম নি:সরণ হয়
 
 অস্খিরতা লাগা
 
 প্যালপিটিশন বেড়ে যাওয়া
 
 ক্লান্ত লাগা
 
 শরীর টান টান হয়ে ওঠা
 
 শ্বাসকষ্ট
 
 উদ্বিগ্নতা/দুশ্চিন্তা
 
 মাথাব্যথা
 
 ডায়রিয়া
 
 পেটব্যথা করা
 
 বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি
 
ভয়ের মাত্রা অত্যধিক তথা এই ভীতির মাত্রা জীবন ধারণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করলে এর চিকিৎসা করানো দরকার। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ভয়ের মাত্রা কমিয়ে আনার পাশাপাশি নানা রকম সাইকোথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োগ করানো যেতে পারে। তবে রোগীকে যথাযথভাবে কাউন্সিলিং বা বোঝানো হলো ভয়রোগ চিকিৎসার প্রাথমিক শর্ত।
 
প্রায় প্রতি ১০ জনে ১ জন তাদের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে উদ্বিগ্নতা বা আতঙ্কে ভুগে থাকে। যদিও এদের বেশির ভাগই কোনো প্রকার চিকিৎসাব্যবস্খা গ্রহণ করে না।
 
আমাদের যদি প্রচণ্ড চাপের ভেতর রাখা হয় তাহলে অধিকাংশ সময়েই আমরা উদ্বেগাক্রান্ত বা আতঙ্কগ্রস্ত হতে পারি। সাধারণত আমরা এ ধরনের অনুভূতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারি। কারণ আমরা এর উৎস এবং সমাপ্তি সম্পর্কে জানি। যেমন­বেশিরভাগ লোকই ড্রাইভিং টেস্ট দেয়ার পূর্বে উদ্বিগ্নবোধ করে, কিন্তু তারা নিজেদের সামলে নিতে পারে কারণ তারা জানে যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাদের উদ্বিগ্নতা চলে যাবে। অধিকাংশ সময়েই আমরা জানি না ঠিক কী কারণে আমাদের এই সকল অনুভূতি হয়ে থাকে। আর তাই এটাও জানি না যে, কখন তা শেষ হবে। সাধারণত এসবের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়াটা কঠিন ব্যাপার। তাই এক্ষেত্রে অন্যের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন। অনেক সময় লোকে হাসবে এ কথা মনে করে আমরা সাহায্য নিতে চাই না। কিন্তু সত্যি বলতি কী আতঙ্কগ্রস্ত বা ভারাক্রান্ত ব্যক্তির কোনো গুরুতর মানসিক অসুস্খতা থাকে না। এ ব্যাপারে নীরবে কষ্ট সহ্য করার চেয়ে যত তাড়াতাড়ি সাহায্য নেয়া যায় তত ভালো। উদ্বেগাক্রান্ত বা আতঙ্কগ্রস্ত লোকেরা তাদের পরিবার বা অন্তরঙ্গ বন্ধুর সাথেও এ ব্যাপারে আলোচনা করতে চায় না। যদিও তারা স্পষ্ট বোঝে যে সব কিছু ঠিকঠাক নেই। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে ফ্যাকাশে ও চিন্তিত দেখাবে এবং সামান্য ব্যাপারেই আতঙ্কিত হবে।
 
অত:পর নিকট আত্মীয়রাও তাদের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠবে এবং তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে যদি তারা বুঝতে না পারে। ভুক্তভোগীরা কী কারণে কোনো বিশেষ বিশেষ কাজ করতে পারছে না যদিও তা বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের লোকেরা বুঝতে পারে যে উদ্বিগ্নতার কারণে এসব যন্ত্রণা বা কষ্ট হয়। তথাপি তারা এটাকে সহজে মেনে নিতে পারছে না। বিশেষত যদি ভয়টাকে তারা অযৌক্তিক মনে করে।
 
