শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

পাইলস কি গোপন রোগ ?



বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।  আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তার পরও তার যত আক্ষেপ ও অনুশোচনা। মনে হয় কোনো পাপ করেছি, নইলে আজ এভাবে একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম কেন? কী সেই অনুশোচনা? কী সেই পাপ? 


আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনো পাইলস হওয়াকে একটি গোপন রোগ হিসেবে মনে করেন। কেউ কেউ বলেন, এটি কি কাউকে বলা যায়? আমার স্ত্রীও জানে না যে আমার পাইলস হয়েছে। মূল সমস্যা হলো চিকিৎসকের কাছে এসে পাইলসের গোপন স্থানটি দেখাতে হবে, এখানেই যত সমস্যা। অনেকেই এটিকে অশ্লীলতা হিসেবে ভাবেন। কারো হার্টে কোনো অসুবিধা হলে বা টন্সিলে ব্যথা হলে যে কারো সাথে খোলামেলা আলাপ করেন, অথচ পাইলসের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উল্টো। 

আধুনিক এক যুবকের কথা বলছি। চেম্বারে ঢুকে প্রথমে তার সঙ্গী সবাইকে বাইরে যেতে বললেন। তারপর স্ত্রীকেও। এরপর রুমে আমি এবং সেই যুবক রোগী। আমাকে অনুরোধ করলেন চেম্বারের পর্দাঘেরা অংশে যেতে। আমিও কিছু বারণ করছি না। ভাবছি, হয়তো তার গোপন কোনো রোগ বা যৌনরোগ আছে। আশ্চর্য হলাম তখন, যখন ওই রোগী খুবই বিব্রতভাবে আমাকে বললেন, স্যার, আমার লেদ্বার দিয়ে রক্ত যায়। আমি খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি। আমার স্ত্রীকেও জানাতে চাই না। দয়া করে আমাকে একটু চিকিৎসা দিন।

অন্য একজন রোগীর বয়স ৬০। হাউজিংয়ের অফিসার ছিলেন। বহু বছর আগে ঢাকা শহরে এক হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতে লেদ্বারে ইনজেকশন নিয়েছেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছেন, লেদ্বারে নাইট্রিক অ্যাসিড ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। ওই ইনজেকশন দেয়ার পর লেদ্বারের আশপাশের মাংস পচে গিয়ে লেদ্বার এমনই সরু হয়েছে যে তিনি মলত্যাগ করতে পারেন না। সামান্য ছিদ্র দিয়ে সব সময় পায়খানা চুইয়ে পড়ে। ভেতরে সর্বদা তুলার প্যাড পরে থাকেন। 

তাকে বললাম, দেশে আইন রয়েছে। শরীরে অ্যাসিড দিলে তার সাজা হয়, আপনি বিচার চান। রোগীর উত্তর ছিল এ রকমÑ‘স্যার, বয়স হয়েছে। মেয়ে-জামাই আছে, নাতি আছে, সমাজে এটি জানাজানি হলে মুখ দেখাতে পারব না। তাই এ ঘটনা প্রকাশ করতে চাই না। আপনি দেখুন কিছু করতে পারেন কি না।’

এ কারণে আমাদের দেশে পাইলসের হাতুড়ে চিকিৎসার এত প্রসার। প্রতিদিন লেদ্বারে হাতুড়ে অপচিকিৎসার জটিলতা নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে আসেন। যখন তিনি বুঝতে পারেন যে অপচিকিৎসায় তার লেদ্বার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তখন লোকলজ্জার ভয়ে এবং নিজের বোকামির কথা ভেবে কেউই হাতুড়ে ডাক্তারের বিচার চাইতে যান না। সবার একই কথা, হাতুড়ে চিকিৎসার কুফল আমাদের জানা ছিল না এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার কারণে কেউই নিজের দুরবস্থার কথা পর্যন্ত প্রচার করতে চান না।

অনেকেই বলেন, স্যার, আমার পাইলস অপারেশন হয়েছে শুনে সহকর্মীদের অনেকেই বলল, তারও বহু দিন ধরে এ সমস্যা আছে, কিন্তু কাউকে দেখাননি। এসব সহকর্মী আগে কখনো এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।

অনেক রোগী বিশেষত মহিলা রোগীরা বছরের পর বছর ভোগেন, কিন্তু কাউকে দেখান না। শেষ পর্যন্ত যখন বয়স বেড়ে ৬০-৭০ হয়, তখন আর সহ্য করতে পারেন না। শরীরে অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, ষ্ট্রোক ইত্যাদি হয়েছে তখন ছেলে বা নাতিপুতিদের নিয়ে আসেন এবং বলেন যে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে উনি কাউকে দেখাবেন না বলে জেদ ধরেছিলেন, এখন আর সহ্য করতে পারছেন না। এই ভোগান্তির মূল কারণ কুসংস্কার।

দেশের একজন নামকরা উপাচার্যের স্ত্রীর পাইলস হয়েছে বহু বছর ধরে। কিন্তু তিনি ডাক্তারকে দেখাবেন না। শেষে এমন অবস্থা যে পায়খানা না করলেও রক্ত যায়। তার কয়েক ছেলেমেয়ে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার। শেষ পর্যন্ত তাকে দেখলাম এবং বললাম বিনা অপারেশনে তিনি ভালো হবেন। কিন্তু রোগী বিশ্বাস করলেন না। 

অতঃপর দু’বার তার রিংলাইগেশন পদ্ধতিতে বিনা অপারেশনে পাইলস চিকিৎসা করায় তিনি সম্পূর্ণ ভালো হন। এরপর তিনি মন্তব্য করলেন, ভেবেছিলাম, পাইলস নিয়েই কবরে যাবো। এখন দেখলাম এত সহজে ভালো হওয়া যায়। কেন যে অযথা এত ভুগলাম।

সম্মানিত রোগীদের জ্ঞাতার্থে বলছি, লেদ্বারের প্রতিটি রোগ বিজ্ঞানসম্মত এবং প্রতিটি রোগই চিকিৎসায় সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়। বিশেষ করে পাইলস ৯০ শতাংশই বিনা অপারেশনে ভালো করা যায়।

লেখক : ডা: এ কে এম ফজলুল হক, অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (অব:) কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা। 

http://www.amadershomoy2.com/content/2012/09/28/middle0817.htm

২টি মন্তব্য:

  1. আমার এক পরিচিতা তার এই সমস্যা আছে। আমি যতদূর জেনেছি ওর আজ থেকে প্রায় বছর পাচেঁক আগে এ সমষ্যা দখা দেয়। ওষূধ খেয়ে ঠিক হয়ে গেছিল। তারপর আবার ৩ বছর পর সমস্যা বাড়লে আবার ডাক্তার দেথখয়ে ওষূধ খেয়ে ঠিক হয়ে যায়। এখন আবার বেড়েছে। ল্যাবএইডে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডাক্তার বলছেন ওষুধ খেতে ভাল না হলে অপারেশন করতে হবে। অপারেশনে পরবর্তী লাইফে কোন প্রবাব পড়েকি?

    উত্তরমুছুন