আমাদের মাঝে কিছু লোকের জন্মগতভাবে উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গেছে যে, এটা ‘জিন’-এর মাধ্যমে বংশগত কারণেও হতে পারে। তথাপি যে সমস্ত লোক জন্মগতভাবে উদ্বিগ্নতার শিকার নয় সে সমস্ত লোককেও যথেষ্ট চাপের মধ্যে ফেললে তারা উদ্বেগাক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় উদ্বিগ্নতার কারণ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। সমস্যা অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে উদ্বিগ্নতাও চলে যায়। তবুও এমন অনেক পরিস্খিতি আছে যেগুলো এতই দু:খজনক এবং বিপজ্জনক যে, সেগুলো ঘটে যাওয়ার অনেক দিন পর পর্যন্তও উদ্বিগ্নতা থেকে যায়। সাধারণত এগুলো হলো জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ পরিস্খিতি। যেমন­
 
 সড়ক দুর্ঘটনা
 
 রেল দুর্ঘটনা অথবা
 
 অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি
 
যারা এ ধরনের পরিস্খিতির শিকার, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে বেশ কয়েক মাস বা বছর ধরে তারা স্নায়বিক দুর্বলতা বা উদ্বিগ্নতায় ভুগতে পারে, যদিও ঘটনাটিতে তারা শারীরিকভাবে অক্ষত ছিল। এটাকে আমরা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার-এর অংশ বলে থাকি। অনেক সময়­
 
 অ্যামফিটামিনস
 
 এলএসডি অথবা
 
 অ্যাকট্যাসি জাতীয় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলেও উদ্বিগ্নতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কফির ক্যাফিনও আমাদের অনেককেই অস্বস্তিকর উদ্বিগ্নতার শিকারে পরিণত করতে পারে। অপরপক্ষে, এটা পরিষ্কার নাও বোঝা যেতে পারে, কী কারণে একজন ব্যক্তি উদ্বিগ্নতার শিকার হচ্ছে। কারণ গর্ভাবস্খার মতো কোনো জীবন পরিবর্তনমূলক ঘটনার ফলে তাদের ব্যক্তিদের যে সংমিশ্রণ হয় তার কারণও এটা হতে পারে।
 
বেশির ভাগ শিশুর জীবনেই এমন সময় আসে যখন তারা কোনো বিশেষ বিশেষ জিনিসকে ভয় পায়। এটা বেড়ে ওঠারই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, শিশুদের যারা দেখাশোনা করে শিশুরা তাদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। কোনো কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে শিশুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে বা মন খারাপ করে। অনেক শিশুই অন্ধকার বা কাল্পনিক দানবকে ভয় পায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ ধরনের ভয় চলে যায় এবং এসব ভয় শিশুর জীবন নষ্ট করে না অথবা তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না। বেশির ভাগ লোকই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন­স্কুলজীবনের প্রথমদিন উদ্বিগ্নতাবোধ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের এই উদ্বিগ্নতা আর থাকে না এবং তারা তাদের নতুন জীবন উপভোগ করে। বালক-বালিকাদের প্রায়ই খেয়ালি হতে দেখা যায়। তাদেরকে কী রকম দেখাচ্ছে, অন্যরা তাদের সাথে কী রকম ব্যবহার করছে, তাদের সম্পর্কে কী ভাবছে, সাধারণ মানুষের সাথে তারা কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নেবে, এসব ব্যাপারে তারা বেশ চিন্তিত থাকে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি   চিন্তিত থাকে তাদের বিপরীত লিঙ্গের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা। এসব দুশ্চিন্তা সাধারণত অন্যের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করা সম্ভব। যা হোক তারা যদি অতিমাত্রায়   দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় তাহলে তারা­
 
 স্কুলে খারাপ করতে পারে
 
 অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে বা
 
 শারীরিকভাবে অসুস্খবোধ করতে পারে
 
যদি কোনো শিশু বা কিশোর এত উদ্বেগাক্রান্ত বা আতঙ্কিত হয় যে, এর ফলে তাদের জীবন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলে পারিবারিক ডাক্তারকে ব্যাপারটা জানালে এবং তার কাছে সাহায্য চাওয়াটাই শ্রেয়।

1 টি মন্তব্য: